জাতীয় ডেস্কঃ
টানা ৮০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ বিশ্রামে আছেন তিনি।
তার চিকিৎসকরা বলেছেন, খালেদা জিয়া পুরোপুরি সুস্থ সেটা বলা যাবে না। তবে, আগের চেয়ে তিনি ভালো আছেন। এখন করোনা ঝুঁকির কারণে তাকে হাসপাতালের পরিবর্তে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়াটা সেফ মনে করছি।
খালেদা জিয়ার বাসার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে অনেকটা স্বস্তিবোধ করছেন তিনি। বাসার পারিবারিক পরিবেশ তার কাছে ভালো লাগছে। অনেকটা সুস্থ আছেন তিনি।
জানা গেছে, গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ ফিরে বুধবার স্বাভাবিক সময় কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। সামান্য তরল খাবার খেয়েছেন। বোন সেলিনা ইসলাম বুধবার বাসায় গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন। দিনে ও রাতে দুইজন নার্স দুই শিফটে ডিউটি করছেন। মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. আল মামুনসহ দুইজন চিকিৎসক বুধবার বিকেলে বাসায় গিয়ে দেখে এসেছেন। নতুন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি।
জানা যায়, এখন বাসায় থাকলেও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে এবং গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে মূল ফিজিসিয়ানের দায়িত্বে আছেন প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিকী। গত ২৮ নভেম্বর ও ১ ফেব্রুয়ারি তিনিই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে কথা বলেছেন।
সূত্র জানায়, বাসায় ফেরার ব্যাপারে চিকিৎসকরা যতটা না আগ্রহী ছিলেন তার চেয়ে বেশি উদগ্রীব ছিলেন খালেদা জিয়া নিজেই। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে তিনি স্বস্তিবোধ করছিলেন না। হাসপাতালের নার্স ছাড়া আপনজন বলতে তেমন কেউ তার কাছে থাকতেন না। একমাত্র গৃহকর্মী ফাতেমাই ছিল ভরসা। তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আলাদা কেবিনে ছিলেন।
ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও নাতনী জাহিয়া রহমান প্রায় দুই মাস দেশে থেকে গত ১৬ জানুয়ারি লন্ডন ফিরে গেছেন। শর্মিলা যতদিন দেশে ছিলেন শাশুড়ির জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে হাসপাতালে যেতেন। তার সঙ্গে সময় কাটাতেন। এছাড়া খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম মাঝেমধ্যে হাসপাতালে যেতেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়ার আগে তার চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, করোনা সংক্রমণ ফের ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, আপাত দৃষ্টিতে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল। আলহামদুল্লিাহ ভালোই মনে হচ্ছে। খাবারের রুচি বেড়েছে। শরীরে দুর্বলতা কিছুটা কমছে। রক্তের হিমোগ্লোবিনও মোটামুটি সন্তোষজনক আছে।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে আমার বুধবার সকালে কথা হয়েছে। বাসায় ভালো আছেন। স্বাভাবিকভাবে সবাই হাসপাতাল থেকে বাসায় অনেকটা ভালো থাকেন। বাসায়ও রুটিন মাফিক দেখভাল করছেন চিকিৎসকরা। শনিবার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপরই স্বাস্থ্যের পরবর্তী আপডেট জানা যাবে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে সুরক্ষার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বাইরের কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীদেরও ভিড় করতে নিষেধ করা হয়েছে।
গত বছরের ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ হওয়ার চার দিন পর এভার কেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করা হয়। তবে, ভর্তি করা হয়নি। পরে ২৭ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ জুন তিনি বাসায় ফেরেন। জ্বর আসার পর গত ১২ অক্টোবর আবার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় তার হাতে (লাম্ব) ছোট টিউমার ধরা পড়ে। সেটি অপারেশন করা হয়। ৭ নভেম্বর তিনি বাসায় ফেরেন।
দ্বিতীয় দফায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর বেশি দিন থাকা হয়নি। ৬ দিনের মাথায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বিকেলে আবার তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরের দিন ভোরে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তার। দীর্ঘ ৮০ দিন সেখানে থাকার পর ৮১তম দিনে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত আটটার দিকে তাকে বাসায় নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, আশা করি, ম্যাডাম বাসায় ভালো আছেন। চিকিৎসকরা সব সময় খোঁজ নিচ্ছেন। তার জন্য দোয়া করবেন।