ঢাকা ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে রাতের অন্ধকারে চলে গোমতী নদীর মাটি কাটার মহোৎসব, নির্বিকার প্রশাসন

মো: মেঅমাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় গোমতী নদীতে অবৈধভাবে মাটির ব্যবসায়র কারনে বাঁধ, সড়ক ও সেতু চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে বাঁধের এলাকায় মাটি কেটে নেয়ায় পুরো এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছাত্র ছায়ায় চলা মাটিকাটা বন্ধে প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বরং উল্টো প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মাটিখেকোদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। অপর দিকে মাটিখেকুদের দাবি প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ সব ম্যানেজ করেই বৈধ্য ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে পরদিন ভোর সকাল পর্যন্ত গোমতী নদীর দুই পাশে দেদার চলে মাটি কাটার উৎসব। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা না মেনেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি স্থানে শতাধিক ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর ওঠানামা করছে নদীর বাঁধ দিয়ে। গোমতী চরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে বছরে প্রায় পাচঁ শত কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। অথচ গোমতী নদীর চরে একটি চক্র নির্বিঘেœ কেটে নিচ্ছে গোমতী পাড়ের ফসলি জমি। এতে হুমকির মুখে নদী পাড়ের কৃষিব্যবস্থাও। বিশেষ করে উপজেলার নয়াকান্দিতে মাটি কাটছেন ফারুক আহম্মেদ বাদশা, ভূনঘরে ফারুক আহম্মেদ বাদশা, শুশুন্ডায় ফাহাদ আহম্মেদ, সাতমোড়ায় বিল্লাল হোসেন, বাখরাবাদ কশাই সাদ্দম ও আমির হোসেন, আলিরচরে আব্দুল্লাহ, সুবিলারচরে মজিবুর রহমানসহ ১২ থেকে ১৫টি পয়েন্টে থেকে প্রতিদিন শতাধিক ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি অবৈধভাবে কেটে নিয়া হচ্ছে।
সাতমোড়া গ্রামের বদিউল আলম সাত্তার নামে স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, আমার ১৫ শতক জমি। সেখানে এবার টমেটো চাষ করেছি। আমাকে কিছু না বলে আমার চাষ করা ফসলের উপর দিয়ে এখন ট্রাক্টর যাচ্ছে। মাটিখেকুরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি ভয়ে কিছু বলতে পারি না।

আলীরচড় এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে আর কিছুদিন পর নদীর বাঁধ থাকবে না। ব্রিজও ভেঙে ডড়বে। সন্ধ হলেই শুরু হয় মাটি কাটা। সারা রাত মাটি কাটা চলে, শুধু ট্রাক আর ট্রাক। রাস্তাঘাটও শেষ। প্রতিধিন শতাধিক ট্রাক রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে। দিনরাত বালুর মধ্যে থাকতে হয়, এতে শ^াসকষ্ট, হাঁপানি দেখা দিয়েছে অনেকের। এভাবে গোমতী নদী থেকে মাটি কেটে নেয়, প্রশাসন দেখে না? এ কাজে প্রশাসনের লোকেও জড়িত আছে বলে অভিযোগ তার।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, তারা সব ম্যানেজ করে বৈধ উপায়ে মাটি কাটছেন। প্রশাসনের অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রজেক্ট প্রতি কৃষি জমির ক্ষেত্রে ২ লাখ ও সরকারি জায়গার ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রশাসনকে জমির প্রকারভেদে প্রজেক্ট প্রতি মাটি কাটার ক্ষেত্রে দিতে হয় ১ থেকে ২ লাখ এবং সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে আরো দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে মুরাদনগর নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মাটি কাটায় সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গোমতী নদী রক্ষার্থে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমি জানতে পেরেছি গোমতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের বেলা মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি একটি সরকারি জায়গা থেকেও তারা মাটি কেটেছে। ইতিমধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস

