ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পরিষদ সংলগ্ন ও ছলিমাবাদ ইউনিয়নে তিতাস নদীর পূর্ব পাড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত তাঁত বোর্ড ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারটি। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৯ সালে ২৬২ শতক জমিতে তৎকালীন সময়ের মূল্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সেন্টারটি। যা ৩৫ বছর পর,কেবল প্রতি শতক জমির মূল্যই আছে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা।রয়েছে অসংখ্য ভবন ও মেশিনারিজ।সব মিলিয়ে শতকোটি টাকার বেশি হতে পারে।
এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল বাঞ্ছারামপুরসহ আশপাশের উপজেলার তাঁতিদের জন্য রং, মাকু ও সুতার চাহিদা পূরণ করা এবং এলাকার বেকার জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু যাদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেই তাঁতিরা এখন পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাননি।
নির্মাণের ৩৫ বছর পার হলেও শুরু হয়নি এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। বছরের পর বছর অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থেকে মরিচা ধরেছে সেন্টারের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতিতে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসিক ডরমেটরিসহ ভবনগুলোর গায়ে শ্যাওলা পড়েছে।
এলাকার তাঁতিদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার তাঁত ছিল।
এতে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু কালের পরিবর্তনে তা আজ বিলুপ্তির পথে। ক্রমাগত লোকসান, পুঁজির অভাব, দফায় দফায় কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে থমকে গেছে উপজেলার তাঁতশিল্পীদের জীবনের স্বাভাবিক গতি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ২৬২ শতক জমির ওপর নির্মিত বিশাল আকারের তাঁত বোর্ড ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারটি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।
বিগত ২০২২ সালের ৭ মে তৎকালীন তাত ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচীব আ.রউফ,তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) রেজাউল করিমসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন “শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে”।
সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ তাজুল ইসলাম (বর্তমানে ছাত্রদল নেতা নয়ন হত্যা মামলায় কারাগারে) একাধিক বলেছিলেন এই তাঁত ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারটি হবে দেশের সেরা প্রশিক্ষণ সেন্টার,যা অচিরেই চালু করা হবে”। তিনি ৪ দফা এমপি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করলেও তিনি তার কথা রাখেন নি।
তার আশ্বাস আর আলোর মুখ দেখেনি।
এই সেন্টারটি বর্তমানে দখভালেে দায়িত্বে কর্মরত তাঁত বোর্ডের লিয়াজো অফিসার মো. বরকত উল্লাহ জানান, ২০২২ সালের দিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি দেখতে এসেছিলেন।এরপর, মাঝে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়, পরবর্তীতে আর কিছু হয়নি।
ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারের কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত ছয়টি আবাসিক ভবন ও ১২টি ডরমেটরি,২৭৯ টি তাঁত কল রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ভেতরে থাকা ৭ থেকে ১০ কোটির মতো টাকার যন্ত্রপাতি।
এলাকাবাসীর দাবি, যতো দ্রুত সম্ভব সরকার আর কোন আশ্বাস না দিয়ে অচিরেই যেনো,তাঁত ফ্যাসিলিটিজ সেন্টারটি চালু করা হয়।