জাতীয় ডেস্ক:
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হলো বুয়েটের ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি। এছাড়া আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে এজাহারভুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপাচার্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি থাকবে না। আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া বুয়েটে র্যাগিং বন্ধ হবে বলেও ঘোষণা দেন ভিসি।
বক্তব্যের শুরুতেই ভিসি এই ঘটনায় তার ভূমিকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। বলেন, ‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
ভিসি বলেন, ‘আবরার আমার সন্তানের মতো ছিল। তোমাদের যেমন কষ্ট লাগছে তার মৃত্যুতে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে। এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তার মৃত্যুতে দুঃখ তোমরা পেয়েছ, আমিও পেয়েছি। আমরা সকলেই মর্মাহত।’
এর আগে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে উপাচার্য অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। তিনি ও ডিএসডব্লিউ পরিচালকসহ সাতজন মঞ্চে বসেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনরাও আলোচনায় উপস্থিত হন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বৈঠকে ১০ দফা দাবি ও আবরার হত্যার ঘটনায় উঠে আসা ইস্যুগুলো নিয়ে ভিসির কাছে জবাব চাওয়া হবে।
এর আগে আলোচনায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সারিবদ্ধভাবে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। অডিটোরিয়ামে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের প্রেস কার্ড দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দশ দফা দাবি মানার জন্য শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালে ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভিসি।
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- খুনিদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন, মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি, অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ প্রদান এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
গত রবিবার রাতে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ইতিমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সারাদেশে তোলপাড় করা এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আন্দোলনে নামে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে আবরার হত্যার বিচারসহ ১০ দফা দাবি পেশ করে তারা। আন্দোলনের মুখে সেই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলো বুয়েট কর্তৃপক্ষ।