মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপিতলা নিমাইজুড়ি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা আল কবিরের বিরুদ্ধে। বাঁধ নির্মানের ফলে চড়ম আকারে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমিতে সেচ কাজ। অধিকাংশ ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিচ্ছে ওই ক্ষমতাধর প্রভাবশালী মহলটি। এতে করে হুমকিতে পড়েঠে ঐ ইউনিয়নসহ আশে পাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্থানীয় সুশীল সমাজ ও কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ইটভাটার মালিক পক্ষ বলছে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এই বাঁধ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাস অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেনদ্রুত নদীটি খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, উপজেলার পূর্ব ঘোড়াশাল থেকে প্রবাহিত হওয়া নদীটি চাপিতলা হয়ে রামচন্দ্রপুর তিতাস নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এটি বুড়িনদীর একটি শাখা। যার নাম নিমাইজুড়ি নদী। এক সময় এ নদী দিয়ে যাত্রী ও মালবাহী শত শত নৌকা এবং ট্রলার চলাচল করতো। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা আল কবিরের নেতৃত্বে একটি মাটিখেকোর সিন্ডিকেট নদীর মাঝে বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধের উপর দিয়ে প্রতিদিন ৮/১০টি ট্রাক্টর কৃষি জমির মাটি কেটে মা-বাবা ব্রিকসের মাটি জোগান দিচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাপিতলা-পুস্কুরিনীরপাড় গ্রামের মধ্যস্থলে মা-বাবা নামক একটি ইটভাটা রয়েছে। সেই ইটভাটার মাটির জোগান দিতে নদীটির মাঝখান দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে কেটে নিচ্ছেন নাঙ্গলিয়া বিলের শত শত হেক্টর কৃষি জমি। এতো বড় নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক গতি পথ বন্ধ করে দেওয়ায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানায়, কৃষি কাজই আমাদের প্রধান পেশা। এ কাজ করেই আমরা জীবীকা নির্বাহ করি। কিন্তু ভূমিখেকো ইটভাটার মালিকরা আমাদের এ রুটি রুজিতে আঘাত করছে। এরা যে ভাবে কৃষি জমি নষ্ট করছে, তাতে কিছুদিন পর আমরা আর জমি খোঁজে পাবো না। প্রশাসন যদি এখনই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে আমাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক ও চাপিতলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা আল কবির ফোনে কথা বলতে অনীহা জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে সামনা-সামনি কথা বলতে চান এবং পরে চায়ের দাওয়াত দিয়ে মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।
ইটভাটা অপর মালিক সবুর সরকার বলেন, প্রথম অবস্থায় আমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। পরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই বাঁধ নির্মাণ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, এ ভাবে কৃষি জমি কেটে বিনষ্ট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। ফসলি জমি রক্ষার্থে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। সম্মিলিত ভাবে সকলে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে। অন্যথায় আগামী ১৫/২০ বছর পর কৃষি কাজ করার জন্য অনেক মাঠে জমি পাওয়া যাবে না।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি দিয়ে থাকে তা হলে তারা অনুমতিপত্র দেখাক! আমি লোক পাঠিয়েছি। খুব দ্রুত নদীটি খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।