মাহবুব আলম আরিফ:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চলছে জলাশয় ভরাটের মহোৎসব। পরিবেশ ও জলধারা আইনের কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণীর অসাধু প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা ড্রেজারের মাধ্যমে অবাধে ভরাট করছে কৃষি জমি, পুকুর-ডোবা, খাল, নদী ও নিচু জলাশয় গুলো। পুকুর দিঘী, খাল ও বিভিন্ন জলাশয় ভরাটের কারনে যেমন নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, তেমনি দৈনন্দিন জীবনে পানি সংকটের ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ব্যাক্তি মালিকানা পুকুর রয়েছে ৯ হাজার ১৮টি ও কৃষি জমি রয়েছে ২৪ হাজার হেক্টর এরই মধ্যে গত ৪ থেকে ৫ বছরে ভরাট হয়ে গেছে ছোট বড় প্রায় ২ হাজার পুকুর ও প্রায় ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। বাদ পরেনি সরকারি খাল ও নদী। পরিবেশ ও জলধারা আইন অমান্য করে সংশি¬ষ্ট প্রশাসনের নাকের ডোগায় জলাশয় ভরাটের মহোৎসব চললেও তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল। বসত বা বানিজ্যিক জমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভূমি ব্যবসায়ীদের নজর পড়ছে কম দামের পুকুর ও জলাশয়ের উপর। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুকুর-ডোবা ও কৃষি জমি ভরাট করার কারনে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা সদরের করিমপুর গ্রামের দির্ঘদিনের পুরনো পুকুর বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের কুড়াখাল বাজারের উত্তর পাশের শত বছরের পুরনো একটি পুকুর, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের জানঘর গ্রামের রাস্তার পাশে প্রায় ২ একর কৃষি জমি থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করে আশ পাশের কৃষি জমি প্রকাশ্যে ভরাট করছেন।
অপর দিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যে ক’টি পুকুর ও জলাশয় রয়েছে ওই গুলোও ভরাটের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে প্রভাবশালীরা।
পুকুর ভরাটের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা সদরের তহসিলদার ছৈয়দ ছগীর আহম্মেদ বলেন, পুকুর বা জলাশয় ভরাটের বিষয়টি আমি যখনি যেনেছি তখনি বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে এসব ভরাট বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
জলাশয় ভরাট বিষয়ে উপজেলার বাঙ্গরা পশ্চিম ইউপি সদস্য মাইনুল ইসলাম নেছার বলেন, পুকুর বা খাল ভরাটের বিষয়ে জমি মালিকদের কিছু বললে উল্টো তারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। যার ফলে এখন এগুলো দেখেও কোন প্রতিবাদ করি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, আমি এখানে আসার আগে কি হয়েছে আমার জানা নেই। তবে এতুটুকু বলতে পারি এখন থেকে আর কেউ কোন প্রকার অনুমোতি ছাড়া পুকুর জলাশয় ভরাট করতে পারবে না। আর যদি কোন প্রকার অনুমোতি ছাড়া পুকুর জলাশয় ভরাট করে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও কিছু দিনের মধ্যে আমরা উপজেলার সকল ইউনিয়নে সরকারি সম্পত্তি সনাক্ত করে উদ্ধার করতে যা যা করণীয় সেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।