ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ক্যানসার প্রতিরোধক ব্রকলি চাষে সফল কৃষক সামসু

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

ক্যানসার প্রতিরোধক ব্রকলি চাষে সফল হয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সামসুল হক নামে এক কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় ৫৫শতাংশ জমিতে ব্রকলির চাষ করেন। ক্যান্সার প্রতিরোধক এই ব্রকলি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। স্থানীয়রা একে ‘সবুজ ফুলকপি’ হিসেবেও বলে থাকেন। বিদেশী এ সবজির ক্ষেত দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন অসংখ্য লোকজন। তবে পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়া সত্বেও এলাকার মানুষ এই সবজিতে অভ্যস্থ না থাকায় বিক্রি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত কৃষক সামসুল হক। এছাড়াও তিনি ইতিপূর্বে স্কোয়াশ, রকমেলন, হলুদ তরমুজ, সাম্মাম চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া সাড়া জাগিয়েছেন।

তিনি মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভূবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে ও ভূবনঘর মর্ডান এগ্রোফার্ম এর স্বতাধিকারি কৃষক সামসুল হক সামসু।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের প্রায় সব গাছেই ব্রকলি নামক ফল এসেছে। ব্রকলি আকার আয়তন ও দেখতে ফুলকপির মত হলেও পাতা ও ফুলগুলো সাদার পরিবর্তে গাঢ় সবুজ। চাষ পদ্ধতি বাধা বা ফুলকপির মতোই। বিভিন্ন রকমের সবজি চাষি সামসুল হক উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় গত বছর পরীক্সামূলক ভাবে অল্প জমিতে ব্রকলী চাষে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার বেশি পরিমান জমিতে ব্রকলি চাষ করেছেন। ৫৫শতাংশ জমিতে ব্রকলী চাষে চারা, লেবার, সেচসহ এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে কৃষক সামসু বাজারে ৪০ হাজার টাকার ব্রকলী বিক্রি করেছেন। খরচ বাধে ১ লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে আশা কৃষকের। ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পেয়ে খুশি বলে জানান তিনি। সাধারণ ফুল কপি বা বাধা কপি দামের চেয়ে বাজারে ব্রকলীর দাম একটু বেশি থাকে। ফুল কপি বা বাধা কপি ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস বিক্রি হলেও ব্রকলী বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস। প্রথম দিকে প্রতিপিস ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আলাপকালে কৃষক মামসুল হক জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ঝিঙ্গা, লাউ, মূলা, টমেটো, বাধাঁ কপি ও ফুল কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছি। গত বছর স্কোয়াশ, হলুদ তরমুজ, রকমেলন, মরুর দেশের ফল সাম্মাম ও বারমাসি তরমুজ চাষ করেও ভালো সফলতা পেয়েছি। ব্রকলির পুষ্টিগুন প্রচুর। গবেষকরা ব্রকলি কে বলছেন আল্টিমেট ক্যান্সার ফুড। রোজ ব্রকলি খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। ব্রকলি যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত উপকারী। ব্রকলির মধ্যে রয়েছে সালফরফেন। যা ক্যান্সার রুখতে উপকারী। লো ক্যালরির এই সবজি হার্ট ভাল রাখতেও উপকারী। তিনি আরও বলেন, আমি দ্বিতীয় রারের মত ব্রকলি চাষ করেছি। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি দপ্তরের সহায়তায় বীজ সংগ্রহ করে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। বীজ পরে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মুল ক্ষেতে রোপন করা হয়। ৭৫ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে এতে ফুল আসে। মেধাবিকাশ, চোখের দৃষ্টি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন, রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি ব্রকলি অর্থনৈতিক লাভজনক ফসল এটি চাষ করার জন্য স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রথম বছর চাষ করে ভাল ফলন হওয়ায় এই বছর চাষের পরিধি আরও বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। এতে আনুমানিক ৩০হাজার টি ব্রকলির চারা রোপণ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ জানান, এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো বারি ব্রকলি-১ জাতের ব্রকলি চাষ শুরু করা হয়েছে। কৃষক সামসুল হকের পরিশ্রমে ব্রকলি চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি কৃষক সামসুর হককে দেখে অন্যকৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবে। পরীক্ষামূলক ব্রকলি চাষে মিলেছে ব্যাপক সাফল্য। সমসুলের চাষ দেখে কেউ যদি আগ্রহী হয়ে এ ধরনের উদ্যেগ নিতে চান তাহলে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের কারিগরী সহযোগীতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