মুরাদনগরে রাতের অন্ধকারে চলে গোমতী নদীর মাটি কাটার মহোৎসব, নির্বিকার প্রশাসন

মুরাদনগরে রাতের অন্ধকারে চলে গোমতী নদীর মাটি কাটার মহোৎসব, নির্বিকার প্রশাসন

আপডেট সময় ১১:৪৫:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

মো: মেঅমাররফ হোসেন মনির:

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় গোমতী নদীতে অবৈধভাবে মাটির ব্যবসায়র কারনে বাঁধ, সড়ক ও সেতু চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে বাঁধের এলাকায় মাটি কেটে নেয়ায় পুরো এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছাত্র ছায়ায় চলা মাটিকাটা বন্ধে প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। বরং উল্টো প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মাটিখেকোদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। অপর দিকে মাটিখেকুদের দাবি প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ সব ম্যানেজ করেই বৈধ্য ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে পরদিন ভোর সকাল পর্যন্ত গোমতী নদীর দুই পাশে দেদার চলে মাটি কাটার উৎসব। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা না মেনেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি স্থানে শতাধিক ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর ওঠানামা করছে নদীর বাঁধ দিয়ে। গোমতী চরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে বছরে প্রায় পাচঁ শত কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। অথচ গোমতী নদীর চরে একটি চক্র নির্বিঘেœ কেটে নিচ্ছে গোমতী পাড়ের ফসলি জমি। এতে হুমকির মুখে নদী পাড়ের কৃষিব্যবস্থাও। বিশেষ করে উপজেলার নয়াকান্দিতে মাটি কাটছেন ফারুক আহম্মেদ বাদশা, ভূনঘরে ফারুক আহম্মেদ বাদশা, শুশুন্ডায় ফাহাদ আহম্মেদ, সাতমোড়ায় বিল্লাল হোসেন, বাখরাবাদ কশাই সাদ্দম ও আমির হোসেন, আলিরচরে আব্দুল্লাহ, সুবিলারচরে মজিবুর রহমানসহ ১২ থেকে ১৫টি পয়েন্টে থেকে প্রতিদিন শতাধিক ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি অবৈধভাবে কেটে নিয়া হচ্ছে।
সাতমোড়া গ্রামের বদিউল আলম সাত্তার নামে স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, আমার ১৫ শতক জমি। সেখানে এবার টমেটো চাষ করেছি। আমাকে কিছু না বলে আমার চাষ করা ফসলের উপর দিয়ে এখন ট্রাক্টর যাচ্ছে। মাটিখেকুরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি ভয়ে কিছু বলতে পারি না।

আলীরচড় এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে আর কিছুদিন পর নদীর বাঁধ থাকবে না। ব্রিজও ভেঙে ডড়বে। সন্ধ হলেই শুরু হয় মাটি কাটা। সারা রাত মাটি কাটা চলে, শুধু ট্রাক আর ট্রাক। রাস্তাঘাটও শেষ। প্রতিধিন শতাধিক ট্রাক রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে। দিনরাত বালুর মধ্যে থাকতে হয়, এতে শ^াসকষ্ট, হাঁপানি দেখা দিয়েছে অনেকের। এভাবে গোমতী নদী থেকে মাটি কেটে নেয়, প্রশাসন দেখে না? এ কাজে প্রশাসনের লোকেও জড়িত আছে বলে অভিযোগ তার।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, তারা সব ম্যানেজ করে বৈধ উপায়ে মাটি কাটছেন। প্রশাসনের অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রজেক্ট প্রতি কৃষি জমির ক্ষেত্রে ২ লাখ ও সরকারি জায়গার ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রশাসনকে জমির প্রকারভেদে প্রজেক্ট প্রতি মাটি কাটার ক্ষেত্রে দিতে হয় ১ থেকে ২ লাখ এবং সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে আরো দিতে হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে মুরাদনগর নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মাটি কাটায় সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গোমতী নদী রক্ষার্থে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমি জানতে পেরেছি গোমতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের বেলা মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি একটি সরকারি জায়গা থেকেও তারা মাটি কেটেছে। ইতিমধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।