জাতীয় ডেস্কঃ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই সাথে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ফেরত নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ ধরনের বার্তা ইতোমধ্যে মিয়ানমারকে দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বৃহস্পতিবার বিকালে দৈনিক ইত্তেফাকসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাত্কারে একথা বলে। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ছুটি ও পরামর্শ শেষে সম্প্রতি মার্শা বার্নিকাট ঢাকায় ফিরেন। ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শুরু হওয়া সামরিক
বাহিনীর নিধনযজ্ঞ ও অত্যাচারের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এই অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
সাক্ষাত্কারে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন সরকারের অবস্থান ও নীতি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া, মার্কিন সহায়তা, মিয়ানমারের সু চি সরকারের প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি চীন, ভারতসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
রাখাইন রাজ্য ও রোহিঙ্গা নিয়ে সৃষ্ট সংকট থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে মার্শা বার্নিকাট বলেন, মিয়ানমারের নেত্রী সু চি গঠিত কফি আনান কমিশনের সুপারিশই মিয়ানমার সংকট সমাধানের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। এই রোডম্যাপ মিয়ানমার পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারে। মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, রাখাইনে সহিংসতা তথা সামরিক বাহিনীর অভিযান, সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে মানবাধিকার, নাগরিকদের অধিকার, স্বাধীনতাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সু চি তার ভাষণে যা বলেছেন তার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আশার কথা, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এখন চলমান। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ, নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা মিয়ানমার সফরে গিয়ে সু চিসহ সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। আনান কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন, তথা সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। বিশ্ববাসীর সামনে দেওয়া অঙ্গীকার কখন কিভাবে পূরণ হয়, তা দেখা হচ্ছে।
মার্শা বার্নিকাট বলেন, মিয়ানমারের এখন নব্য গণতন্ত্র। এ অবস্থায় সরকার, সামরিক বাহিনী, প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা জরুরি। দায়িত্বশীলতাও গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ আগস্ট থেকে ঘটে আসা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবগুলো ঘটনার তদন্ত করতে হবে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত জরুরি।
রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়। পুরো বিশ্ব উদ্বিগ্ন। এটা আন্তর্জাতিক ইস্যু এখন। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে আঞ্চলিক স্থিতি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব আজ বিপদ সংকুল।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীনের ভূমিকা ও অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুটি দেশই রাখাইনে সহিংসতার কড়া নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বড় সহযোগিতা রয়েছে। চীনের রয়েছে ব্যাপক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। কিন্তু কথা হলো, শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকলে সহিংসতার মধ্যে অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক স্বার্থ কিভাবে অর্জন হবে। জাপান, কোরিয়াও একই অবস্থায় আছে। অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য স্থিতিশীলতা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে তালিকা প্রণয়ন ও পরিচয় নিশ্চিত করা জরুরি। দুই দেশের কর্মকর্তারা, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা এ কাজটি সহজে সমাধা করতে পারে। কারণ নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় থেকে উত্তরণ জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা হিসাবে সাড়ে ২৮ মিলিয়ন ও রাখাইন রাজ্যের জন্য সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ৪৫ মিলিয়ন ডলারের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় আইসিডিডিআরবি’র সহায়তায় রোগের প্রাদুর্ভাব রোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।