মাহবুব আলম আরিফ, বিশেষ প্রতিনিধি:
কোনো প্রকার পরিশ্রম না করে, কোনো কাজ না করে যদি অল্পদিনের ব্যবধানে টাকা দ্বিগুণ করা যায়, তবে কে না আগ্রহী হবে! সাধারণ মানুষের এই আগ্রহকে পুঁজি করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে চলেছে একটি চক্র। বিভিন্ন হায় হায় কোম্পানি অতীতেও মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তবে এবার নতুন মোড়কে এসেছে পুরনো সেই প্রতারকচক্র, যারা ‘অনলাইন ভিত্তিক মাই ন্যাশনাল আইটি’ নামে কার্যক্রম চালাচ্ছিল কুমিল্লার মুরাদনগরে।
গত প্রায় ছয় মাস ধরে মুরাদনগর উপজেলা সদরে চলছিল ‘মাই ন্যাশনাল আইটি’ নামের হায় হায় কোম্পানির প্রতারণা। এই সময়ের মধ্যে চক্রের দুই সদস্য মুরাদনগর উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মহসিন হায়দার ও আলউদ্দিন হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। অবশেষে সেই প্রতারকচক্রের সাথে জড়িত ‘মাই ন্যাশনাল আইটি ও এক্টিভ বাজার’ এর মূলহোতা শ্রমিকলীগের সভাপতি মহসিন হায়দার ও সহযোগী আলাউদ্দিন ধরা পড়েছেন মুরাদনগর থানা পুলিশের হাতে।
তবে প্রতারকচক্রের মূলহোতা মহসিন হায়দারের দাবি এ পেশায় তারা সহযোগী মাত্র জেলা পর্যায় রয়েছে তাদের ‘বস’ যারা সবসময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রতারকচক্রের সদস্যরা হলেন, উপজেলা সদরের উত্তর পাড়ার শানু মোল্লার ছেলে মহসিন হায়দার (৪০) ও পার্শবর্তী দেবিদ্বার উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫)।
জানা যায়, গত ছয় মাস আগে ‘মাই ন্যাশনাল আইটি পরবর্তীতে এক্টিভ বাজার ২৪’ নামে মুরাদনগর উপজেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের পেছনে হুমায়ুন ভিলার ৩য় তলায় অফিস কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানে বসে বায়ো ফ্লক মাছের প্রজেক্ট, ক্যাটারিং প্রজেক্ট, অনলাইন টিভি চ্যানেল, ন্যাশনাল আইটি সেক্টর, ন্যাশনাল ই-কমার্সসহ ঢাকা এবং গাজীপুরে ৩৬শ বিঘার উপর রিসোর্টের নামে শেয়ার বিক্রির করে।
প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মহসিন হায়দার এই অফিস ভাড়া নেন। হুমায়ুন ভিলার কর্তৃপক্ষও এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভূক্তভোগী উপজেলার নেয়ামতপুর গ্রামের আবদুল হকের ছেলে আবু বক্কর (২৩) জানান, মহসিন হায়দার তার কোম্পানীর একটি একাউন্ট আবু বক্কর কিং নামে খোলে দেয়। পরে সেই অনলাইন একাউন্টে ডলার দিয়ে তার কাছ থেকে নেয়া হয় ২ লাখ টাকা। প্রথম মাসে তাকে শেয়ারের লভাংশ দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা। পরের মাসেই মাত্র ৬শ’ দিনে টাকা দ্বিগুণ হওয়ার লোভে সে এক সাথে ১৫ লাখ টাকা জমা দেয়।
এরই মধ্যে আবু বক্করের মতো উপজেলার নবীপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে সাগর মিয়া ও একই গ্রামের সামসুল হকের ছেলে কিবরিয়া, রহিমপুর গ্রামের মতিন সরকারের ছেলে সোহাগ মিয়া, নোয়াগাঁও গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মাহবুব সরকার, নেয়ামতপুর গ্রামের মনিরুল হকের ছেলে মোবাশ্বির ভূইয়া, ভূবনঘর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে বেলাল হোসেন ও আবু হানিফ, গকুলনগর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জুনায়েদ, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পুমকারা গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে আল আমিনের কাছ থেকে পর্যাক্রমে প্রায় ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩শ সদস্যর কাছ থেকে বিশ্বাস অর্জন করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাদেকুর রহমান জানান, ৬শ’ দিনে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে ‘মাই ন্যাশনাল আইটি ও এক্টিভ বাজার’ এর প্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছিল। তাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। কয়েকজন প্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় দেড় মাস চেষ্টার পর শনিবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী আবু বক্কর বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। রবিবার সকালে চক্রের দুই সদস্য মহসিন হায়দার ও আলাউদ্দিনকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।