তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানুষ এখন উদ্ভিদ, প্রাণীর জিনে পরিবর্তন ঘটানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে। তবে এবার একজন চীনা বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তিনি প্রথমবারের মতো জিনগত পরিবর্তন ঘটানো মানব শিশুর জন্ম দিতে সক্ষম। মানব শিশু ভ্রূণ থাকা অবস্থায় এর জিনগত সংকেত বদলে দেওয়ার প্রযুক্তি আবিষ্কারের দাবি করেছেন তিনি। তবে এভাবে ভ্রূণের জিনগত সংকেত পরিবর্তনের নৈতিকতা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
শেনজেনের সাদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এ অধ্যাপক বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়াই তিনি সিসিআরফাইভ নামের প্রোটিনের ওপর গবেষণা করেছেন। তিনি এমন আটটি দম্পতির ওপর গবেষণা করেছেন যাদের মধ্যে প্রত্যেক পিতা ছিলেন এইচআইভি পজেটিভ এবং প্রত্যেক মাতা ছিলেন এইচআইভি নেগেটিভ। এমন এক দম্পতির সন্তান ঐ যমজ শিশুরা। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এই যমজের জন্ম হলে তাদের এইচআইভি পজেটিভ হওয়ার আশঙ্কা থাকত। কিন্তু ডিএনএ থেকে বিশেষ ঐ প্রোটিনটি আলাদা করে ফেলার পর দুটি শিশুই এইচআইভি থেকে মুক্তি পেয়েছে। তবে অধ্যাপক হে এখনো তার গবেষণায় সফল হওয়ার পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
এদিকে ঐ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি রীতিমতো একটি মাইলফলক সৃষ্টি করলেও এর নৈতিকতা নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভ্রূণের জিনগত পরিবর্তনের বিরোধীদের যুক্তি, এখানে মানব ভ্রূণের জিন-সম্পাদনা করা হচ্ছে, তার জেনেটিক কোড বদলে দেওয়া হচ্ছে। এখানে মাত্র একজন ব্যক্তির জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে না, এটা কার্যত ভবিষ্যত্ প্রজন্মেরও জিন বদলে দিচ্ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলিয়ান সাভুলেস্কু বলছেন, মি. হের গবেষণা সুস্থ স্বাভাবিক শিশুদের জিন সম্পাদনাজনিত ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। এতে যে সুফল মিলবে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। এ ধরনের পরিবর্তন এখনো পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এর সঙ্গে কোষের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি বা মিউটেশন সম্পর্কের কথা বলা হয়, যার ফলে ভবিষ্যত্ জীবনে জিনগত সমস্যা বা ক্যান্সারের মতো সমস্যা হতে পারে।
অন্য কিছু বৈজ্ঞানিক বলেছেন, অধ্যাপক হে যেভাবে দুটি শিশুর জিনে পরিবর্তন করেছেন এবং সিসিআরফাইভ বাদ দিয়েদেন— তাতে এইচআইভির ঝুঁকি কমে গেলেও অন্য রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। লন্ডনের সেন্ট জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ইয়ালদা জামশিদি বলছেন, আমরা এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খুবই কম জানি। তাই এরকম পরীক্ষাকে অনেকেই ‘নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলবেন। এই প্রযুক্তির আরও একটি নেতিবাচক দিক হলো, এতে মানুষের মধ্যে ‘পছন্দমত শিশু’ তৈরির প্রবণতা তৈরি হতে পারে। —বিবিসি