আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগরে নির্বাচনী সহিংসতা মামলায় শত-শত কর্মী সমর্থক নিয়ে পুলিশের গ্রেফতার এবং নির্যাতন আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৭০ ভোটে পরাজিত সাবেক চেয়ারম্যান। সদ্য সমাপ্ত ৬ষ্ট ধাপের ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ধামঘর ইউপি থেকে মাত্র ৭০ ভোটে পরাজিত হন সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। নির্বাচনের দিন পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এতে তার কর্মী সমর্থকরা সড়কে অবরোধ সৃস্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ দেড় হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার এবং নির্যাতন আতঙ্কে শত শত কর্মী সমর্থক এবং গ্রামবাসী নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুলিশের নির্যাতনে আহত ওই সাবেক চেয়ারম্যান।
শুক্রবার সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে গ্রামের অধিকাংশ বাড়ী পুরুষ শুন্য দেখা গেছে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই সাদা পোষাকধারী পুলিশ মনে করে গ্রামের লোকজন এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারী ৬ষ্ট ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোট চলাকালে উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার একটি ভোট কেন্দ্র থেকে জনপ্রিয় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের পুলিং এজেন্টদেরকে বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় খবর পেয়ে ওই প্রার্থী কেন্দ্রে গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মুরাদনগর থানার ওসি আবুল হাসিম সঙ্গীয় ফোর্স চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে আটক করে চরম মারধর করে। খবর পেয়ে প্রার্থীর সমর্থকরা পরমতলা এলাকায় সড়ক অবরোধ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের ব্যবহৃত গাড়ী ভাংচুর করা হয়। পরে কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে ওই প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণায় নৌকার প্রার্থীর সাথে মাত্র ৭০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয় আবুল কালাম আজাদ। এ ঘটনায় পুলিশের এমন কর্মকান্ডে এলাকায় চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে ওইদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এলাকার ১০জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা দেড় হাজার ব্যক্তিকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের কর্তব্যকাজে বাঁধাদান, হামলাসহ বেশ কিছু অভিযোগ উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়।
৭০ ভোটে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, নৌকার প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী, তাই নির্বাচনের শুরুতেই আমাকে সড়ে দাঁড়ানোর জন্য অনেক চাপ সৃস্টি করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার জন্যই ভোট শুরুর সাথে সাথে থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ আমাকে আটক করে সর্বত্রই খবর ছড়িয়ে দেয়, আমাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়, এতে আমার কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে, এতো ঘটনার পরেও মাত্র ৭০ ভোটের ব্যবধানে আমাকে পরাজিত করা হয়, এসকল ঘটনা গুলো ছিল পরিকল্পিত। আমার বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার পর মামলা দায়ের করে প্রতিদিনই পরমতলা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ওই গ্রামের শত শত বাসিন্দা গ্রেফতার এবং পুলিশী নির্যাতন আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি এ ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃস্টি আকর্ষন করছি
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি আবুল হাসিম বলেন, ৩১ জানুয়ারী নির্বাচন চলাকালে ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী আমার গায়ে হাত তুলেছে, তাই তাকে আটকের ঘন্টাখানেক পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তবে আটকের সময় আমরা বুঝতে পারিনি সে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী, তাকে আটকের পর আমাদের ৩টি গাড়ী ভাংচুরসহ ৫পুলিশ সদস্যকে আহত করা হয়েছে। আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সহিংসতায় জড়িতদের সনাক্ত করতেছি, ঘটনার পর মাত্র একদিন ওই গ্রামে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বাইরে কাউকে গ্রেফতার কিংবা হয়রানী করা হবে না।