জাতীয় ডেস্কঃ
বিএনপি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। আসন্ন একদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনকে সামরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ রোববার বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় তিনি এই প্রশংসা করেন।
তিনি বলেছেন, ব্যক্তি হিসেবে এবং দলনেতা হিসেবে জিয়াউর রহমান ৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। সংলাপের সূচনা বক্তব্যে বিগত বিএনপি সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকা-ের কথাও তুলে ধরেন সিইসি নূরুল হুদা। রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে নির্বাচন ভবনের পঞ্চম তলার সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এই সংলাপ শুরু হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই আলোচনায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজনও ছিলেন। সংলাপের শুরুতে লিখিত সূচনা বক্তব্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা তুলে ধরেন নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্ত্যৃুর পর বিএনপি প্রায় নয় বছর আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছে।
পরে ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দ্বিতীয়বারের মত সরকার গঠন করে।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এএসএম আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুর রশীদ সরকার ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছিলেন বিএনপির প্রতিনিধি দলে।
সংলাপের সূচনায় বিএনপিকে সফল রাষ্ট্রপরিচালনার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা’ থাকা একটি ‘বৃহৎ’ রাজনৈতিক দল’ হিসেবে বর্ণনা করে সিইসি বলেন, বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আজকের সংলাপের দিকে জাতি তাকিয়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন অধীর আগ্রহ ও অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে, অতি ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছে। কমিশন বিএনপির সঙ্গে সফল সংলাপ প্রত্যাশা করে। ইসির এই সংলাপে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ওবলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংলাপে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আজকের সংলাপে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের অনেকেই সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে সংসদ পরিচালনা করেছেন। মন্ত্রী থাকাকালে আপনাদের অনেকের অধীনে আমি চাকরি করার সুযোগ পেয়েছি। অনেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার ভূমিকা রেখেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে বিএনপি সরকার দেশে ‘প্রকৃত নতুন ধারার’ প্রবর্তন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নূরুল হুদা সিইসির দায়িত্ব পাওয়ার পর বিএনপি অভিযোগ তোলে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সময় ঢাকায় গঠিত জনতার মঞ্চে যোগ দেওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। তবে নূরুল হুদা বরাবরই ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
বিএনপির রাষ্ট্রপরিচালনার প্রশংসায় নূরুল হুদা বলেন, বিএনপি সরকার দেশে বহুবিদ উন্নয়ন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলককরণ, পৃথক প্রাথমিক গণশিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যটালিয়ান গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা, আইন কমিশন গঠন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছরে উন্নীতকরণসহ অনেক উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কার্যক্রম বিএনপি সরকার করেছে।