উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামি—টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের পেস আক্রমণের ত্রিরত্ন। গতি, সুইং, বাউন্সার, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং মিলে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তাদের সমন্বয় ভয়ংকর। মোহাম্মদ মিঠুনের কথা শুনে থাকলে ভারতীয় তিন ফাস্ট পেস বোলার একটু মনঃক্ষুণ্ন হতেই পারেন। চটে গিয়ে আগামীকাল ইন্দোরে শুরু হতে চলা প্রথম টেস্টে বল হাতে ত্রাস ছড়ানোর টার্গেটও ঠিক করতে পারেন। গতকাল হলকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের মুখপাত্র হিসেবে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসা মিঠুনের কথায় উমেশ-ইশান্তরা বিরাগভাজন হয়ে বসলেও ঠিকই অদূরে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসবেন রবিচন্দন অশ্বিন-রবীন্দ্র জাদেজারা।
বাংলাদেশের এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান গতকাল বলেছেন, ইন্দোরে পেসারদের চেয়ে ভারতীয় স্পিনাররাই বাংলাদেশের বড়ো মাথাব্যথার কারণ হবেন। অশ্বিন-জাদেজাকে সামলানোই কঠিন হবে। তাই তো অনুশীলনে স্পিন খেলার প্রয়াসেই বেশি ব্যস্ত দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমরা স্পিনের বিরুদ্ধে সুইপ খেলার অনুশীলন করেছেন লম্বা সময় ধরে।
ইন্দোরের ২২ গজের অন্দরমহলের খবর নিয়েই হয়তো কথা বলেছেন মিঠুন। পরিসংখ্যান তার কথায় সায় দিচ্ছে। ইন্দোরে এর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র একটি টেস্ট। আগামীকাল শুরু হতে চলা বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ হবে এ ভেন্যুর দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ম্যাচের চালচিত্রই স্পিনের প্রতি নজর দিতে বাধ্য করছে বাংলাদেশকে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে হওয়া টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ৩২১ রানে হারিয়েছিল ভারত। বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি (২১১) ও আজিংকা রাহানের সেঞ্চুরিতে (১৮৮) প্রথম ইনিংসে ৫৫৭ রান তুলেছিল ভারত। তাও ৫ উইকেটে ইনিংস ঘোষণা করেছিল তারা। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রানে গুটিয়ে যায়। প্রতিপক্ষকে ফলোঅন না করিয়ে ভারত আবার চেতেশ্বর পূজারার সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ২১৬ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছিল। পরে কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংসটা গুটিয়ে গিয়েছিল ১৫৩ রানে।
কোহলি-রাহানেদের সঙ্গে ভারতের অনায়াস জয়টা এসেছিল অশ্বিনের কারণে। দুই ইনিংসে ১৩ (৬+৭) উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। জাদেজাও ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। কিউইদের ২০ উইকেটের ১৭টিই স্পিনারদের দখলে। পেসারদের মধ্যে একটি উইকেট পেয়েছিলেন শুধু উমেশ যাদব, সেটি দ্বিতীয় ইনিংসে।
মিঠুনের কথা তাই অমূলক নয়। ভারতের বোলিং সামলানোর কাজ করা প্রসঙ্গে গতকাল এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘আমরা তো সবাই জানি যে ওদের বোলিং কতটা শক্তিশালী। বিশেষ করে ওদের স্পিনে আমরা কীভাবে ব্যাটিং করব সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। কারণ পেস বলের চেয়ে ওদের স্পিন সামলানোটা বেশি কঠিন হবে, কারণ প্রথম এক দুই দিন একটু ব্যাটিং সহায়ক উইকেট থাকে। তিন দিন থেকে ওরা কিন্তু স্পিনের প্রতি বেশি জোর দেয়। সেটা কীভাবে সামলাতে পারি এগুলো নিয়ে টেকনিক্যাল কাজগুলো করছি।’
ইশান্ত-শামিরাও অবশ্য মিঠুনের শ্রদ্ধা পাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওদের যে পাঁচ জন বোলার আছে, তাদের কাউকেই সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। পাঁচ জন বোলারই বিশ্বমানের।’
তাই প্রতিপক্ষের দুর্বলতা নয় বরং শক্তিশালী দিকেই নাকি নজর রাখছে বাংলাদেশ। মিঠুন বলেছেন, ‘আমরা ওদের দুর্বলতা খোঁজার থেকে ওদের শক্তিশালী দিকটায় বেশি ফোকাস করছি। কারণ ভারতের মাটিতে এসে পৃথিবীর কোনো দলই সুবিধা করতে পারেনি। আমরা চেষ্টা করছি এখানে কীভাবে ভালো করতে পারি।’
সাকিবকে না পাওয়ার চিন্তাটা কার্যত বাদ দিয়েই প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ দল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরির ছকটাও কষছে টাইগাররা। মিঠুন বলেছেন, ‘বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যান যেকোনো সময়ই আউট হতে পারে। আমরা যদি সেই চাপটা তৈরি করতে পারি। বোলিং ইউনিট হিসেবে যদি ডিসিপ্লিন বোলিং করতে পারি।’
ভারতীয় স্পিন, পেস, ব্যাটিং সবই শক্তিশালী। টেস্টের এক নম্বর দল বলে কথা। এটুকু নিশ্চিত, ইন্দোরে বাংলাদেশের জন্য বড়ো পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।