জাতীয় ডেস্কঃ
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলোচিত-সমালোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩৩ সদস্যের এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরের ক্লিন ইমেজের আলেমরা। নতুন এই কমিটির আমির পদে মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীই থাকছেন। এছাড়া ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে খিলগাঁও চৌরাস্তায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির রাজধানীর মহাসচিবের কার্যালয়ে (মাখজানুল উলুম মাদ্রাসা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা দেন মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। কমিটি ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন না আমির মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী।
আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া অর্ধশতাধিক নেতার কেউই নতুন কমিটিতে স্থান পাননি। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও বাদ দেয়া হয়েছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফকে সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে, যা নতুন কমিটির বড় চমক হিসেবে দেখছেন অনেকে।
নতুন কমিটিতে স্থান পেলেন যারা
নতুন কমিটিতে নায়েবে আমির হিসেবে রয়েছেন মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা আবদুল হক মোমেনশাহী, মাওলানা সালাহ উদ্দিন (নানুপুরী), অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী (দেওনা পীর), মাওলানা মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ী, সিলেট), মাওলানা ইয়াহইয়া (হাটহাজারী মাদ্রাসা), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ মাদ্রাসা), মাওলানা তাজুল ইসলাম (পীর সাহেব ফিরোজশাহ্), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব (বরিশাল), মাওলানা মুফতি জসিমুদ্দীন (হাটহাজারী মাদ্রাসা)।
যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাওলানা সাজিদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা লোকমান হাকিম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর)।
সহকারী মহাসচিব পদে দায়িত্ব পেয়েছেন- মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া, চট্টগ্রাম), ইউসুফ মাদানী (সাহেবজাদা আল্লামা আহমদ শফী), এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাওলানা মীর ইদরিস (চট্টগ্রাম)। সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাওলানা মাসউদুল করীম (টঙ্গী, গাজীপুর), মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী (কুমিল্লা)। অর্থ সম্পাদক পদে মুফতি মুহাম্মদ আলী মেখল। সহ-অর্থ সম্পাদক হিসেবে আছেন- মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট), মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী (উত্তরা, ঢাকা) প্রচার সম্পাদক পদে মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী (সাভার, ঢাকা)। সহ-প্রচার সম্পাদক- মাওলানা খোবাইব (জিরি)। দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হাসান (উত্তরা, ঢাকা)। সহ-দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক- মাওলানা ওমর ফারুক (নোয়াখালী)। ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক- জাকারিয়া মাদানী (চট্টগ্রাম)।
কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে মাওলানা মুবারক উল্লাহ্ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ্ (পীর সাহেব মাদানী নগর), মাওলানা ফোরকান উল্লাহ খলীল (দারুল মাআরিফ, চট্টগ্রাম), মাওলানা মুশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা রশীদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা) ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জন মারা যান। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতা গ্রেপ্তার হন। প্রচণ্ড চাপের মুখে ২৫ এপ্রিল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন আমির জুনাইদ বাবুনগরী। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণাকালে মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী জানান, পরবর্তী সময়ে জেলা কমিটি গঠন করা হবে। জেলা কমিটির সভাপতিরা পদাধিকার বলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হবেন। জেলা কমিটিতেও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাখা হবে বলে জানান হেফাজত মহাসচিব। এ সময় তিনি ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি আগেও এই পদে ছিলেন।