এম কে আই জাবেদ, (মুরাদনগর) :
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মৃত জীবন মিয়া ২য় ছেলে ও ঢাকা আশুলিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি মোঃ দবির আহম্মেদ (৩৬) মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনীতি ও মডেলিং ছেরে গত ৯ মাস পূর্বে শুরু করে ছিলেন ঔষুদের ব্যবসা। তার নিজ এলাকার একজনের প্ররোচনায় সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানার ভার্তখলা পুলের মুখ মার্কেটের ‘এম এম ড্রাগ হাউস’ নামের দোকানে দীর্গদিনের ব্যবসায়ী মোঃ মহসীনের সাথে শেয়ারে শুরু করেন। দবির আহম্মেদ প্রথমে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পুজিঁ নিয়ে মহসীনের সাথে ঔষুদের ব্যবসা শুরু করেন বলে জানাগেছে। দুজনে থাকতেন দোকানের পাশের রোডের ১৭নং স্বর্নালী নামের একই ভবনে।
গত ৬ আগস্ট রাত আনুমানিক রাত সাড়ে ১১ টার দিকে দবির আহম্মেদের গলায় ফাসঁ অবস্থায় ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় থানার পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি এটি আত্মহত্যা নয়, তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা করছে একটি মহল। সুরতাহাল রির্পোট তৈরীতে প্রকৃত তথ্য না লেখায় ও হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করায় এবং ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান চট্রগামের ল্যাবে পাঠাতে বিলম্বিত করায় স্থানীয় দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের বিরোদ্ধে প্রকৃত রহস্য দামাচাপা দেওয়ার অভিয়োগ করেছে দবিরের পরিবার।
এছারাও পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসআই মোঃ শাহিন মিয়া সুরতাহাল রির্পোটে শুধু গলায় দাগ উল্লেখ করলেও লাশের দুই পায়ের গোড়ালিতে লাল দাগ ও ঠোটে দাগ দেখার পরেও সুরতাহালে প্রতিবেদনে উল্লেখ না করায় তদন্ত কর্মকর্তার বিরোদ্ধে মূল রহস্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার সন্দেহ করা হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। লাশ পোস্টমর্টেম করার পূর্বে ও থানায় অভিযোগ দায়েরের সময় নিহতের বড় ভাই মাসুদ, সালাহ উদ্দিন, আলী আজম ও চাচা হাবিবুর রহমান থানার ওসি খাইরুল ফজল ও এসআই শাহিন মিয়ার সাথে সুরতাহাল রিপোর্টে পায়ে ও ঠোটে আগাত উল্লেখ না করায় বাকবিতণ্ডা হয়। পরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল ফজল পোস্টমর্টেম রির্পোটে অত্মহত্যা নয় হত্যা প্রামাণিত হলে তিনি মামলা নিবেন বলে নিহতের পরিবারকে আশ্বস্ত করলে পরিবেশ শান্ত হয়।
কিন্তু গত ৭ আগস্ট ময়নাতদন্তের সকল আলামত সম্পন্ন করা হলে তার ভিসেরা ও রাসায়নিক পরীক্ষার প্রধান কার্যালয় চট্রগ্রামে পাঠাতে গড়মিস করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মোঃ শাহিন মিয়া। মৃত্যুর ১৩ দিন নিহতের পরিবারের চাপে পরে গত ২০শে আগস্ট ভিসেরা ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য চট্রগ্রামে প্রেরন করা হয়। বিলম্বে প্রেরনের কারনে ও সঠিক ভাবে আলামত সংরক্ষণের অভাবে মৃত্যুের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে বাধা হতে পারে বলে দবিরের ভাই আলী আজম সন্দেহ পোষন করেন।
নিহত দবির আহম্মদ দীর্গবছর ধরে আশুলিয়া থানা আ’লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন। আশুলিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতিও ছিলেন। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন এটা কেউ বিশ্বাস করছে না বা আত্মহত্যা করার মত তেমন কোন কারনও দেখছেন না ঘনিষ্ঠজনরা।
