ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে বেড়ইে চলছে ‘আত্মহত্যা’র প্রবনতা

আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কোন না কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে অহরহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

থানা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে জানা যায় গত দুই বছরে এই উপজেলায় ৬২০ জন আত্মহত্যা করে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৪১৭জন কীটনাশক ঔষধ খেয়ে এবং বাকি ২০৩ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যা অভিভাবকদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে একাদিক অভিভাবক আর যুবক-যুবতীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অল্প বয়সে মোবাইলে ছেলে-মেয়েরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। তারা আবেগী আলাপ আলোচনা করে। বাবা-মা পড়াশুনায় উৎসাহিত করলেও তা তাদের ভাল লাগে না। ফলে তারা পালিয়ে বিয়ে করছে। বিভিন্ন সময় প্রতারণার  শিকার হয়ে আবার অনেকে বাবা-মায়ের শাসন বা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বড়দের ক্ষেত্রে আত্ম-হত্যার সাথে নির্যাতন, নেশা ও পারিবারিক এবং দাম্পত্য কলহ জড়িত। আর তারা হাতের কাছে পাড়া বা মহল্লার মুদির দোকান থেকে খুব সহজে কীটনাশক কিনে খেয়ে আত্মহত্যা করছে। এছাড়াও রশি এবং কাপড়কেও বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পন্থা হিসেবে।

আইনীবিধি মোতাবেক, উপজেলা কৃষি অফিসের লাইন্সেস ব্যাতিত কেউ কীটনশাক ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, যে ব্যবসায়ী কীটনশাক ঔষধ বিক্রি করবে সে দোকানে অন্যকোন মালামাল রাখতে পারবে না। যার কাছে কীটনশাক বিক্রি করবে সে প্রাপ্ত বয়স্ক ও পরিচিত হতে হবে। অপরিচিত হলে তার নাম ঠিকানা লিখে রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এই উপজেলার চিত্র ভিন্ন। পাড়া মহল্লার মুদি দোকান গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ঔষধ। ফলে সহসাই হাতের কাছে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যের এই বিষ পেয়ে সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও আত্মহত্যার প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলছে এই উপজেলার গ্রামগুলোতে।

উপজেলার সারবীজ ব্যবসায়ী প্রদীপ বাবু বলেন, কর্তৃপক্ষ যদি নিয়মিত মনিটরিং করে এবং সভা সেমিনার বা উঠান বৈঠক তরে গ্রাম এলাকার মুদিদোকান বা ফার্মেসি ব্যবসায়ীদেরকে এই ধরণের বিষ বিক্রি থেকে বিরত থাকতে কঠোর নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আল-মামুন রাসেল বলেন,এই উপজেলায় ১৩জন পাইকারী আর ২১৩জন  খুচরা কীটশনাক ঔষধ বিক্রেতা আছেন। প্রত্যেকেই আইন মেনে ব্যবসা করছে কিনা সে দিকে আমাদের কঠোর নজর দারি আছে। তাছাড়াও আমাদের ৬৬টি ব্লকে একাশি হাজার নয়শ একাত্তরটি কৃষি পরিবার আছে প্রত্যেকেই শস্য সংরক্ষনের জন্য বাসায় এ্যান্টি রেড স্থানীয় ভাবে যেটাকে কেরির বড়ি বলে সেটা বাড়িতে রাখে। আমরা এই কেরির বড়ির পরিবর্তে শস্য সংরক্ষনের জন্য নিমপাতা বা নিশিন্ধা পাতা শুকিয়ে গুরো করে প্রতি ৫০ কেজি চাউলের মধ্যে একশ গ্রাম পাতার গুরো দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেরির বড়ি ব্যবহারের প্রচলন কমে গেলে আত্মহত্যার প্রচলন অনেকাংেশ কমে আসবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম খসরু বলেন, ‘‘আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট দেয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনের সকল কর্মকান্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ, দুর্বল মন

মানসিকতা,সৎ সঙ্গের অভাব,পারিবারিক পরিবেশ ও পিতামাতার উদাসিনতার জন্য এই ঘটনা ঘটছে।” আর একটা লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে যারা বিষপানে আত্ম-হত্যা করেছেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেরির বড়ি বেছে নিচ্ছেন, কারণ তা সহজ লভ্য এবং গ্রামে অধিকাংশ বাড়িতে পাওয়া যায়। তাই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে যে কোন বিষয়ে সহনশীলতার মাধ্যমে কৌশলে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

