জাতীয় ডেস্কঃ
বিজ্ঞান গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানুষের কল্যাণে সহজভাবে ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান শিক্ষাকে সবার কাছে সহজ ও বোধগম্য করতে বিষয়বস্তু তৈরিতে পরিভাষার পরিবর্তে পরিচিত শব্দ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত সেগুলো যে ভাষাতেই আসুক আমাদের সেটাই গ্রহণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে শব্দগুলো বহুল প্রচলিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত সেগুলো যে ভাষাতেই আসুক, আমাদের সেটাই গ্রহণ করতে হবে। সেখানে পরিভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে পরে কোনো কিছুই বুঝবো না, বলতেও পারবো না, সেটা যেন না হয়। কারণ সবজায়গায় প্রতিশব্দ বা পরিভাষা করতে হবে আমি সেটা বিশ্বাস করি না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞানের এই যুগে বিজ্ঞান যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষাও রয়েছে, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ বা অন্য ভাষাও রয়েছে, যা এর ভেতর যুক্ত হয়ে গেছে। আর আমাদের বাংলা ভাষায় কিন্তু ৮ হাজার ভাষার শব্দ মিলে মিশে গেছে। কাজেই এ ব্যাপারে খুব বেশি ‘রক্ষণশীল’ না হয়ে প্রচলিত শব্দগুলো, প্রচলিত বিজ্ঞানের ‘টার্মস’গুলো ব্যবহার করেই বাংলা ভাষায় সহজভাবে বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কাছে আমার এটা অনুরোধ থাকবে মাতৃভাষা চর্চা এবং গবেষণার পাশাপাশি কিভাবে ভাষাকে মানুষের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য বা সহজবোধ্য করা যায় সে বিষয়টাও দেখতে হবে। এই বিষয়টা নিয়েও গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন ইউনেস্কোর এদেশীয় প্রতিনিধি এবং হেড অব অফিস বিয়েট্রেস কালডুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আবু বকর সিদ্দিক স্বাগত ভাষণ দেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো: বেলায়েত হোসেন তালুকদার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন দূতাবাস, মিশন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাগণ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরু জাতীয় সঙ্গীত এবং অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশনার পর ভাষা শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা ছাড়া এগুনো যায় না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়সহ সকল ক্ষেত্রেই গবেষণা একান্ত অপরিহার্য।
বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান যেন মানুষের কল্যাণে সহজভাবে ব্যবহার হয়, সেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিভাষা ব্যবহারে তিনি সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘কনটেন্ট’র বাংলা শব্দ ‘আধেয়’ কিন্তু তা বললে অনেকেই বুঝবে না। কিন্তু ‘কনটেন্ট’ বললে বুঝবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞান গবেষণাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে আমাদের শিক্ষা কমিশন গঠনে তখনকার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
আমাদের কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটে বাংলা কনটেন্ট তৈরি করার পাশাপাশি বাংলা কি-বোর্ডের ব্যবহারকে আরো সহজ করে দেয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে।
আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে এখন আমাদের উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা করতে হলে ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞান গবেষণাসহ সব বিষয়ে গবেষণা একান্তভাবে দরকার। কাজেই সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সূত্র : বাসস