ঢাকা ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে গোমতী নদীর সেতু অনিশ্চিত সওজ–পাউবোর দ্বন্দ্বে থমকে ৮৪ কোটির প্রকল্প

রায়হান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মুরাদনগর-ঢাকা সড়কের গোমতী নদীর ওপর বহুল প্রতীক্ষিত সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আপত্তির কারণে প্রায় ৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ স্থগিত হয়ে আছে। এতে মুরাদনগর–দাউদকান্দি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় প্যাকেজের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

সেতুর উচ্চতা নিয়ে সওজ ও পাউবোর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। পাউবো বলছে, নতুন সেতুটি বর্তমান বেইলি সেতুর চেয়ে অন্তত ২০ ফুট উঁচুতে করতে হবে, যাতে নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। অপরদিকে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, গোমতীর অন্য অংশে স্থাপিত সেতুগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ৩–৪ ফুট উঁচু করলেই যথেষ্ট।

এই মতবিরোধে সেতুর নকশা ও ডিজাইন অনুমোদন আটকে আছে, ফলে দরপত্র আহ্বানও বন্ধ। দুই সরকারি সংস্থার টানাপোড়েনে এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।

বর্তমানে গোমতী নদীর ওপর রয়েছে ১৯৮৮ সালে নির্মিত একটি নড়বড়ে বেইলি সেতু। প্রতিদিন শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করে। ভারী যান উঠলেই সেতু দুলে ওঠে, যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে একই সেতু দিয়ে চলতে হচ্ছে। সরকার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু দুই অফিসের ঝগড়ায় কাজ শুরু হচ্ছে না।

২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেক সভায় ৩৪৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ৩৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ, ৮টি পুরনো বেইলি ব্রিজের বদলে ৫টি আরসিসি গার্ডার সেতু এবং ৩টি কালভার্ট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রথম দুটি প্যাকেজে কাজ চললেও তৃতীয় প্যাকেজ পাউবোর অনুমোদন না পাওয়ায় স্থবির।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, মুরাদনগরে গোমতী নদীর ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে নদী পারাপারে স্থানীয় জনগণ নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে একটি স্থায়ী ও নিরাপদ সেতু নির্মাণ হলে মুরাদনগরের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন, বেড়ে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক সংযোগ।

সওজ কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, পাউবো যে উচ্চতা চাচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। সেই পরিমাণ উচ্চতায় ডিজাইন করা সম্ভব না।

অন্যদিকে পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, আমি এখানে এক বছর ধরে আছি, বিষয়টি আমার জানা নেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকার বরাদ্দ দিলেও দফতরগুলোর সমন্বয়হীনতা, গাফিলতি ও টালবাহানায় প্রকল্প বাস্তবায়ন আটকে গেছে। তাদের দাবি, দ্রুত সমাধান না হলে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাবে যা মুরাদনগরবাসীর জন্য বড় ক্ষতি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, এই সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসত। এখন সব থেমে আছে; প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।

জালেম সরকার আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল, আল্লাহ মুক্ত করেছেন

মুরাদনগরে গোমতী নদীর সেতু অনিশ্চিত সওজ–পাউবোর দ্বন্দ্বে থমকে ৮৪ কোটির প্রকল্প

আপডেট সময় ০৪:১২:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

রায়হান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মুরাদনগর-ঢাকা সড়কের গোমতী নদীর ওপর বহুল প্রতীক্ষিত সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনিশ্চয়তায় পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আপত্তির কারণে প্রায় ৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ স্থগিত হয়ে আছে। এতে মুরাদনগর–দাউদকান্দি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় প্যাকেজের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

সেতুর উচ্চতা নিয়ে সওজ ও পাউবোর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। পাউবো বলছে, নতুন সেতুটি বর্তমান বেইলি সেতুর চেয়ে অন্তত ২০ ফুট উঁচুতে করতে হবে, যাতে নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। অপরদিকে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, গোমতীর অন্য অংশে স্থাপিত সেতুগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে ৩–৪ ফুট উঁচু করলেই যথেষ্ট।

এই মতবিরোধে সেতুর নকশা ও ডিজাইন অনুমোদন আটকে আছে, ফলে দরপত্র আহ্বানও বন্ধ। দুই সরকারি সংস্থার টানাপোড়েনে এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।

বর্তমানে গোমতী নদীর ওপর রয়েছে ১৯৮৮ সালে নির্মিত একটি নড়বড়ে বেইলি সেতু। প্রতিদিন শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করে। ভারী যান উঠলেই সেতু দুলে ওঠে, যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে একই সেতু দিয়ে চলতে হচ্ছে। সরকার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু দুই অফিসের ঝগড়ায় কাজ শুরু হচ্ছে না।

২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেক সভায় ৩৪৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ৩৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ, ৮টি পুরনো বেইলি ব্রিজের বদলে ৫টি আরসিসি গার্ডার সেতু এবং ৩টি কালভার্ট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রথম দুটি প্যাকেজে কাজ চললেও তৃতীয় প্যাকেজ পাউবোর অনুমোদন না পাওয়ায় স্থবির।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান বলেন, মুরাদনগরে গোমতী নদীর ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে নদী পারাপারে স্থানীয় জনগণ নানামুখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে একটি স্থায়ী ও নিরাপদ সেতু নির্মাণ হলে মুরাদনগরের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন, বেড়ে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক সংযোগ।

সওজ কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, পাউবো যে উচ্চতা চাচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। সেই পরিমাণ উচ্চতায় ডিজাইন করা সম্ভব না।

অন্যদিকে পাউবো কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, আমি এখানে এক বছর ধরে আছি, বিষয়টি আমার জানা নেই।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকার বরাদ্দ দিলেও দফতরগুলোর সমন্বয়হীনতা, গাফিলতি ও টালবাহানায় প্রকল্প বাস্তবায়ন আটকে গেছে। তাদের দাবি, দ্রুত সমাধান না হলে বরাদ্দ অর্থ ফেরত যাবে যা মুরাদনগরবাসীর জন্য বড় ক্ষতি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, এই সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসত। এখন সব থেমে আছে; প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।