ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি

মাহবুব আলম আরিফ:

কুলসুম আক্তার কাকলী পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবা কবির হোসেন একজন অটোরিক্সা চালক, দুই কন্যা সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হয় তার। কুলসুমের সহপাঠীদের ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক শরিফার নির্দেশে কেনা হয়ে গেছে নিষিদ্ধ ‘পপি’ গাইড বই। বাবা কবির হোসেন অটোরিক্সা থেকে যা উপার্যন করেন সংসার চালিয়ে ৯শত টাকা মূল্যের ‘পপি’ গাইড বই মেয়েকে কিনে দেয়া তার কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না! এদিকে মেয়েকে সু-শিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষিত দেখতে চান বাবা, কি আর করার অবশেষে মেয়েকে কথা দিয়েছে ঋণ কর্জ করে হলেও কিছুদিনের মধ্যে তাকে কিনে দেয়া হবে স্বপ্নের সেই ‘পপি’ গাইড বই। এতো গেলো কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৬৩নং নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।

একই চিত্র উপজেলার ধামঘর পূর্ব, রাণীমুহুরী, সুবিলারচর, বোড়ারচর, নেয়ামতকান্দি, জাহাপুর, ধনীরামপুর, ১০১নং রহিমপুর, মুরাদনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার ২০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের যাঁতাকলে, ঝড়ে পরছে অনেক দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক আগেই প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে। তার পরও কুমিল্লর মুরাদনগর উপজেলার বাজারগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ সেই নোট ও গাইড বই। তবে দোকানীদের দাবী শিক্ষকরা যদি গাইড বইয়ে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করে তাহলে আমরা চাইলেও গাইড বই বিক্রি করতে পারবো না।

বরং নোট ও গাইড প্রকাশনী সংস্থাগুলোও বিদ্যালয় বা শিক্ষকদের নানা রকম সুবিধা দিয়ে গাইড বইয়ের চাহিদা ও দাম দুটোই বৃদ্ধি করে দিয়েছে। সুবিধা দেয়ার দৌড়ে যারা এগিয়ে আছে তাদের গাইড বইয়ের দাম বেশি হলেও বাজারে সেই বইয়ের চাহিদাই অনেক বেশি। যা ‘পপি’ একাই ৮০% বাজার দখল করে রেখেছে।

ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোট ও গাইড ব্যবসা বহু বছর ধরে চলে এলেও বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতির দোহাই দিয়ে তা আরও বেড়ে গেছে। এই পদ্ধতিতে পাঠদানে শিক্ষকেরা যথেষ্ট দক্ষ নন বলে শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইডের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা সহ অন্যান্য বিদ্যালয় প্রধানরা বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সবসময় গাইড বইয়ে নিরুৎসাহিত করি। অনেক সময় তারা নিজেদের প্রয়োজনে তা কিনে থাকতে পারে। আমরা সবসময় গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে।

মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আকতার জানান, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আর গাইড বইতো এখন আর কাজেও লাগেনা কারণ মুখস্থবিদ্যার দিন শেষ। যদি কোন শিক্ষককে এ ধরনের কাজে জড়িত পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন ভূঞা জনী জানান, নিষিদ্ধ নোট ও গাইডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুল মান্নান মুঠোফোনে বলেন, আমাদের প্রাইমারিতে কোন গাইড বই এলাউড না। শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ে উৎসাহিত করা সম্পুর্ণভাবে এটি একটি অনৈতিক কাজ যা মোটেও কাম্য নয়। যদি কারো বিরুদ্ধে সু-নির্দিষ্ট প্রমান পাওয়া যায় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

মুরাদনগরে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি

আপডেট সময় ০৫:৪২:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মাহবুব আলম আরিফ:

কুলসুম আক্তার কাকলী পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবা কবির হোসেন একজন অটোরিক্সা চালক, দুই কন্যা সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমসিম খেতে হয় তার। কুলসুমের সহপাঠীদের ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক শরিফার নির্দেশে কেনা হয়ে গেছে নিষিদ্ধ ‘পপি’ গাইড বই। বাবা কবির হোসেন অটোরিক্সা থেকে যা উপার্যন করেন সংসার চালিয়ে ৯শত টাকা মূল্যের ‘পপি’ গাইড বই মেয়েকে কিনে দেয়া তার কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না! এদিকে মেয়েকে সু-শিক্ষায় শিক্ষায় শিক্ষিত দেখতে চান বাবা, কি আর করার অবশেষে মেয়েকে কথা দিয়েছে ঋণ কর্জ করে হলেও কিছুদিনের মধ্যে তাকে কিনে দেয়া হবে স্বপ্নের সেই ‘পপি’ গাইড বই। এতো গেলো কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৬৩নং নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা।

একই চিত্র উপজেলার ধামঘর পূর্ব, রাণীমুহুরী, সুবিলারচর, বোড়ারচর, নেয়ামতকান্দি, জাহাপুর, ধনীরামপুর, ১০১নং রহিমপুর, মুরাদনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার ২০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র।

সরেজমিনে গিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের যাঁতাকলে, ঝড়ে পরছে অনেক দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক আগেই প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করেছে। তার পরও কুমিল্লর মুরাদনগর উপজেলার বাজারগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ সেই নোট ও গাইড বই। তবে দোকানীদের দাবী শিক্ষকরা যদি গাইড বইয়ে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করে তাহলে আমরা চাইলেও গাইড বই বিক্রি করতে পারবো না।

বরং নোট ও গাইড প্রকাশনী সংস্থাগুলোও বিদ্যালয় বা শিক্ষকদের নানা রকম সুবিধা দিয়ে গাইড বইয়ের চাহিদা ও দাম দুটোই বৃদ্ধি করে দিয়েছে। সুবিধা দেয়ার দৌড়ে যারা এগিয়ে আছে তাদের গাইড বইয়ের দাম বেশি হলেও বাজারে সেই বইয়ের চাহিদাই অনেক বেশি। যা ‘পপি’ একাই ৮০% বাজার দখল করে রেখেছে।

ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোট ও গাইড ব্যবসা বহু বছর ধরে চলে এলেও বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতির দোহাই দিয়ে তা আরও বেড়ে গেছে। এই পদ্ধতিতে পাঠদানে শিক্ষকেরা যথেষ্ট দক্ষ নন বলে শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইডের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা সহ অন্যান্য বিদ্যালয় প্রধানরা বলছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সবসময় গাইড বইয়ে নিরুৎসাহিত করি। অনেক সময় তারা নিজেদের প্রয়োজনে তা কিনে থাকতে পারে। আমরা সবসময় গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে।

মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফওজিয়া আকতার জানান, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আর গাইড বইতো এখন আর কাজেও লাগেনা কারণ মুখস্থবিদ্যার দিন শেষ। যদি কোন শিক্ষককে এ ধরনের কাজে জড়িত পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন ভূঞা জনী জানান, নিষিদ্ধ নোট ও গাইডের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুল মান্নান মুঠোফোনে বলেন, আমাদের প্রাইমারিতে কোন গাইড বই এলাউড না। শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ে উৎসাহিত করা সম্পুর্ণভাবে এটি একটি অনৈতিক কাজ যা মোটেও কাম্য নয়। যদি কারো বিরুদ্ধে সু-নির্দিষ্ট প্রমান পাওয়া যায় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।