ঢাকা ০৭:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাতের ‘আশঙ্কা’

জাতীয় ডেস্কঃ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি’র ক্রমাগত দ্বন্দ্বের মধ্যে আগামী বছরের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গভীর সংঘাত দেখছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের বাংলাদেশ বিষয়ক চলতি মাসের হালনাগাদ এক ব্রিফিং পেপারে বলা হয়েছে, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নির্বুদ্ধিসুলভ লাগাতার বিবাদের মধ্যেই আগামী বছরে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে আবারো গভীর উত্তেজনা-সংঘাত ফিরে আসতে পারে।
হাউস কমন্স লাইব্রেরি গবেষণা টিম প্রতিবছর নিরপেক্ষভাবে তথ্য-উপাথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের রাজনীতি ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলির ওপর এই ব্রিফিং পেপার প্রকাশ করে। মূলত এই গবেষণা পত্র কোনো দেশের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের শীর্ষ এই রাজনৈতিক দল দুটির পারিবারিক বৈরী সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘকাল থেকেই চলে আসছে- যা আজও বিদ্যমান।
এতে আরো বলা হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন ছিল ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য। এই নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিএনপি তাতে অংশ গ্রহণ করেনি। দলটি নির্বাচন পরবর্তীতে বছর ধরে হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
২০১৬-২০১৭ সালে দু’পক্ষই আগামী বছরের নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে নিয়ে কথাবার্তা চালাচালি করে আসছে। কিন্তু তারা একমত হতে পারেনি। অবশ্য ২০০৮ সালে এই নিরেপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর তারা সংবিধানে পরিবর্তন এনে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় এবং ২০১৪ সালে একদলীয় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় বসে। এরপর থেকেই বিএনপি তাদের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুণঃস্থাপনের দাবিতে অটল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রস্তাব সম্পর্কে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রী পরিষদের কথা বলে আসছে এবং আগামী নির্বাচন একইভাবে অনুষ্ঠান করতে চায়। এই প্রস্তাব বিএনপি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
আরো বলা হয়, সমঝোতা না হলে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা দলটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সমর্থক গোষ্ঠী ও ভোটারের মধ্যে কতটা বিশ্বাসযোগ্য আস্থা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়েও ভাবছে। তবে বিএনপি ২০১৪ সালের মতো যদি নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকট হয়ে দাঁড়াবে বলে বলা হয়। এক্ষেত্রে সরকারের সমালোচকরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে লাগাতার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দাবি করছে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলছে সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম এবং সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এমনকি সরকারি পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের অবাধ গ্রেফতার, অপহরণ, গুম-খুন এবং বিচার বহির্ভুত হত্যার প্রবল অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধ্যপরাধ আদালত সম্পর্কে বলা হয়, এই আদালতের বিরুধ্যে অভিযোগ রয়েছে যে ৬ জন বিরোধী নেতাকে রাজনৈতিক ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্বের বিষয়ও আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয় সরকারের সাথে বিচার বিভাগের দ্বিমতের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির অভিযোগ মোকাবেলা করছেন।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইসলামী উগ্রবাদী হামলা উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। এমনকি ইসলামিক স্টেট ও দায়েশ গ্রূপগুলো হামলা চালিয়েছে। এতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মাত্রা যোগ হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বিরোধী গোষ্ঠী একমত।
অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে আগস্ট থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে পেশ করা ৫ দফা প্রস্তাবেরও উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে মানবাধিকার অগ্রাধিকার ভিত্তিক দেশ হিসাবে বিবেচনা করছে এবং সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের গভীর সম্পর্কের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে আরো বলা হয় সরকার চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরবের দেয়া ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কয়েক শ’ নতুন মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ‘লেডি জাস্টিসের’ ভাস্কর্য উচ্ছেদে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাতের ‘আশঙ্কা’

আপডেট সময় ১২:৪১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি’র ক্রমাগত দ্বন্দ্বের মধ্যে আগামী বছরের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গভীর সংঘাত দেখছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের বাংলাদেশ বিষয়ক চলতি মাসের হালনাগাদ এক ব্রিফিং পেপারে বলা হয়েছে, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নির্বুদ্ধিসুলভ লাগাতার বিবাদের মধ্যেই আগামী বছরে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে আবারো গভীর উত্তেজনা-সংঘাত ফিরে আসতে পারে।
হাউস কমন্স লাইব্রেরি গবেষণা টিম প্রতিবছর নিরপেক্ষভাবে তথ্য-উপাথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের রাজনীতি ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলির ওপর এই ব্রিফিং পেপার প্রকাশ করে। মূলত এই গবেষণা পত্র কোনো দেশের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের শীর্ষ এই রাজনৈতিক দল দুটির পারিবারিক বৈরী সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘকাল থেকেই চলে আসছে- যা আজও বিদ্যমান।
এতে আরো বলা হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন ছিল ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য। এই নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিএনপি তাতে অংশ গ্রহণ করেনি। দলটি নির্বাচন পরবর্তীতে বছর ধরে হরতাল-অবরোধের ডাক দেয়। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
২০১৬-২০১৭ সালে দু’পক্ষই আগামী বছরের নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে নিয়ে কথাবার্তা চালাচালি করে আসছে। কিন্তু তারা একমত হতে পারেনি। অবশ্য ২০০৮ সালে এই নিরেপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর তারা সংবিধানে পরিবর্তন এনে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় এবং ২০১৪ সালে একদলীয় নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় বসে। এরপর থেকেই বিএনপি তাদের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুণঃস্থাপনের দাবিতে অটল রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রস্তাব সম্পর্কে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রী পরিষদের কথা বলে আসছে এবং আগামী নির্বাচন একইভাবে অনুষ্ঠান করতে চায়। এই প্রস্তাব বিএনপি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
আরো বলা হয়, সমঝোতা না হলে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা দলটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সমর্থক গোষ্ঠী ও ভোটারের মধ্যে কতটা বিশ্বাসযোগ্য আস্থা ধরে রাখতে পারবে তা নিয়েও ভাবছে। তবে বিএনপি ২০১৪ সালের মতো যদি নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকট হয়ে দাঁড়াবে বলে বলা হয়। এক্ষেত্রে সরকারের সমালোচকরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে লাগাতার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দাবি করছে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলছে সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম এবং সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এমনকি সরকারি পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের অবাধ গ্রেফতার, অপহরণ, গুম-খুন এবং বিচার বহির্ভুত হত্যার প্রবল অভিযোগ রয়েছে।
যুদ্ধ্যপরাধ আদালত সম্পর্কে বলা হয়, এই আদালতের বিরুধ্যে অভিযোগ রয়েছে যে ৬ জন বিরোধী নেতাকে রাজনৈতিক ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্প্রতি দ্বন্দ্বের বিষয়ও আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয় সরকারের সাথে বিচার বিভাগের দ্বিমতের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির অভিযোগ মোকাবেলা করছেন।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে ইসলামী উগ্রবাদী হামলা উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। এমনকি ইসলামিক স্টেট ও দায়েশ গ্রূপগুলো হামলা চালিয়েছে। এতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মাত্রা যোগ হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস বিরোধী গোষ্ঠী একমত।
অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে আগস্ট থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে পেশ করা ৫ দফা প্রস্তাবেরও উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে মানবাধিকার অগ্রাধিকার ভিত্তিক দেশ হিসাবে বিবেচনা করছে এবং সর্বশেষ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের গভীর সম্পর্কের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে আরো বলা হয় সরকার চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরবের দেয়া ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে কয়েক শ’ নতুন মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ‘লেডি জাস্টিসের’ ভাস্কর্য উচ্ছেদে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম।