ঢাকা ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে কায়কোবাদ পরিবারের কাহিনি:সন্ত্রাসীদের হাতে রাজনীতির ‘চেরাগ’

মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মানুষের কাছে ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারী রোববারের রাতটা ছিল একেবারে অন্য রকম। রাত ১১টার পর উপজেলায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, কায়কোবাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। প্রথমে কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। জেলা প্রশাসন আর থানা-পুলিশ যার কথায় ওঠবস করে, সেই ক্ষমতাধর ব্যাক্তি কেন দেশ থেকে পালাবেন? উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক—নতুন কেউ দখল নিতে আসছে না তো!

মুরাদনগর উপজেলার এক আইনজীবী নিজের চেম্বারে বসে এভাবেই কায়কোবাদের দেশ ত্যাগের পর উপজেলার অবস্থার কথা বলছিলেন। তবে ‘বোবা’ হয়ে থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন, বেরিয়ে আসছে কায়কোবদ পরিবারের গা শিউরে ওঠা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য। বড় ভাইয়ের দেশ ত্যাগের পর গা দাকা দিয়েছে তার অপর ভাইয়েরাও। আলোচিত ২১শে গ্রেনেট হত্যা হামলায় আসামি হওয়ার পর দেশ ত্যাগ করেন।

পুরো নাম কাজী শাহ্ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ। কিন্তু কায়কোবাদ নামেই সবাই তাকে চেনেন। শুধু কুমিল্লা নয়, আশপাশের কয়েক জেলায় তার রয়েছে দাপট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও ইন্টারপোল (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন) খাতায় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী। দেশের বাইরে বসেই “রাজত্ব” সামলান তিনি। ক্ষমতাসীন দলের কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারসহ কয়েকজেনের সাথে মিলে মিুরাদনগর উপজেলাসহ কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ সরকারি কাজ, সন্ত্রাসী, চাদঁবাজি, জমিদখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করছেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কায়কোবাদ বড় ভাই। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। বাকি চার ভাইয়েরা হলেন কেএম মজিবুল হক, জুন্নুন বসরি, কাজী আবু কাউছার ও কাজী শাহ আরফিন। তাদের মধ্যে কাজী আবু কাউছার ও কাজী শাহ আরফিন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। প্রতিটি ভাই পৃথক পৃথক ভাবে একটি করে সন্ত্রাসী বাহিনীর গড়ে তুলেছে এলাকায়। সেই বাহিনীর মাধ্যমে মুরাদনগর উপজেলায় অপরাদের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন।

ভাইদের সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে ভোট ছিন্তাই করে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের পাচঁবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। কায়কোবাদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তাঁরা চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশের এমন কোনো শহর নেই, যেখানে তাঁদের জমি নেই। গত বিএনপির আমলে সকল ভাই কাদের প্রশ্রয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তানভির আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের প্রশ্রয়ে কায়কোবাদ ও তার ভাইয়েরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। প্রশ্রয় না পেলে এই শহরে কায়কোবাদের মতো সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের জন্ম হতো না।

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবে সিনিয়র সিহ-সভাপতি মনিরুল হক জজ বলেন, কায়কোবাদ ও তার পরিবারের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মুরাদনগর উপজেলা ও কুমিল্লা জেলার মানুষকে এত দিন জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের যে এত ক্ষমতা, তার মূলে মির্জা ফখরুল । তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে তারা।’

এত সম্পদ কোত্থেকে এল? যাঁদের এত সম্পদ, তাঁদের জীবনযাপন কেমন? তারও একটি হিসাব দেওয়া যেতে পারে। বড় ভাই কায়কোবাদের পছন্দ জিপ ধরনের গাড়ি। তাঁর আছে একটি হ্যারিয়ার, একটি নিশান প্যাট্রল ও বিএমডব্লিউ জিপ। ছোট ভাইদের আছে চারটি বিএমডব্লিউ কার, চারটি মাইক্রোবাস ও চারটি সিডান কার। আর আছে নিজেদের ব্যবহারের জন্য দুইটি রেস্টহাউস। পাঁচ তারকা হোটেলের প্রায় সব সুবিধা সেখানে আছে। কুমিল্লার লোকেরা নাম দিয়েছেন ‘কায়কোবাদের হেরেমখানা’।

জানা যায়, কুমিল্লার সবকিছুই চলত তাঁদের কথামতো। এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য, সড়ক ও জনপদ, শিক্ষা প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিসি, গণপূর্ত, বিআরটিএ, বিদ্যুৎ অফিস, বিএডিসি, পাসপোর্ট অফিস ও শহরের ফুটপাত ছিল তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। সব ধরনের উন্নয়নকাজের ১৫ শতাংশ তাঁরা পেতেন। এসবের পাশাপাশি তাঁদের বড় আয়ের উৎস ছিল জমি দখল ও চাঁদাবাজি। যে জমি পছন্দ হতো, সেটাই দখল করতেন। এই বেআইনি কাজে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকলেও তার রাজত্বে ভাটা পড়েনি। তাই গত ১০ বছরে তার সম্পদ কয়েকগুণ বেড়েছে। গাড়ি-বাড়িসহ নামে-বেনামে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদিআরব, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশে অবস্থান করেন কায়কোবাদ। কুমিল্লার অনেক রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদার তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। আবার বিদেশে গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও করেন। সম্প্রতি এখানকার তিন নেতা ও ঠিকাদার মালশিয়ায় গিয়ে কায়কোবাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কায়কোবাদের উত্থান ‘৯০ দশকে। ‘৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন তিনি। তৎকালিন প্রেসিডেন্ট এরশাদের স্ত্রীকে ধর্ম ডেকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন কায়কোবাদ। সে সময় থেকে তিনি ও তার ভাইয়েরা মিলে গোপনে চরমপন্থি বাহিনীও গড়ে তোলেন। আর সেই চরমপন্থি বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন ছোট ভাই আবু কাউছার ও কাজী শাহ্ আরফিন। এই বাহিনীর মাধ্যমে মুরাদনগর, কুমিল্লা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপকর্ম শুরু করেন। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে হত্যা করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। আরফিন ও কাউছার মিলে কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেরজের প্রিন্সিপালকে গুলি করে হত্যা, বিএনপি নেতা পিচ্চি কামলকে নির্যাতন করে পিস্তল দিয়ে পুলিশে দেওয়া, ঠিকাদার জামু ও হাবিব, মুরাদনগর থানাপাড়ার বাবু, রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন বাচ্চু, ব্যবসায়ী বকুল সওদাগরসহ প্রায় এক ডজন হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এমনকি টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সড়ক ও জনপথ অফিসের সামনে তিনজনের কাটা মাথা এবং জি কে অফিসের সামনে দু’জনের কাটা মাথা রেখে আতঙ্ক ছড়ান কায়কোবাদের সন্ত্রাসী বাহিনী।

কায়কোবাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা সদরে। বর্তমানে তার বয়স ৬০। তার ছোট ভাইয়েরা মুরাদনগর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা তার সম্পদ দেখাশোনা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানা জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কায়কোবাদের পরিবার এলাকায় তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীদের তৎপরতা বেরে গেছে। কায়কোবাদের ছোট ভাইকে কুমিল্লার-৩ (মুরাদনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য বানাতে বিভিন্ন নীল নকশা তৈরী করছে কায়কোবাদের পরিবার ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রতি সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও ভোটাররা তাতের ভোর অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সঙ্কায় রয়েছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, কায়কোবাদ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তবে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। তার নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জেলায় টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের স্থান নেই। পুলিশ এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স।

ট্যাগস

মুরাদনগরে তিনজনকে কুপিয়ে জখম বাড়ি ভাঙচুর

মুরাদনগরে কায়কোবাদ পরিবারের কাহিনি:সন্ত্রাসীদের হাতে রাজনীতির ‘চেরাগ’

আপডেট সময় ০২:২০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩

মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মানুষের কাছে ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারী রোববারের রাতটা ছিল একেবারে অন্য রকম। রাত ১১টার পর উপজেলায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, কায়কোবাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। প্রথমে কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। জেলা প্রশাসন আর থানা-পুলিশ যার কথায় ওঠবস করে, সেই ক্ষমতাধর ব্যাক্তি কেন দেশ থেকে পালাবেন? উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক—নতুন কেউ দখল নিতে আসছে না তো!

মুরাদনগর উপজেলার এক আইনজীবী নিজের চেম্বারে বসে এভাবেই কায়কোবাদের দেশ ত্যাগের পর উপজেলার অবস্থার কথা বলছিলেন। তবে ‘বোবা’ হয়ে থাকা মানুষগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন, বেরিয়ে আসছে কায়কোবদ পরিবারের গা শিউরে ওঠা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য। বড় ভাইয়ের দেশ ত্যাগের পর গা দাকা দিয়েছে তার অপর ভাইয়েরাও। আলোচিত ২১শে গ্রেনেট হত্যা হামলায় আসামি হওয়ার পর দেশ ত্যাগ করেন।

পুরো নাম কাজী শাহ্ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ। কিন্তু কায়কোবাদ নামেই সবাই তাকে চেনেন। শুধু কুমিল্লা নয়, আশপাশের কয়েক জেলায় তার রয়েছে দাপট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও ইন্টারপোল (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন) খাতায় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী। দেশের বাইরে বসেই “রাজত্ব” সামলান তিনি। ক্ষমতাসীন দলের কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারসহ কয়েকজেনের সাথে মিলে মিুরাদনগর উপজেলাসহ কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ সরকারি কাজ, সন্ত্রাসী, চাদঁবাজি, জমিদখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করছেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে কায়কোবাদ বড় ভাই। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। বাকি চার ভাইয়েরা হলেন কেএম মজিবুল হক, জুন্নুন বসরি, কাজী আবু কাউছার ও কাজী শাহ আরফিন। তাদের মধ্যে কাজী আবু কাউছার ও কাজী শাহ আরফিন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। প্রতিটি ভাই পৃথক পৃথক ভাবে একটি করে সন্ত্রাসী বাহিনীর গড়ে তুলেছে এলাকায়। সেই বাহিনীর মাধ্যমে মুরাদনগর উপজেলায় অপরাদের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন।

ভাইদের সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে ভোট ছিন্তাই করে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের পাচঁবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। কায়কোবাদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে তাঁরা চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। দেশের এমন কোনো শহর নেই, যেখানে তাঁদের জমি নেই। গত বিএনপির আমলে সকল ভাই কাদের প্রশ্রয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তানভির আহম্মেদ ফয়সাল বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের প্রশ্রয়ে কায়কোবাদ ও তার ভাইয়েরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। প্রশ্রয় না পেলে এই শহরে কায়কোবাদের মতো সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের জন্ম হতো না।

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবে সিনিয়র সিহ-সভাপতি মনিরুল হক জজ বলেন, কায়কোবাদ ও তার পরিবারের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মুরাদনগর উপজেলা ও কুমিল্লা জেলার মানুষকে এত দিন জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের যে এত ক্ষমতা, তার মূলে মির্জা ফখরুল । তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে তারা।’

