মো: মোশাররফ হোসেন মনির:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে ৯০টি প্রতিষ্ঠনের ১৩ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রবেশপত্র বিতরণের সময় কেন্দ্র খরচের নামে প্রতিষ্ঠান ভেদে ২০০-৫০০ টাকা করে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আদায় করায় অভিযোগ উঠেছে। রহস্যজনক কারণে অর্থ আদায়ের বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে বলে অভিভাবকমহল এমন অভিযোগ তুলেছে স্থানী উপজেলা প্রশাসন ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোন প্রকার পদপে না নেওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভের তৈরী হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে। এর মধ্যে ৫৪টি স্কুল ও ৩৬টি মাদ্রাসা এবং পরীক্ষা কেন্দ্র ১৭টি। জেএসসির ১২টি কেন্দ্রে ১১ হাজার ৭৬জন, জেডিসি ৪টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৭জন ও এসএসসি ভোকেশনাল নবম শ্রেনির ১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২২৬জন পরীক্ষার্থীসহ মোট ১৩ হাজার ৩৭৭জন পরীক্ষা দিচ্ছে। জেএসসি কেন্দ্র গুলোর মধ্যে মুরাদনগর ডিআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থী ৫৬৮জন, বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৯৮জন, দারোরা দীনেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৭৪৮জন, বাঁশকাইট পিজে উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৩৭জন, শ্রীকাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯৪৭জন, চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯০২জন, কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪০জন, পীরকাশিমপুর আর এন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৯২জন, রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩২জন, ঘোড়ারশাল আব্দুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮১৪জন, বিষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৭৫জন, হায়দরাবাদ জাহানারা হক বালিকা উচ্চ বিদ্যায়লয়ে ৬২৪জন, জেডিসি কেন্দ্র গুলোর মধ্যে সোনাকান্দা দারুল হুদা কামিল মাদ্রাসায় ৪৪৩জন, শুশুন্ডা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় ৭৬৬জন, নবীয়াবাদ আব্দুল ওয়াদুদ ফাজিল মাদ্রাসায় ৪৬২জন, বাখরনগর হাসেমিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ৩৮৬জন ও এসএসসি ভোকেশনাল কেন্দ্রে ২২৬জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্র খরচের দোহাই দিয়ে আদায় করা হয়।
সরেজমিনে কমপক্ষে ১৫টি স্কুলের অভিভাক ও পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থ আদায়ে অভিযোক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগগুলো হলো, দারোরা ডিনেশ উচ্চ বিদ্যালয়, বাঁশকাইট পিজে উচ্চ বিদ্যালয়, রামচন্দ্রপুর আকব্বরের নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, পরমতলা শব্দরখান উচ্চ বিদ্যালয়, ধনীরামপুর ডি.এস.ওয়াই উচ্চ বিদ্যালয় গুলোতে ৫ শত টাকা, চাপিতলা অজিফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪’শ, মোচাগড়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়, কাজিয়াতল রহিম রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জাহাপুর কে.কে স্কুল এন্ড কলেজ, হাটাঁশ উচ্চ বিদ্যালয়, রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩শ’ ৫০, বাইড়া স্কুল এন্ড কলেজ ২৫০, যাত্রাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ২২০, নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয়, কামাল্লা ডি,আর,এস উচ্চ বিদ্যালয়, কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয় গুলোতে ২’শ, শুশুন্ড ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় ৩‘শ, রামচন্দ্রপুর, দিঘিরপার, খামারগ্রাম, আকবপুর, কুড়াখাল কুরুন্ডি, পেন্নই, দৌলতপুর এই ৬টি মাদ্রসার পরিক্ষার্থী থেকে ৪৫০ টাকা প্রবেশপত্র ফি নেয়া হয়েছে।
রামচন্দ্রপুর সোনা মিয়া মোল্লা দাখিল মাদ্রসার সুপার মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসার কেন্দ্র সোনাকান্দা মাদ্রসায়। এবার এখানে ৮টি মাদ্রাসার মোট ৪৪৩ জন ছাত্র পরীা দিচ্ছে। প্রতি বছরের নেয় এবারও পরীা শুরু হওয়ার আগে কেন্দ্র সচিব হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই ছাত্র প্রতি ৪৫০ টাকা করে কেন্দ্র খরচ নির্ধারণ করা হয়। এবং পরীা শুরুতেই সেই টাকা কেন্দ্র সচিবকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাঁশকাইট পি.জে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আব্দুল মতিন ৫শ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কেন্দ্র ফ্রী, বেঞ্চ তৈরী ও বেতনের টাকা মিলে এ টাকা নেওয়া হয়েছে।
মুরাদনগর ডি. আর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার স্কুল থেকে ১১২জন জেএসি পরিক্ষা দিচ্ছে। আমরা প্রবেশ পত্রের নামে একটি টাকাও নেইনি।
পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়, দারোরা দীনেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও আকবপুর ইয়াকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রবেশ পত্রের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা অস্বিকার করেন। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন প্রবেশ পত্র বাবদ বিদ্যালয়ে ৫০০টাকা দিতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে অন্তত বিশজন শিক্ষক বলেন, বেশ কয়েক বছর যাবৎ পরিক্ষার প্রবেশপত্র বিলি করার সময় পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। জেলা থেকে প্রশ্নপত্র আনাবাবদ ৫হাজার, বড় স্যারদের কেন্দ্র বিজিট সম্মানি ৮-১২ হাজার অন্যান্য খরচ ৫হাজার টাকা সব মিলিয়ে ১৮-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। শিক্ষকরা আরো বলেন, মধ্যমিক কর্মকর্তা শফিউল আলম তালুকার ২০১০ সালে এই উপজেলায় এসে ২০১৪ পর্যন্ত চাকুরি করেন। পরে অন্যত্র বদলি হলে আবার ২০১৭ সালে তদবির করে এই উপজেলায় আসেন। এসেই ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন তিনি।
এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫০ টাকা কেন্দ্র ফি বাবদ নিতে পারে,এর বেশি নেয়ার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যদি এটা কেউ করে থাকে তাহলে এর দায়ভার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। দির্ঘদিন এই উপজেলায় চাকুরী করে ফের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনসার্থে আমাকে সরকারী ভাবে এখানে বদলী করা হয়েছে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, সরকার কর্তৃক সম্মানী নির্ধারিত আছে। কোন বিদ্যালয় প্রবেশপত্রের নামে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকলে বিষয়টি আমার নলেজে নেই।
কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ বলেন, প্রবেশ পত্রের নামে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন নিয়ম নেই। যদি কোন প্রতিষ্ঠান টাকা নেয় তাহলে সে নিয়ম ভঙ্গ করেছে। এধরনের কোন অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।