মুরাদনগরে ক্যানসার প্রতিরোধক ব্রকলি চাষে সফল কৃষক সামসু

আপডেট সময় ০২:৫০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ মার্চ ২০২২

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

ক্যানসার প্রতিরোধক ব্রকলি চাষে সফল হয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সামসুল হক নামে এক কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় ৫৫শতাংশ জমিতে ব্রকলির চাষ করেন। ক্যান্সার প্রতিরোধক এই ব্রকলি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। স্থানীয়রা একে ‘সবুজ ফুলকপি’ হিসেবেও বলে থাকেন। বিদেশী এ সবজির ক্ষেত দেখতে প্রতিদিনই ভীড় করছেন অসংখ্য লোকজন। তবে পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়া সত্বেও এলাকার মানুষ এই সবজিতে অভ্যস্থ না থাকায় বিক্রি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত কৃষক সামসুল হক। এছাড়াও তিনি ইতিপূর্বে স্কোয়াশ, রকমেলন, হলুদ তরমুজ, সাম্মাম চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া সাড়া জাগিয়েছেন।

তিনি মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের ভূবনঘর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে ও ভূবনঘর মর্ডান এগ্রোফার্ম এর স্বতাধিকারি কৃষক সামসুল হক সামসু।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের প্রায় সব গাছেই ব্রকলি নামক ফল এসেছে। ব্রকলি আকার আয়তন ও দেখতে ফুলকপির মত হলেও পাতা ও ফুলগুলো সাদার পরিবর্তে গাঢ় সবুজ। চাষ পদ্ধতি বাধা বা ফুলকপির মতোই। বিভিন্ন রকমের সবজি চাষি সামসুল হক উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় গত বছর পরীক্সামূলক ভাবে অল্প জমিতে ব্রকলী চাষে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার বেশি পরিমান জমিতে ব্রকলি চাষ করেছেন। ৫৫শতাংশ জমিতে ব্রকলী চাষে চারা, লেবার, সেচসহ এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে কৃষক সামসু বাজারে ৪০ হাজার টাকার ব্রকলী বিক্রি করেছেন। খরচ বাধে ১ লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে আশা কৃষকের। ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পেয়ে খুশি বলে জানান তিনি। সাধারণ ফুল কপি বা বাধা কপি দামের চেয়ে বাজারে ব্রকলীর দাম একটু বেশি থাকে। ফুল কপি বা বাধা কপি ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস বিক্রি হলেও ব্রকলী বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস। প্রথম দিকে প্রতিপিস ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আলাপকালে কৃষক মামসুল হক জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ঝিঙ্গা, লাউ, মূলা, টমেটো, বাধাঁ কপি ও ফুল কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছি। গত বছর স্কোয়াশ, হলুদ তরমুজ, রকমেলন, মরুর দেশের ফল সাম্মাম ও বারমাসি তরমুজ চাষ করেও ভালো সফলতা পেয়েছি। ব্রকলির পুষ্টিগুন প্রচুর। গবেষকরা ব্রকলি কে বলছেন আল্টিমেট ক্যান্সার ফুড। রোজ ব্রকলি খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। ব্রকলি যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত উপকারী। ব্রকলির মধ্যে রয়েছে সালফরফেন। যা ক্যান্সার রুখতে উপকারী। লো ক্যালরির এই সবজি হার্ট ভাল রাখতেও উপকারী। তিনি আরও বলেন, আমি দ্বিতীয় রারের মত ব্রকলি চাষ করেছি। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি দপ্তরের সহায়তায় বীজ সংগ্রহ করে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। বীজ পরে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মুল ক্ষেতে রোপন করা হয়। ৭৫ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে এতে ফুল আসে। মেধাবিকাশ, চোখের দৃষ্টি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন, রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি ব্রকলি অর্থনৈতিক লাভজনক ফসল এটি চাষ করার জন্য স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রথম বছর চাষ করে ভাল ফলন হওয়ায় এই বছর চাষের পরিধি আরও বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। এতে আনুমানিক ৩০হাজার টি ব্রকলির চারা রোপণ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ জানান, এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো বারি ব্রকলি-১ জাতের ব্রকলি চাষ শুরু করা হয়েছে। কৃষক সামসুল হকের পরিশ্রমে ব্রকলি চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি কৃষক সামসুর হককে দেখে অন্যকৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবে। পরীক্ষামূলক ব্রকলি চাষে মিলেছে ব্যাপক সাফল্য। সমসুলের চাষ দেখে কেউ যদি আগ্রহী হয়ে এ ধরনের উদ্যেগ নিতে চান তাহলে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি অফিস সব ধরনের কারিগরী সহযোগীতা ও পরামর্শ দেওয়া হবে।