মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের বল্লভদী গ্রামে ১৯২ নং বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়েতের কোন প্রকার সড়ক নির্মিত হয়নি। এছাড়াও বিদ্যালয়টির চারদিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরী, বৈদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি না থাকায় অমানবিক ভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টি নানান সমস্যায় জর্রজরিত হলেও দেখার যেন কেহ নেই!
জানা যায়, বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে রেজিস্টার স্কুল হিসেবে রানিমুহুরী-বড়িইয়াকুড়ি সড়কের পাশে স্থাপিত হয়। ২০১২ সালে স্কুলটিকে জাতীয়করন করা হয়। বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পরলে ২০১৭ সালে পাশের বিলের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচী (পিইডিপি-৩) এর মাধ্যমে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট আধুনি একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রানিমুহুরী-বড়িইয়াকুড়ি সড়কটির পাশে প্রায় ২০ গজ দূরত্বে বিলের মধ্যে বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ করে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু স্কুলটিতে যাতায়াতের জন্য কোনো রাস্তা নেই। বিদ্যালয়টির চারিদিকে ফসলি জমি, একটু বৃষ্টিতেই স্কুল চত্বরে পানি জমে থাকে। বিশুদ্ধ পানির জন্য সাবমারসিবল পাম্প বসানো হলেও বিদ্যালয়টি বিলের মধ্যে হওয়ায় সেই পাম্প ও পানির কাজে ব্যবহরিত পাইপ চুরি হয়ে গেছে। বিদ্যুতের কারনে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় শিক্ষা থেকে। বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্টরা বৈদ্যুৎ খুটি ব্যাবস্থা করেও জমির মালিকদের আপত্তির কারনে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেনি বিদ্যালয়টি। সরকার সবকয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রজেক্টরভিক্তিক) মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সকল বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু নতুন এ তথ্য প্রযুক্তির আওতায় ক্লাশ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও পাচ্ছেনা এই শিক্ষা। তাতে করে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মান থেকে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এসব নানান সমস্যায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কাযক্রম। এতে করে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমতা বস্থায় আসে পাশের গ্রাম গুলোতে শিক্ষার হার দিন দিন কমে যাওয়ার অশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেমনি ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম।
বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, “স্যার একবার মনে হয় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ কইরা দেই। এ ছারা আর কি করমু বলেন গরমের সময় রৈদের (রোদের) তাপে শরীর এত ঘামে যে বই, খাতা যা ধরি সব ভিজে যায়। আর শীত কালে একটু বেশি কুয়াশা পরলে ক্লাস রুম এত অন্ধকার হয়, যে বইয়ের পড়া বুঝা খুব দায়”।
বল্লভদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালমা আক্তার বলেন, স্কুলটির প্রধান সমস্যা সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা। আমরা এখানে মানবত ভাবে জীবন কাটাচ্ছি। বর্ষাকালে বিজা কাপড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হয়। সড়কটি নির্মান হলে ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া যাবে। বিষয়টি একাদিক বার উর্ধতন কৃতপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজিয়া খানম জানান, প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে আমাদের অবহিত করেছে। সড়ক ও বিদ্যুৎতের বিষয়টি স্কুলো প্রধান শিক্ষ ও স্কুল ব্যবস্থানা পরিচালনা পরষদ অনেক বার স্থানীয় ভাবে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। গত উপজেলা মাসিক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এমপি মহোদয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষটিকে সমাধানে চেষ্টা করবেন বলে আমাদেরকে অশ^স্ত করেছেন।
এ বিষযে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, বিষটির ব্যাপারে খোজঁখবর নিয়ে বিস্তারিত বলতে হবে। যদি সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, গত ৫ বছরে সড়ক নির্মান না হওয়ার ও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অচিরেই স্কুলটি পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।