শামীম আহম্মেদ, মুরাদনগরঃ
মুরাদনগর উপজেলার টনকি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা রুজু করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিষ্ট্রেট নুসরাত জাহান উর্মির ৮নং আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। তিনি মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআই কুমিল্লাকে নির্দেশ দেন।
চেয়ারম্যান জাকির হোসেনসহ (৪৫) ৮ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা দায়ের করেন একই ইউপির টনকি গ্রামের আব্দুল হালিম মোল্লার ছেলে কাউছার আলম (৩৭)।
মামলার অপর আসামীরা হলেন, টনকি গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে তৌফিকুল ইসলাম ওরফে আমির (৪০), মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে আল-আমিন (৩৫), সফিকুল ইসলামের ছেলে ইলিয়াছ (২৫), হানিফ মিয়ার ছেলে ফাহাদ (২২), মৃত আবুল কাশেমের ছেলে শরিফ মিয়া (৪০), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আলী আজ্জম (৪৫), কমলপুর গ্রামের হান্ডু মিয়ার ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৩৫)।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টনকি গ্রামের আব্দুল হালিম মোল্লার ছেলে কাউছার আলম দীর্ঘদিন যাবত বালু ব্যবসা করে জীবীকা নির্বাহ করছে। সে ব্যবসা পরিচালনা করতে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের কাছে যান। চেয়ারম্যান যথাযথ প্রক্রিয়ায় ট্রেড লাইসেন্স না দিয়ে বালু ব্যবসা করতে হলে এককালীন দুই লাখ টাকা ও প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে জানায় তাকে। চাঁদা ছাড়া বালু ব্যবসা অব্যাহত রাখলে কাউছার আলমকে হত্যা করে লাশ ঘুম করারও হুমকি প্রদর্শণ করেন। এ অবস্থায় ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে তিনি চলে আসেন। ফলে বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে বালু আনা নেওয়ার পথে চেয়ারম্যানের লোকজন বাধঁা দেয়। পরবতর্ীতে গত ৩ আগষ্ট রাত আনুমানিক ৯টায় বালু বিক্রয়ের হিসাব করাকালে ওই আসামীগন চাইনিজ কুড়াল, দা, ছেনি, হকিষ্টিক ও এসএস পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে পরিকল্পিত ভাবে তাকেসহ উপস্থিত লোকজনকে ঘিরে ফেলে। কারণ জানতে চাইলে দাবিকৃত দুই লাখ টাকা দিতে বলে। চাদঁা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে আসামীরা কাউছার আলম ও উপস্থিত লোকজনকে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। ২নং আসামী তৌফিকুল ইসলাম ওরফে আমির বাদী কাউছারের গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। ৩নং আসামী আল-আমিন কাউছারের পকেটে থাকা বালু বিক্রির ৪০ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ৪নং আসামী ইলিয়াছ কাউছারের হাতে থাকা টর্চলাইট জোরপূর্বক নিয়ে যায়। আসামী ফাহাদ, শরিফ মিয়া, আলী আজ্জম ও আব্দুল কুদ্দুস তাদের হাতে থাকা হকিষ্টিক ও এসএস পাইপ দিয়ে পিটিয়ে বাদী ও স্বাক্ষীদের দাগফুলা জখম করে।
২২নং টনকি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৯ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করি এবং বিভিন্ন দপ্তরে তার দুনর্ীতির ব্যাখ্যা দিয়ে অভিযোগ দেই। তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসে মাসিক সভা না করে মনগড়া সিদ্ধান্ত নেয় চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। ৬/৭ মাস পর পর কোন কিছু না লিখেই মেম্বারদের স্বাক্ষর নিয়ে প্রকল্প পাশ করেন তিনি। ইতিমধ্যে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন প্রকার ভাতাভোগিদের কাছ থেকেও জনপ্রতি তিন শত টাকা নেয় সে। গত নয় বছরে ন্যায্য মূল্যের চাল বিতরণ, অবৈধ ড্রেজার মেশিন, বালু মহাল, সরকারি জায়গা দখল ও ইটভাটাসহ নানান অনিয়মে টনকি ইউনিয়নকে নরক রাজ্য বানিয়েছেন চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
অপর এক সূত্র জানায়, টনকি মৌজার ৪০০২ দাগের ০.৯১ একর সরকারি সম্পত্তির উপর দোকান ঘর নির্মাণ করে অবৈধ ভাবে দখলে নিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। উক্ত স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসাদুজ্জামান ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর নোটিশ দিলেও তা কর্ণপাত করেনি। পরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করেছেন। যার ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা।
উক্ত বিষয়ে অভিযুক্ত টনকি ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, মামলা করেছে শুনেছি, কিন্তু কপি হাতে পাইনি। প্রতিহিংসামূলক ভাবে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এ গুলো করছে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। আদালত কোন প্রকার সহযোগিতা চাইলে করা হবে। সম্প্রতি তঁার বিরুদ্ধে যে লিখিত অভিযোগ হয়েছে তা আমার কাছে আসেনি। আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।