মো: আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত পুলিশ। এই সুযোগে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার গ্রাম, পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে প্রকাশ্যে চলছে জমজমাট মাদক বেচাকেনা । মাদক বিক্রেতারা জানায়, ঈদকে সামনে রেখে পুলিশ এখন ব্যস্ত। দু’সপ্তাহ আগে ব্যস্ত ছিল জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে। পুলিশের এই ব্যস্ততার সুযোগে মাদক বেচাকেনা বেড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় নতুন করে স্পট বসানো হয়েছে। কোথাও বন্ধ স্পট নতুন করে চালু হয়েছে। গ্রামগুলোতে টাকা বিকাশে পরিশোধের পর মাদক বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় হোম ডেলিভারির মাধ্যমে। পুলিশ মাদকের বড় চালানের দিকে নজর দিলেও এসব খুচরা ব্যবসায়ীদের বিষয়ে নজর দিচ্ছে না। ফলে ঘরে বসে নিশ্চিন্তে মাদক পাচ্ছে আসক্তরা। যার কারণ স্কুল কলেজগামী কিশোর তরুনদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার ও পাচার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতেই অভিভাবকমহল চরম উদ্ধেগ ও উৎকন্ঠায় পড়েছেন। এই মরণনেশার ছোবল থেকে কোমলমতি সন্তানদের বাঁচাতে আইনশৃংখলা বাহীনিকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি গ্রামে মাদকের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দিনে রাতে অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হোরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য। এ কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছে থানা পুলিশের কতিপয় সোর্স, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, ছাত্রনেতাসহ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা। কোম্পানীগঞ্জ বাজারের এক মাদক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করে জানায়, পুলিশ ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় ও তাদেরকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা।
মুরাদনগরের এক বাসিন্দা বলেন, এই এলাকায় থানার সোর্সরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। তারাই টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। আবার কেউ মাদক বিক্রিতে বাধা দিলে সোর্সরা তাদেরকে কৌশলে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামচন্দ্রপুর বাজারে ইয়াবার সবচেয়ে বড় পাইকারি বিক্রেতা হচ্ছেন সরকারবাড়ির পল্টু সরকারের বড় ছেলে সায়েম। তিনি ইয়াবা সায়েম হিসেবে পরিচিত। তিনি মুরাদনগর, হোমনা, বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর ও দেবীদ্বার থানার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি বিক্রি করেন। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র আরো জানায়, মুরাদনগর সদরে সেফা হাসপাতালের আশপাশে ও উত্তরপাড়ায় ইয়াবা বিক্রি করছে কিছু ভাসমান ব্যবসায়ী। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধের পর ইয়াবা বাসায় পৌঁছে দেয় তারা। এ ছাড়া উপজেলার নবীপুর পূর্ব ও পশ্চিম, বাঙ্গরা, মেটংঘর, আন্দিকোর্ট, দারোরা, শ্রীকাইল, জাহাপুর, ছালিয়াকান্দি, পাহাড়পুর, পূর্বধইর পূর্ব ও পশ্চিম, আকবপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন গুলোতেও সহজে মিলছে ইয়াবা।
তিনটি স্থানে প্রকাশে চলে মদ বিক্রি : উপজেলা সদরে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বাংলা মদ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। সদরসহ উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নে মদ যায় এই স্থান থেকে।
অন্যদিকে রামচন্দ্রপুর বাজারে রয়েছে দু’টি স্থান একটি হলো ছাগল বাজারের পাশে সুকলার বাড়ী উপরটি জাপানি বাড়ি নামে পরিচিত। এ দুই স্পট থেকে পার্শ্ববর্তী হোমনা, বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলায় মদকের চালান দেওয়া হয়। এ ছাড়া নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ বাজার ও শিবানীপুর গ্রামে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্পট। এখান থেকে মুরাদনগরের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলসহ দেবীদ্বার থানা এলাকা থেকে আসে মাদকসেবীরা। সুযোগ বুঝে বহন করে নিয়েও যাচ্ছে তারা।
৩৫ বছর ধরে গাঁজা ব্যবসা করে তৈরী হলো মাদক স¤্রাজ্ঞী : মুরাদনগর সদর থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে রামচন্দ্রপুর রোডের পাশে আফিলি নামে এক নারী মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে গাঁজা বিক্রি করেন। এর মধ্যে তিনি প্রায় ১৮ বার জেলে গেলেও ব্যবসা ছাড়েননি। তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবারের কেউ না কেউ হাল ধরে রাখেন।
প্রকাশ্যে ফেনসিডিল বিক্রি : সদর থেকে পাঁচ টাকা অটোরিকশা ভাড়া লাগে নবীপুর বাজারে যেতে। কোম্পানীগঞ্জ সড়কের পাশে ওই বাজারের পেছনে শাহিন নামের এক মাদক ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে ফেনসিডিল বিক্রি করেন। প্রতিদিন বিকেলে দলে দলে মোটরসাইকেলযোগে এখান থেকে পাশের উপজেলা হোমনা ও দেবীদ্বারের মাদকসেবীরা চলে আসে। এখানকার মাদকসেবীরা শাহিনকে ডাক্তার নামে ডাকে। তিনি একাধিকবার ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও ছাড়া পেয়ে আবার চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পেছনে একটি স্পট আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, কোম্পনীগঞ্জ বাজার ও আশপাশ এলাকায়র বিভিন্ন স্থানে ১৩০ থেকে ১৪০ জন কারবারি মাদক বিক্রি করে।
তবে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে কোনো আপস নেই। আমি এ থানায় আসার পর বেশ কয়েকটি মাদকের ছোট-বড় চালান আটক করেছি। কয়েক মাস আগে ট্রাকভর্তি গাঁজা এবং মাইক্রোবাসভর্তি ফেনসিডিল আটক করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযান অব্যাহত আছে এবং প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।