এত সম্পদ কোত্থেকে এল? যাঁদের এত সম্পদ, তাঁদের জীবনযাপন কেমন? তারও একটি হিসাব দেওয়া যেতে পারে। বড় ভাই কায়কোবাদের পছন্দ জিপ ধরনের গাড়ি। তাঁর আছে একটি হ্যারিয়ার, একটি নিশান প্যাট্রল ও বিএমডব্লিউ জিপ। ছোট ভাইদের আছে চারটি বিএমডব্লিউ কার, চারটি মাইক্রোবাস ও চারটি সিডান কার। আর আছে নিজেদের ব্যবহারের জন্য দুইটি রেস্টহাউস। পাঁচ তারকা হোটেলের প্রায় সব সুবিধা সেখানে আছে। কুমিল্লার লোকেরা নাম দিয়েছেন ‘কায়কোবাদের হেরেমখানা’।

জানা যায়, কুমিল্লার সবকিছুই চলত তাঁদের কথামতো। এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য, সড়ক ও জনপদ, শিক্ষা প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিসি, গণপূর্ত, বিআরটিএ, বিদ্যুৎ অফিস, বিএডিসি, পাসপোর্ট অফিস ও শহরের ফুটপাত ছিল তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। সব ধরনের উন্নয়নকাজের ১৫ শতাংশ তাঁরা পেতেন। এসবের পাশাপাশি তাঁদের বড় আয়ের উৎস ছিল জমি দখল ও চাঁদাবাজি। যে জমি পছন্দ হতো, সেটাই দখল করতেন। এই বেআইনি কাজে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকলেও তার রাজত্বে ভাটা পড়েনি। তাই গত ১০ বছরে তার সম্পদ কয়েকগুণ বেড়েছে। গাড়ি-বাড়িসহ নামে-বেনামে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদিআরব, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশে অবস্থান করেন কায়কোবাদ। কুমিল্লার অনেক রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদার তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। আবার বিদেশে গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও করেন। সম্প্রতি এখানকার তিন নেতা ও ঠিকাদার মালশিয়ায় গিয়ে কায়কোবাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কায়কোবাদের উত্থান ‘৯০ দশকে। ‘৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন তিনি। তৎকালিন প্রেসিডেন্ট এরশাদের স্ত্রীকে ধর্ম ডেকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হন কায়কোবাদ। সে সময় থেকে তিনি ও তার ভাইয়েরা মিলে গোপনে চরমপন্থি বাহিনীও গড়ে তোলেন। আর সেই চরমপন্থি বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন ছোট ভাই আবু কাউছার ও কাজী শাহ্ আরফিন। এই বাহিনীর মাধ্যমে মুরাদনগর, কুমিল্লা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপকর্ম শুরু করেন। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে হত্যা করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। আরফিন ও কাউছার মিলে কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেরজের প্রিন্সিপালকে গুলি করে হত্যা, বিএনপি নেতা পিচ্চি কামলকে নির্যাতন করে পিস্তল দিয়ে পুলিশে দেওয়া, ঠিকাদার জামু ও হাবিব, মুরাদনগর থানাপাড়ার বাবু, রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন বাচ্চু, ব্যবসায়ী বকুল সওদাগরসহ প্রায় এক ডজন হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এমনকি টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সড়ক ও জনপথ অফিসের সামনে তিনজনের কাটা মাথা এবং জি কে অফিসের সামনে দু’জনের কাটা মাথা রেখে আতঙ্ক ছড়ান কায়কোবাদের সন্ত্রাসী বাহিনী।

কায়কোবাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা সদরে। বর্তমানে তার বয়স ৬০। তার ছোট ভাইয়েরা মুরাদনগর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা তার সম্পদ দেখাশোনা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানা জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কায়কোবাদের পরিবার এলাকায় তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীদের তৎপরতা বেরে গেছে। কায়কোবাদের ছোট ভাইকে কুমিল্লার-৩ (মুরাদনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য বানাতে বিভিন্ন নীল নকশা তৈরী করছে কায়কোবাদের পরিবার ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রতি সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও ভোটাররা তাতের ভোর অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সঙ্কায় রয়েছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, কায়কোবাদ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তবে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। তার নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জেলায় টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের স্থান নেই। পুলিশ এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স।