নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়ার চাচাতো ভাই ওবায়দুল্লাহর সাথে সিএনজি চালকদের বাকবিতন্ডার জের ধরে হওয়া মামলায় উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষে জেলা দায়রা জজে জামিন আবেদন করে মুরাদনগর বিএনপি নেতা কর্মীরা। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। এ খবর শোনে হার্ট ষ্ট্রোক করে দৈনিক নয়া দিগন্তের মুরাদনগর উপজেলা প্রতিনিধি ও মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নাজিমুদ্দিনের মা হোসনেয়ারা বেগম (৪৫) ও দাদা সুরুজ মিয়া (৭০)।
সাংবাদিক ও ছাত্রদল নেতা নাজিমুদ্দিনের মা স্ট্রোক করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
তার মায়ের জানাজায় অংশ নিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করে তার পরিবার।বেলা ১২ টা থেকে জেলা প্রশাসক অফিসে অপেক্ষা করে নাজিমুদ্দিনের স্বজনরা। বিকেল ৩ টা বাজে প্যারোলে মুক্তি দিবেন না বলে জানান জেআরএম।
পরবর্তীতে নানান নাটকীয়তা শেষে বিকেল ৫ টায় প্যারোলে মুক্তি পান দৈনিক নয়া দিগন্তের মুরাদনগর উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নাজিমুদ্দিন।
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নিয়ে বুকভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন নাজিমুদ্দিন।
মায়ের জানাজায় অংশ নিতে যখন নাজিম উদ্দীন উপস্থিত হন, তখন তার কান্না, বুকফাটা আহাজারি, আর ভগ্ন হৃদয়ের চিৎকারে উপস্থিত সকলেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জানাজার ময়দানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নিস্তব্ধতা, আর অশ্রুজলে ভিজে যায় মুরাদনগরের আকাশ।
এমন আবেগঘন পরিবেশে শেষ বিদায় জানানো হয় মা’কে। আর সেই বিদায় পরিণত হয় এক হৃদয়ভাঙা দৃশ্যে। যেখানে একজন সন্তানের শেষ দেখা হয়ে ওঠে অশ্রু দিয়ে লেখা ইতিহাস। মুরাদনগরের আকাশ আজও যেন ভারী। চারদিকে শোকের ছায়া, নীরবতা আর একটাই প্রশ্ন, সন্তান যদি আর একটুখানি সময় পেতেন, মায়ের মুখখানি আরেকটু দেখতেন।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জানান, নাজিমের আটকের ঘটনায় হার্ট স্ট্রোক করেন তাঁর মা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনবরত কাঁদতেন আর ছেলের মুক্তির জন্য দোয়া করতেন। আজ সকালে তিনি মারা জান। মায়ের শেষ বিদায়ে এভাবে মিথ্যা মামলায় জেল থেকে এসে জানাজা দিতে হবে তা ভাবলেই চোখে পানি চলে আসে। নাজিমের ভেঙে পড়ার দৃশ্য দেখে আমাদের চোখেও পানি চলে আসে। এমন দৃশ্য কেউ কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
জানাজায় বক্তব্য রাখেন মুরাদনগরের সাবেক ৫ বারের এমপি ও মন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকে আমার স্নেহভাজন নাজিম উদ্দীনের মায়ের সংবাদ শুনে আমি এতটা ব্যতিত হয়েছি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করে নেন, তার জীবনের সকল গুনাহ যেন ক্ষমা করে দেন। আমরা বেশি বেশি দোয়া করব আল্লাহর কাছে, আল্লাহ আমাদের যেভাবে জালিমদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন, নব্য জালিমদের হাত থেকেও যেন সেভাবে রক্ষা করেন। হাইকোর্ট থেকে জামিন আনার পরেও জজকোর্ট জামিন দেয়নি। বিচারের কাজে এখনো যে অনিয়ম হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি। কারণ, আগের সকল বিচারকরাই এখনো রয়ে গেছেন। আল্লাহ যা চান তাই হয়। যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়, যারা অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম করে, তাদের হাত থেকে যেন আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেন। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত দেন, আর যদি হেদায়েত নসিব না হয়, তাহলে আল্লাহ যেন তাদের ব্যবস্থা করেন।
উল্লেখ্য, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও পুলিশের মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে উপজেলা ছাত্রদলের নেতা নাজিম উদ্দীনসহ ১৩ জন নেতাকর্মী কে।