খেলাধূলা ডেস্ক:
পাকিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর পর করাচিতে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ানডে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে গতকাল সফরকারী শ্রীলংকাকে ৬৭ রানে হারিয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান। এই জয় দিয়ে দীর্ঘ এক দশক পর করাচিতে হওয়া ওয়ানডেকে স্মরণীয় করে রাখলো সরফরাজের দল। পাশাপাশি তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। ব্যাট হাতে পাকিস্তানের বাবর আজম ১১৫ রান ও বল হাতে উসমান সিনওয়ারি ৫১ রানে ৫ উইকেট নেন।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে এই করাচিতেই শেষ ওয়ানডে খেলেছিল লংকানরা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো শ্রীলংকা। এরপর টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের তৃতীয় দিন লাহোরে শ্রীলংকা দলবহনকারী বাসে জঙ্গি হামলার পর থেকে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে।
অনেক দরকষাকষির পর লংকান দলকে এবার করাচিতে খেলতে রাজি করাতে সক্ষম হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে লংকান দলের সিনিয়র দশ খেলোয়াড় এ সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন নিরাপত্তা শঙ্কায়।
তারপরও শ্রীলংকার সাথে সিরিজ আয়োজন করে পাকিস্তান। সিরিজের সবগুলো ম্যাচই নির্ধারণ করা হয় করাচিতে। ২০০৯ সালের পর করাচিতে আর কোন ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এটি করাচির প্রত্যাবর্তন ওয়ানডে। এমন প্রত্যাবর্তন ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয় পাকিস্তান। ৮৮ বল মোকাবেলা করে দলকে ৭৩ রানের সূচনা এনে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক। ইমাম ৩১ রানে থামলেও, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমাম। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৫ বলে ৫৪ রান করে থামেন তিনি।
১০৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলকে বড় জুটি এনে দেন বাবর ও হারিস সোহেল। তৃতীয় উইকেটে ১১১ রান যোগ করেন তারা। ফলে ২শ রানের কোটা পেরিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে হাটতে থাকে পাকিস্তান। হারিস ৪৮ বলে ৪০ রান করে আউট হলেও, ৭৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১১তম সেঞ্চুরির দেখা পান বাবর। সেঞ্চুরির নিজের ইনিংসকে বড় করার চেষ্টা করে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ১০৫ বলে ১১৫ রানে থামেন বাবর। তার ইনিংসে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো।
এরপর অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ৮, ইমাদ ওয়াসিম ১২ ও ওয়াহাব রিয়াজ ২ রানে বিদায় নিলেও, ইফতেখার আহমেদের ২টি করে চার-ছক্কায় ২০ বলে অনবদ্য ৩২ রানের উপর ভর করে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩০৫ রান পায় পাকিস্তান। শ্রীলংকার লেগ-স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৬৩ রানে ২ উইকেট নেন।
৩০৬ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তানের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে শ্রীলংকার টপ-অর্ডার। তাই ২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথ দেখে ফেলে লংকানরা। এই পাঁচ উইকেটের মধ্যে তিনটিই নেন পাকিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার সিনওয়ারি। ১০ দশমিক ১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে বেকাদায় পড়ে যাওয়া শ্রীলংকাকে পরবর্তীতে ম্যাচে ফেরান শেহান জয়সুরিয়া ও দাসুন শানাকা। উইকেটে সেট হয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে সফল হন তারা। তাই এই জুটির কল্যাণেই ২শ রানের কোটা স্পর্শ করে শ্রীলংকা।
তবে দলীয় ২০৫ রানে এই জুটি ভাঙ্গেন ঐ সিনওয়ারি। সেঞ্চুরির গন্ধ পাওয়া জয়সুরিয়াকে ৯৬ রানে আউট করেন তিনি। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৯ বলে নিজের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংসটি সাজান জয়সুরিয়া। শানাকার সাথে ১৮৪ বলে ১৭৭ রান যোগ করেছিলেন প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেয়া জয়সুরিয়া।
জয়সুরিয়া ফিরে যাবার ১ বল পরই থামেন শানাকাও। তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮০ বলে ৬৮ রান করেন তিনি। দলীয় ২০৫ রানে জয়সুরিয়া-শানাকার বিদায়ের পর বাকী ৩ উইকেট থেকে ৩৩ রান যোগ করতে পারে শ্রীলংকা। শেষ পর্যন্ত ২৩৮ রানে অলআউট হয় লংকানরা। শেষদিকে ১ উইকেট নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকারের নজির গড়েন সিনওয়ারি। ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা সিনওয়ারি।
আগামীকাল একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। বৃষ্টির কারণে সিরিজের প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।