ঢাকা ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘‘মালয়েশিয়ায় ভাগ্য বদলাতে যেয়ে বাঞ্ছারামপুরের হাজারো প্রবাসীর ঠিকানা এখন জঙ্গলে’’

ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ

“বাংলাদেশ সরকারকে বলেন,আমরা জমিজমা-গরু বাছুর সব বেচে  ধার কর্জ করে বুকভরা আশা নিয়ে কাজের জন্য দালালদের মাধ্যমে  মালয়েশিয়ায় এসেছি। আমাদের পাসপোর্ট নাই।এটাই আামাদের একমাত্র অপরাধ।আমরা মানুষ খুুন করিনি।চুরী-ডাকাতি বা সন্ত্রাসী নই।মাসে মাসে রেমিটেন্স পাঠাই।যার দ্বারা সরকার নিজেেেদর টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মান করছে।আমাদের বিপদ যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা না দেখে,তবে দেখবেটা কে?
সাংবাদিক ভাই,কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।মালয়েশিয়ার পেনাং জংগলে এখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আবার বেশ বড় সাইজের মশার কামড় থেকে বাঁচতে স্থান পরিবর্তন, মশাগুলোকে মারা, জংগলের কাটা ইত্যাদি নিয়ে খুব কষ্ট করছি গত মঙ্গলবার থেকে।

আপনার প্রতি অনুরোধ পেপারে লিখেন আর যেভাবে পারেন-বাংলাদেশ সরকারের কানে খবরটি পৌছাবেন,আল্লাহরওয়াস্তে।নইলে মারা যাবো। আমি একা না,হাজারো বাংলাদেশী এমন বহু জংগলে পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আছি’’-

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে কথাগুলো মোবাইলে আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাঁশগাড়ি গ্রামের আব্দু মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমান।তার সাথে একই উপজেলার জাকির, সজীব, রনি,আজাদ,ফয়সাল,জয়নাল সহ আরো ১০/১২ জন শ্রমীক গত ৭২ ঘন্টা ধরে পুলিশের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য ঘুটঘুটে দিনের বেলায় অন্ধকারপূর্ন পেনাং জংগলে ঠিকানা করে নিয়েছেন।

মালয়শিয়া সরকার অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এক বড় আকারের অভিযানে চালাচ্ছে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এবং গত ২৪ ঘন্টায় (বুধবার পর্যন্ত) সেদেশে বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে – যাদের একটা বড় অংশই বাংলাদেশি।তাদের মধ্যে বাঞ্ছারামপুরের রয়েছে ১ ডজন দরিদ্র মানুষ।তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তারা বিভিন্ন সময় সহায় সম্বল বিক্রি করে বা উচ্চ লাভে সুদে টাকা তুলে ভাগ্য অন্বেষনে দেশটিতে গিয়েছিল।বাঞ্ছারাামপুর উপজেলার  হোগলাকাান্দি গ্রামের রহিছ মিয়ার গ্রেফতারের খবর তার স্ত্রী রাশিদা বেগম ৩ দিন আগে জানতে পারেন।

জানার পর,গত ৩ ধরে দুশ্চিন্তায় ২ মেয়ে ২ ছেলে সহ ৮ সদস্যের পরিবার ঘুম-খাওয়া প্রায় বন্ধ।খবরটি প্রকাশ পাওয়ায় তার উপর পাওনাদাররা ঘন্টায় ঘন্টায় টাকা ফেরতের চাপ দিচ্ছে বলে জানান রহিছ মিয়ার পিতা দিন মজুর মো.রাহাত আলী।
মালয়শিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বৈধতা পাবার জন্য ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ গত ৩০শে জুন শেষ হয়। তার পর থেকেই অবৈধ শ্রমিকদের গ্র্রেফতারের এ অভিযান শুরু হয়।
মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্র্রম বিষয়ক কাউন্সিলর সায়দেুল ইসলাম এবং  ভূূক্তভোাগী  বাংলাদেশীরা অভিযোগ কওে গণমাধ্যমেেক  জানান বিবিসি ,যেসব কর্মীর কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই, যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল তাদের জন্য সহায়ক কর্মসূচি ছিল ই-কার্ড কর্মসূচি,সেটাই শেষ সুযোগ  যারা  গ্রহন করেনি,তারা গ্রেফতার হচ্ছে।আমরা গ্রেফতার ঠেকাবার কে?’

