অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত বিশেষ এক ধরনের একটি ভোগোলিক প্রক্রিয়া। কোনো কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ভূগর্ভস্থ গরম বাতাস, জলীয় বাষ্প, গলিত শিলা, কাদা, ছাই, গ্যাস প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে। আর আগ্নেয়গিরি থেকে ভূগর্ভস্থ পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্ন্যুত্পাত। বহুদিন পরপর অগ্ন্যুত্পাত সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে একটি মহা অগ্নুত্পাত বা সুপার ভলকানো সাধারণ আগ্নেয়গিরি থেকে কয়েক লাখ গুণ বেশি শক্তিশালী। পৃথিবীতে সংঘটিত সব থেকে ভয়াবহ সুপার ভলকানোর ঘটনা ঘটেছিল ৭৪ হাজার বছর আগে সুমাত্রার একটি দ্বীপে। এটি এতোটাই তীব্র সুপার ভলকানো ছিল যে, এটি তিন টানা তিন বছর জীবিত ছিল। এর গলিত শিলা ও ছাই ছড়িয়ে পড়েছিল কয়েক হাজার মাইল দূর পর্যন্ত আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে। ৭৪ হাজার বছর আগে মূলত আফ্রিকাতেই ছিল মানুষের বসবাস। ধীরে ধীরে সেই মানুষরা ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর নানা প্রান্তে। এমন তীব্র সুপার ভলকানোয় সাধারণত নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল মানবজাতির; কিন্তু ঐ ঘটনার পরও টিকে ছিল আফ্রিকার দক্ষিণ অংশের সেই প্রাচীন মানবগোষ্ঠী।
ইউনিভার্সিটি অব নেভাদা লাস ভেগাসের ভূতত্ত্ববিদ জেনে স্মিথের মতে, গত ২০ লাখ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সুপার ভলকানো ছিল সুমাত্রার দ্বীপের এই ‘টোবা’ সুপার ভলকানো। ঐ সুপার ভলকানোর পর কি করে মানুষ বেঁচেছিল তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তারা বিস্ময়কর কিছু বিষয় আবিষ্কার করেছেন। গবেষক দল জানান, সুপার ভলকানোয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল প্রাচীন মানুষরা। ঐ পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাচীন মানুষ উপকূলমুখী হয়ে পড়ে। এক সময় যেখানে বলা হতো, এই সুপার ভলকানোতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রাচীন মানুষ। সেখানে নতুন এই গবেষণায় ঠিক এর উল্টোটা দাবি করা হয়েছে।
তাদের মতে, ঐ সুপার ভলকানোর কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। একটি সুপার ভলকানোর কারণে কীভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা এতোটা কমেছিল তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, টোবা সুপার ভলকানোয় অনেক বেশি মাত্রার গলিত শিলা, কাদা, ছাই এবং সালফার কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রচুর পরিমাণ সালফার পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এই ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছিল হিমবাহ। সেই সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও কমে গিয়েছিল। গবেষকদের মতে, সুপার ভলকানোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগই তখন প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তাপমাত্রা কমে আসা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমে যাওয়ার মতো কিছু কারণে মানুষের বাসযোগ্যতা বেড়েছিল।
২০১১ সালে স্মিথ এবং তার স্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকার পিনাকল পয়েন্টে গিয়ে কাজ শুরু করেন। সেখানে গিয়ে তারা অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ববিদ কার্টিস মারিয়ানের সাথে দেখা করেন। কার্টিস মারিয়ানে তাদের সেই সুপার ভলকানোর কিছু নমুনা দেখান। পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে যে এগুলো প্রায় ৭০ হাজার বছর আগের। একই সাথে আফ্রিকার দক্ষিণ অংশের প্রাচীন মানুষের হাড়, প্রাণির হাড়, প্রাচীন মানুষের ব্যবহার্য যন্ত্রপাতিও বিশ্লেষণ করেন। সব কিছু পরীক্ষা করে তারা দেখেন ঐ ঘটনার পর বরং সেখানকার প্রাচীন মানুষ নতুন নতুন কৌশল এবং যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়।-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক