আজিজুর রহমান রনিঃ
কিন্ডার গার্ডেন স্কুল নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় আয়ুর্বেদীক চিকিৎসক হাসান মিয়াকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেছে তার প্রতিবেশী আউলাদ। একইসঙ্গে তার ওষুধের দোকান ভাঙচুর করেন আউলাদ। এর পরও ক্ষ্যান্ত হয়নি প্রতিপক্ষ। টাকার বিনিময়ে এক নারীকে দিয়ে মিথ্যা শ্লীলতাহানির মামলা করিয়ে চিকিৎসক হাসান মিয়াকে এলাকা ছাড়া করেছেন তিনি। গত ছয় মাস পরিবার থেকে দূরে মানবেতর জীবনযাপন করছে চিকিৎসক হাসান। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও প্রভাবশালী আউলাদের কাছে সবাই জিম্মি। কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার চন্ডিরচর নয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
অভিযুক্ত প্রতিবেশি আউলাদ মিয়া (৩৫) হোমনা উপজেলার চন্ডিরচর নয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল হাকিম মিয়ার ছেলে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিন্ডার গার্ডেন স্কুল নিয়ে বিরোধের জের ধরে চন্ডিরচর গ্রামের আয়ুর্বেদীক চিকিৎসক হাসান প্রতিবেশি আউলাদের জায়গা ভাড়া নিয়ে এলাকায় ইমাম হোসেন পীর মুজিবিয় কিন্ডার গার্ডেন পরিচালনা করতেন। অল্প সময়ে স্কুলটির সুনাম ছিড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েক গ্রামের অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েকে পড়ান ওই স্কুলে। স্কুলের ভালো অবস্থান দেখে জায়গার মালিক আউলাদ তিন বছরের চুক্তির ছয় মাসের মধ্যেই তাকে স্কুলটি ছেড়ে দিতে হুমকি দমকি দেয়। ভয়ে এক পর্যায়ে স্কুল ছেড়ে দিতে রাজি হয় হাসান। তবে হিসেব নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আউলাদ চটে গিয়ে দলবলে হাসানের দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করেলে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। এ সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে থানায় মামলা করেন হাসান। এতে করে আরো ক্ষেপে যান প্রতিবেশি আউলাদ। নিজের পিতার ওপর হামলার মিথ্যা অপবাদ এনে থানায় মামলা করে সুবিধা করতে না পেরে এক নারীকে দিয়ে টাকার বিনিময়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলে মিথ্যা মামলা করান আউলাদ। গত জুলাই মাসের ১০ তারিখের এই মামলায় হাসানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে গত ছয় মাস যাবৎ পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাসান।
এ ঘটনার শিকার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হাসান মিয়া বলেন, ‘চন্ডিরচর নয়াকান্দি বাজারে আমার একটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কেন্দ্র আছে। পাশাপাশি ইমাম হোসেন পীর মুজিবিয় কিন্ডার গার্ডেন স্কুলটি পরিচালনা করে আসছি সুনামের সাথে। প্রতিবেশী আউলাদ আমার ওই স্কুলের জায়গার মালিক। স্কুলের ভালো অবস্থা দেখে, আমার ইনভেস্ট করা টাকার নাম মাত্র দিয়ে স্কুলটি ছেড়ে দিতে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে রাজি হলেও হিসাবের টাকা দিতে গরিমসি করায় তার সাথে তর্ক হয় আমার। তর্কের পরদিন আউলাদ তার বড় ভাই বিল্লাল হোসেন ও সোহেলসহ কয়েকজনকে নিয়ে আমার চিকিৎসা কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং আমাকে ধারালো দা দিয়ে মাথায় কোপ দিলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলি আমি। আমার পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করতে আসলে তাদেরকেও অপদস্ত করে আউলাদও তার লোকজন। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বিচার না পেয়ে থানায় মামলা করলে আউলাদ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। পরে আউলাদ তার বাবার ওপরে হামলার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থানায় মামলা দেয়। এই মামলায় সুবিধা করতে না পেরে টাকার বিনিময়ে এক দুষ্ট নারীকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা করায় সে। এই মামলায় ওয়ারেন্ট হলে আমি জেলার মুরাদনগর থানায় আমার এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেই। পরে স্থানীয় একটি কুচক্রের মাধ্যমে আউলাদ আমাকে প্রস্তাব পাঠায় ১০ লাখ টাকা দিলে মামলা নিষ্পত্তি করে দিবে। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন মহলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য।
এদিকে মারপিটের কথা স্বীকার করলেও নারী দিয়ে মামলা করানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আউলাদ।
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী হাসিয়া বেগম বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝিতে মামলা হয়েছে। তবে আমি আদালতে যাই না।’
ওই মামলার স্বাক্ষী মো.মনির, ফারুক, রোশন মিয়া, আব্দুর রহিম ও মজিবুর রহমান বলেন, ঘটনা যেমন গায়েবী, আমার স্বাক্ষীও গায়েবী। পুলিশকে বলে দিয়েছি আমরা কিছুই জানি না। কে বা কাহারা আমাদেরকে স্বাক্ষী করেছে তাও জানি না।’
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ওসি সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বি বলেন, চন্ডিরচর গ্রামের বিষয়টি দু:খজনক। উভয়ই প্রতিবেশী। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা হাসান মিয়া ও আউলাদের করা মামলার চার্জশিট পাঠিয়েছি আদালতে। নারী ও শিশু দমন আইনের মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অচিরেই প্রতিবেদ আদালতে পাঠিয়ে দিব।’