মুরাদনগরে বেড়ইে চলছে ‘আত্মহত্যা’র প্রবনতা

আপডেট সময় ০৩:১৫:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কোন না কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে অহরহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

থানা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে জানা যায় গত দুই বছরে এই উপজেলায় ৬২০ জন আত্মহত্যা করে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৪১৭জন কীটনাশক ঔষধ খেয়ে এবং বাকি ২০৩ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যা অভিভাবকদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে একাদিক অভিভাবক আর যুবক-যুবতীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অল্প বয়সে মোবাইলে ছেলে-মেয়েরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। তারা আবেগী আলাপ আলোচনা করে। বাবা-মা পড়াশুনায় উৎসাহিত করলেও তা তাদের ভাল লাগে না। ফলে তারা পালিয়ে বিয়ে করছে। বিভিন্ন সময় প্রতারণার  শিকার হয়ে আবার অনেকে বাবা-মায়ের শাসন বা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বড়দের ক্ষেত্রে আত্ম-হত্যার সাথে নির্যাতন, নেশা ও পারিবারিক এবং দাম্পত্য কলহ জড়িত। আর তারা হাতের কাছে পাড়া বা মহল্লার মুদির দোকান থেকে খুব সহজে কীটনাশক কিনে খেয়ে আত্মহত্যা করছে। এছাড়াও রশি এবং কাপড়কেও বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পন্থা হিসেবে।

আইনীবিধি মোতাবেক, উপজেলা কৃষি অফিসের লাইন্সেস ব্যাতিত কেউ কীটনশাক ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, যে ব্যবসায়ী কীটনশাক ঔষধ বিক্রি করবে সে দোকানে অন্যকোন মালামাল রাখতে পারবে না। যার কাছে কীটনশাক বিক্রি করবে সে প্রাপ্ত বয়স্ক ও পরিচিত হতে হবে। অপরিচিত হলে তার নাম ঠিকানা লিখে রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এই উপজেলার চিত্র ভিন্ন। পাড়া মহল্লার মুদি দোকান গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ঔষধ। ফলে সহসাই হাতের কাছে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যের এই বিষ পেয়ে সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও আত্মহত্যার প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলছে এই উপজেলার গ্রামগুলোতে।

উপজেলার সারবীজ ব্যবসায়ী প্রদীপ বাবু বলেন, কর্তৃপক্ষ যদি নিয়মিত মনিটরিং করে এবং সভা সেমিনার বা উঠান বৈঠক তরে গ্রাম এলাকার মুদিদোকান বা ফার্মেসি ব্যবসায়ীদেরকে এই ধরণের বিষ বিক্রি থেকে বিরত থাকতে কঠোর নিষেদ্ধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকাংশে কমে আসবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আল-মামুন রাসেল বলেন,এই উপজেলায় ১৩জন পাইকারী আর ২১৩জন  খুচরা কীটশনাক ঔষধ বিক্রেতা আছেন। প্রত্যেকেই আইন মেনে ব্যবসা করছে কিনা সে দিকে আমাদের কঠোর নজর দারি আছে। তাছাড়াও আমাদের ৬৬টি ব্লকে একাশি হাজার নয়শ একাত্তরটি কৃষি পরিবার আছে প্রত্যেকেই শস্য সংরক্ষনের জন্য বাসায় এ্যান্টি রেড স্থানীয় ভাবে যেটাকে কেরির বড়ি বলে সেটা বাড়িতে রাখে। আমরা এই কেরির বড়ির পরিবর্তে শস্য সংরক্ষনের জন্য নিমপাতা বা নিশিন্ধা পাতা শুকিয়ে গুরো করে প্রতি ৫০ কেজি চাউলের মধ্যে একশ গ্রাম পাতার গুরো দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেরির বড়ি ব্যবহারের প্রচলন কমে গেলে আত্মহত্যার প্রচলন অনেকাংেশ কমে আসবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম খসরু বলেন, ‘‘আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজে ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট দেয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনের সকল কর্মকান্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ, দুর্বল মন

মানসিকতা,সৎ সঙ্গের অভাব,পারিবারিক পরিবেশ ও পিতামাতার উদাসিনতার জন্য এই ঘটনা ঘটছে।” আর একটা লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে যারা বিষপানে আত্ম-হত্যা করেছেন তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেরির বড়ি বেছে নিচ্ছেন, কারণ তা সহজ লভ্য এবং গ্রামে অধিকাংশ বাড়িতে পাওয়া যায়। তাই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে যে কোন বিষয়ে সহনশীলতার মাধ্যমে কৌশলে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।