মো. হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নামের মিল থাকায় অপরাধ না করেও বিনাদোষে জেলের গ্লানী টানছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোচাগড়া গ্রামের রজব আলীর ছেলে অসহায় কৃষক ইউনুস মিয়া (৫৩)। গত ৭ নবেম্বর রাতে পুলিশ নিজ বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতারপূর্বক পরদিন কারাগারে প্রেরণ করে। বিনাতদন্তে তাকে গ্রেফতার করায় জনমনে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানা যায়, ৩৯৫/৪১২ ধারার অপরাধে ২০০০ সালের ১৭ জুলাই চট্টগ্রামে বসবাসকারী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের (বাদশা গাজী ফকির বাড়ীর) রজব আলীর ছেলে ইউনুস মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই ঘটনায় ঐ দিনই চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয় (যার নং ২৭)। ওই মামলায় দীর্ঘ আড়াই বছর হাজতবাস শেষে জামিন পেয়ে পলাতক রয়েছে ইউনুস মিয়া। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশেষ দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে (যার নং এস.টি ৮২৫/০৩)। আদালতের বিচারক গত ১০ আগষ্ট ইউনুস মিয়ার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশ মতে গ্রেফতারী পরোয়ানাটি চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার ও কুমিল্লা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে কুমিল্লার ৮নং আমলী আদালত হয়ে মুরাদনগর থানায় আসে। থানার এসআই জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত ৭ নবেম্বর রাতে মোচাগড়া গ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের রজব আলীর ছেলে নির্দোষ ইউনুস মিয়াকে (৫৩) যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন ৮ নবেম্বর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে দেয়। গ্রেফতারের পর থেকে ইউনুস মিয়ার পরিবার-পরিজন অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধর্না দিয়েও তাকে জেল থেকে মুক্ত করার কোন কুল-কিনারা খোঁজে পাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বিষয়টির ব্যাপারে মুরাদনগর থানার এসআই জালাল উদ্দিন জানান, ইউনুস মিয়াকে গ্রেফতারের পিছনে পুলিশের কোন ভুল নেই। মামলার এজহারে মোচাগড়া গ্রামের বাদশা গাজী ফকির বাড়ী উল্লেখ থাকলেও গ্রেফতারী পরোয়ানায় শুধু মোচাগড়া লেখা ছিল। তার নাম, পিতার নাম ও গ্রামের নাম মিল থাকায় আদালতের নির্দেশে তাকে গ্রেফতারপূর্বক জেলখানায় প্রেরণ করি।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, একজন নিরপরাধ অসহায় ব্যক্তি বিনাদোষে জেল খাটার বিষয়টি খুবই দু:খজনক। ওই পরিবারের পক্ষে তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। যদি কোন আইন সহায়তাকারী সংস্থা উদ্যোগ নেয় তাহলে তাকে সহসাই মুক্ত করা সম্ভব। মোচাগড়া গ্রামের বাদশা গাজী ফকির বাড়ীর রজব আলীর ছেলে ইউনুস মিয়া বাড়ি-ঘর বিক্রি করে স্বপরিবারে চট্টগ্রামে চলে গেছে বলে শুনেছি। দীর্ঘ ১৮/২০ বছর যাবত তাকে এলাকায় আসতে দেখা যায়না।
কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৪নং বিচার আদালতের এ.পি.পি এডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সাল জানান, প্রকৃত আসামী ইউনুস মিয়া ও পুলিশ কর্তৃক ধৃত ইউনুস মিয়া উভয়ের ভোটার তালিকা অথবা ইউপি চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যের প্রত্যায়নপত্র আদালতে উপস্থাপন করে বিজ্ঞ বিচারককে বুঝাঁতে পারলেই ধৃত নিরপরাধ ইউনুস মিয়া উক্ত মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেতে পারে।