নিহত দবির আহম্মদের বড় ভাই মোঃ মাসুদ আহম্মেদ ও একাদিক সূত্র থেকে জানাযায়,
দবির আহম্মেদ দীর্গদিন ঢাকার আশুলিয়াতে ব্যবসা করতেন। গত প্রায় ৯ মাস পূর্বে সে তার নিজ এলাকা শ্রীকাইল গ্রামের মৃত ইমাম উদ্দিনের ছেলে মহসীন সরকারের সাথে ওষুদ ব্যবসা করার জন্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন। মহসীন দীর্গ বছর ধরে সিলেটে ব্যবসা করেন এবং তার বোন সিলেটর স্থানীয় প্রভাবশীলি পরিবারে বিয়ে দেওয়ায় মহসিনের রয়েছে সে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে দবির ও মহসীনের মধ্যে সম্পর্কের অবনিতি হয়। মহসিন কৌশলে মহসীন দোকান থেকে লাভ্যাংশ ও মূলধন সরিয়ে নিতে থাকে। বিভিন্ন ঔষুদ কোম্পানীর বয়েকা টাকা উদ্ধারে এসআরগণ দোকানে এসে মহসীনকে খুজে না পায়না। দোকানের আয়-ব্যায়ের হিসাব স্বচ্ছতা না থাকায় পার্টনারশিপে ব্যবসা ছিন্ন করে পৃথক হয়ে যেতে চায় দবির আহম্মেদ। কিন্তু এই নিয়ে মহসীন ও দবিরের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। দবির তার ৮ লক্ষ টাকা মহসিনের নিকট ফেরত চাইলে তা দিতে মহসিন টালবাহানা শুরু করেন। এই নিয়ে গত জুলাই মাসে ২০ তারিখে মহসিন এবং দবিরের মধ্যে তাদের দেনা- পাওনা হিসাব নিয়ে সালিশি মেটিং পর্যন্ত করা হয়। ঐ মার্কেটের সভাপতি, মবিন হোসেন চৌধুরী, স্থানীয় ব্যবসায়ী বিষ্ণুপদ, ঝিকু সহ ৫ জনকে সাক্ষী করে স্টাম্পে লিখিত একটি চুক্তি নামা করা হয়। সিন্ধান্ত হয় মহসিন সরকার তার ব্যবসায়ী পার্টানার দবির হোসেন কে ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করবে। তবে যতদিন টাকা পরিশোধ করতে না পারবে ততদিন মহসিন দৈনিক ৫০০/- টাকা করে দবিরকে প্রদান করবে বলে চুক্তি নামায় উল্লেখ করেন। লিখিত চুক্তি হওয়ার পরেও দবির তার পাওনা টাকা মহসিনের নিকট থেকে উদ্ধারে আতংকে ছিলেন। তাই তিনি মহসীনের নিকট সমপরিমাণ টাকার চেক দবির আহম্মেদ দেওয়া দাবি করেন। মহসীন সরকারও তার ব্রাক ব্যাংকের একটি চেক যাহার নং 060913508 দবির আহম্মেদকে প্রদান করেন। অবশ্য ব্যাংকে মহসীনের চেকের সমপরিমাণ টাকা ছিল না।
নিহতের ভাই মাসুদ আহম্মেদ বলেন, আমার ভাই টাকা পাওনা ছিল যার নিকট তারাই তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। তিনি মূল সন্দেহ করে বলেন: আমার ভাই ”যার দোকানে ৯ মাস ধরে শেয়ারে ব্যবসা করেছেন, যার নিকট ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পেতেন, দুজনের একই গ্রামের বাড়ী অথছ ভাইয়ের মৃত্যুে সংবাদ সে না জানিয়ে অন্যের নিকট থেকে জানতে হল কেন? সে কেন জানাযা পড়তে পর্যন্ত আসল না? মৃত্যুের পর থেকে সে এখনো আমাদের পরিবারের কারো নিকট কোন যোগাযোগ করে নাই! বরং তার নিকট থেকে আমার ভাই ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পাবে, দবিরের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের কোন সহযোগীতা পাচ্ছি না। আরো জেনেছি মহসিন তার গ্রামের বাড়ী বন্ধক রেখে সিলেট ব্রাক ব্যাংক থেকে ৭০ লক্ষ টাকা ঋন তুলেছে! অথছ আমাদের পরিবারের দুঃসময়ে পাওনা টাকা সে দিচ্ছে না বরং যোগাযোগ করে পাওয়া যায় না। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি ময়নাতদন্তের রির্পোট পাওয়ার পর মামলা দায়ের করব।
দবির আহম্মেদের মৃত্যু নিয়ে মোঃ মহসিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, দবির ভাই একজন অত্যান্ত ভাল মানুষ ছিলেন। ওনার মত এত ভাল মনের মানুষ আমি কমই দেখেছি, তবে কি কারনে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন আমি নিজেও ভাবতে পারি না। আমার নিকট পাওনা টাকা আগামী ০৬/১১/১৯ ইং মধ্যে পরিশোধের কথা হয়েছিল।