মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ
কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলায় কবি নজরুল-নার্গিসের স্মৃতিবিজড়িত দৌলতপুরে নির্মিত নার্গিস-নজরুল বিদ্যনিকেতনটি প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলে এমপিওভূক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিদ্যালয়টি অবকাঠামো ও পরিবেশের দিক থেকে ভাল অবস্থা থাকলেও শ্রেনী কক্ষ, শিক্ষক, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দিন কাঠাচ্ছে বিদ্যালয়টি। শ্রেনী কক্ষ ও শিক্ষক সংকটটি স্কুলটির প্রধান সমস্যা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের লোখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা কক্ষ না থাকায় ক্লাস নিতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। ঝড়বৃষ্টির সময় সেই বিষয় গুলোর ক্লাস না হওয়ায় লেখাপড়ার দিক থেকে পিছিয়ে পরছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম এরপর তিনি দুই মাস ১১ দিন ওই বাড়িতেই ছিলেন। তখন আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে নার্গিস আশার খানমের সঙ্গে তার প্রেম হয়। এরপর তিনি তাকে বিয়ে করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবি নজরুল ও ১৯৮৪ সালের ২ মে লন্ডনে নার্গিস মারা যান। সে থেকেই পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। কিন্তু সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত ও উপেক্ষিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কিছু সংঘঠন বিভিন্ন সময় কিছু দাবি নিয়ে আন্দেলন করে কোন প্রকার লাভ হয়নি। পরে এলাকাবাসী ও নার্গিসের পরিবার কবি ও তার নামে উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।’আর তার নাম দেওয়া হয় নার্গিস-নজরুল বিদ্যানিকেতন। সেই বিদ্যালয়টি ২০০২ সালের ২ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক দৌলতপুর গ্রামে বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। ২০০৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিন কক্ষবিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তিতে সেটিকে দিতল ভবন করা হয়। ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিন কক্ষবিশিষ্ট আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ৩০ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠানটি মূল ক্যাম্পাসটি রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী, ৪ জন নিয়মীত ৮জন খন্ডকালিন শিক্ষক ও দুজন কর্মচারী আছেন। আবার খন্ডকালিন শিক্ষকনা যখন খুশি তখনই চলে যাচ্ছেন ভাবল কোন বিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে। এর ফলে অংক, ইংরেজী বিজ্ঞান ও আইসিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ের কোন শিক্ষক না থাকায় মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লোখাপড়া। সরকার সবকয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রজেক্টরভিক্তিক) মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সকল বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেও স্কুলটিতে কোন প্রকার ল্যাপটব ও প্রজেক্টও না পাওয়ায় ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল শিক্ষা (মাল্টিমিডিয়া) থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন, শ্রেনী কক্ষ সংকট, পানি, টয়লেট, আসবাবপত্র সঙ্কট। প্রধান শিক্ষক চার হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকেরা দুই হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের বেতন থেকেই ওই টাকা আসে।’এমপিওভুক্ত হওয়ার সব শর্তই, পূরণ হওয়ার পরও এমপিওভূক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা। বিদ্যালয়টির প্রতি কতৃপক্ষের সু-নজর পরছেনা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষর বিদ্যালয়টির উন্নয়ন ও সকল সমস্যা সমাধান করার বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অভিযোগ করে জানায়, শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণী কক্ষ কম ও বিষয় বিত্তিক শিক্ষক না থাকায় প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ বিদ্যালয়ে আছি। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমরা পরিবার নিয়ে খারাপ অবস্থায় আছি। শ্রেনী কক্ষ সংকটের কারে আমাদের অনেক ক্লাস খোলা আকাশের নিচে নিতে হচ্ছে। এতে করে কখনও অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পরছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম তালুকদার জানান, নতুন ভবন বরাদ্ধ ও শিক্ষক শূর্ণতার জন্য উদর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সরকার জখন শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিও করার সিদ্ধান্ত নিবে ঠিক তখনই সেই গুলো করা হবে।