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ বলছিলেন যারা বৈধতার সুযোগ নিতে পারে নাই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

আজ রাতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার  এক ভূূক্তভোগী বাংলাদেশী অভিযোগ করে মুঠোফোনে জানান,-‘আমরা বাংলাদেশ  দূতাবাসে  বহুুবার পাসেেপার্টের জন্য আেেবদন  করেও তা পাইনি।তারা আমাদের ফকীরের চেয়ে খারাপ চোঁখে দেখে।আমাদের কাজ করে দিবে দূরে থাক,কথাই শুনতে চায় না।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে কৃষক ও উদ্যোক্তাদের দিনব্যাপী কর্মশালা

‘‘মালয়েশিয়ায় ভাগ্য বদলাতে যেয়ে বাঞ্ছারামপুরের হাজারো প্রবাসীর ঠিকানা এখন জঙ্গলে’’

আপডেট সময় ০৪:২১:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুলাই ২০১৮
ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ

“বাংলাদেশ সরকারকে বলেন,আমরা জমিজমা-গরু বাছুর সব বেচে  ধার কর্জ করে বুকভরা আশা নিয়ে কাজের জন্য দালালদের মাধ্যমে  মালয়েশিয়ায় এসেছি। আমাদের পাসপোর্ট নাই।এটাই আামাদের একমাত্র অপরাধ।আমরা মানুষ খুুন করিনি।চুরী-ডাকাতি বা সন্ত্রাসী নই।মাসে মাসে রেমিটেন্স পাঠাই।যার দ্বারা সরকার নিজেেেদর টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মান করছে।আমাদের বিপদ যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা না দেখে,তবে দেখবেটা কে?
সাংবাদিক ভাই,কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।মালয়েশিয়ার পেনাং জংগলে এখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আবার বেশ বড় সাইজের মশার কামড় থেকে বাঁচতে স্থান পরিবর্তন, মশাগুলোকে মারা, জংগলের কাটা ইত্যাদি নিয়ে খুব কষ্ট করছি গত মঙ্গলবার থেকে।

আপনার প্রতি অনুরোধ পেপারে লিখেন আর যেভাবে পারেন-বাংলাদেশ সরকারের কানে খবরটি পৌছাবেন,আল্লাহরওয়াস্তে।নইলে মারা যাবো। আমি একা না,হাজারো বাংলাদেশী এমন বহু জংগলে পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আছি’’-

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে কথাগুলো মোবাইলে আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাঁশগাড়ি গ্রামের আব্দু মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমান।তার সাথে একই উপজেলার জাকির, সজীব, রনি,আজাদ,ফয়সাল,জয়নাল সহ আরো ১০/১২ জন শ্রমীক গত ৭২ ঘন্টা ধরে পুলিশের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য ঘুটঘুটে দিনের বেলায় অন্ধকারপূর্ন পেনাং জংগলে ঠিকানা করে নিয়েছেন।

মালয়শিয়া সরকার অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এক বড় আকারের অভিযানে চালাচ্ছে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এবং গত ২৪ ঘন্টায় (বুধবার পর্যন্ত) সেদেশে বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে – যাদের একটা বড় অংশই বাংলাদেশি।তাদের মধ্যে বাঞ্ছারামপুরের রয়েছে ১ ডজন দরিদ্র মানুষ।তাদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তারা বিভিন্ন সময় সহায় সম্বল বিক্রি করে বা উচ্চ লাভে সুদে টাকা তুলে ভাগ্য অন্বেষনে দেশটিতে গিয়েছিল।বাঞ্ছারাামপুর উপজেলার  হোগলাকাান্দি গ্রামের রহিছ মিয়ার গ্রেফতারের খবর তার স্ত্রী রাশিদা বেগম ৩ দিন আগে জানতে পারেন।

জানার পর,গত ৩ ধরে দুশ্চিন্তায় ২ মেয়ে ২ ছেলে সহ ৮ সদস্যের পরিবার ঘুম-খাওয়া প্রায় বন্ধ।খবরটি প্রকাশ পাওয়ায় তার উপর পাওনাদাররা ঘন্টায় ঘন্টায় টাকা ফেরতের চাপ দিচ্ছে বলে জানান রহিছ মিয়ার পিতা দিন মজুর মো.রাহাত আলী।
মালয়শিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বৈধতা পাবার জন্য ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ গত ৩০শে জুন শেষ হয়। তার পর থেকেই অবৈধ শ্রমিকদের গ্র্রেফতারের এ অভিযান শুরু হয়।
মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্র্রম বিষয়ক কাউন্সিলর সায়দেুল ইসলাম এবং  ভূূক্তভোাগী  বাংলাদেশীরা অভিযোগ কওে গণমাধ্যমেেক  জানান বিবিসি ,যেসব কর্মীর কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই, যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল তাদের জন্য সহায়ক কর্মসূচি ছিল ই-কার্ড কর্মসূচি,সেটাই শেষ সুযোগ  যারা  গ্রহন করেনি,তারা গ্রেফতার হচ্ছে।আমরা গ্রেফতার ঠেকাবার কে?’

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ বলছিলেন যারা বৈধতার সুযোগ নিতে পারে নাই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

আজ রাতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার  এক ভূূক্তভোগী বাংলাদেশী অভিযোগ করে মুঠোফোনে জানান,-‘আমরা বাংলাদেশ  দূতাবাসে  বহুুবার পাসেেপার্টের জন্য আেেবদন  করেও তা পাইনি।তারা আমাদের ফকীরের চেয়ে খারাপ চোঁখে দেখে।আমাদের কাজ করে দিবে দূরে থাক,কথাই শুনতে চায় না।’