মো: মোশাররফ হোসেন মনির:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে শ^শুর বাড়িতে বেড়াতে এসে জামাতা ইসমাইল ও তার বন্ধ নূরু মিয়াকে ডাকাত বলে জনতার গণপিটুনি দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আপন চাচা ও প্রতিবেশী এক মাদক কারবারির বিরুদ্ধে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন জামাতার আরও একজন বন্ধু। এই চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা চার দিন পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারনে এখনও কোন মামলা না হওয়ায় সাধান মানুষদের মঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্ঠি হয়েছে। অপরদিকে নিহত দুই যুবকের পরিবারের দাবি, তারা ডাকাত নয়, পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে গনপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহতরা হলো, জামাতা নুরু মিয়া(২৮) উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে ও বন্ধু ইসমাইল হোসেন(২৭) একই উপজেলার পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। অপর বন্ধু আহত শাহজাহান (২৮) সদর দক্ষিন থানার বাগমারা গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে মুমূর্ষ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, উপজেলার পালাসুতা গ্রামের নিহত ইসমাইল হোসেনের পরিবারের সাথে জমি সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার আপন চাচা সিরাজুল ইসলাম শেখ সাহেব এবং প্রতিবেশী আলাউদ্দিন আলা নামের এক মাদক কারবারির মাদক ব্যবসায় নিহত ইসমাইলের পরিবারদের বসবাসরত বাড়িটি প্রতিবান্ধবকতা তৈরী হওয়ায় পরিকল্পতি ভাবে ডাকাত সন্দেহের ঘটনা সাজিয়ে এই হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়।
স্থানীয় সুত্রে জানায়, গত শুক্রবার রাতে বোড়ারচর গ্রামে ডাকাতি করতে এসে ধাওয়া খেয়ে ডাকাত দলের ৩ সদস্য পালাসুতা গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে এমন খবর এলাকার মাইকে ঘোষনা করলে আশপাশের কয়েক গ্রামের সহ¯্রাধিক লোকজন জড়ো হয়ে ডাকাত সন্দেহে নাবু মিয়ার ঘর থেকে তার মেয়ের স্বামী ও দুই বন্দুদের ডাকাত সন্দেহে ঘর থেকে ধরে এনে গণপিটুনি দেয়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনের মৃত্যু হয়।
গনপিটুনিতে আহত শাহজাহান বলেন, ঘটনার দিন পালাসুতা গ্রামে অনুষ্ঠিত মাহফিল, নূরু অসুস্থ বাবাকে দেখা ও নুরুর শশুর বাড়িতে থাকা ছেলেকে দেখতে আমরা পালাসুতা গ্রামে যাই। পরে রাত ১০টার দিকে পালাসুতা গ্রামে নূরুর শ^শুরের বাড়িতে যাই এবং ঘরে বসে সকলের সাথে কথা বলছিলাম ঠিক তখনই কিছু লোক এসে আমাদের ডাকাত বলে ঘর থেকে টেনে-হিচরে বাহির করে ডাকাত বলে মারতে থাকে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবি করি।
নিহত নূরু মিয়ার মা জাহানারা বেগম ও স্ত্রীর বোন রফিয়া অভিযোগ করে বলেন, নূরু কুমিল্লায় পরিবার নিয়ে থাকেন। শুক্রবার রাতে সে ও তার দুই বন্ধু মাহফিলের কারনে রাত ৯টার দিকে গ্রামের নিজ বাড়িতে আসে। মায়ের সাথে দেখা করে শ^্শুর বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যায় এবং সাড়ে ৯টার দিকে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে মোবাইল ফোনে তার শ^শুর ও শাশুরির সাথে কথা বলায়। নূরু খারাপ কোন কাজের সাথে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে এর পূর্বে পুলিশি কোন অভিযোগও নেই। তাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত ইসমাইলে স্ত্রী তানিয়া ও মা মিনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পরিবারের সাথে ইসমাইলের চাচার সিরাজুল ইসলাম শেখ সাহেবের সাথে জমিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পূর্বে থেকে বিরোধ ছিলো। আর আমাদের বাড়ির প্রতিবেশি আলাউদ্দিন একজন মাদক ব্যবসায়ী। আমরা যখন তাদের বাড়ির পাশে বাড়ি করি তখন থেকে তারা আমাদের হুমকি দিতো এখান থেকে চলে যেতে। কারন আমাদের কারনে তাদের মাদক বিক্রি করা সমস্যা হাচ্ছলো। এই ঘটনার পূর্ব থেকে শেখ সাহেবের স্ত্রী আমাদের বাড়িতে না আসলেও আলাউদ্দিনের বাড়িতে আশাযাওয়া করতেন। ঘটনার সময় শেখ সাহেব ও তার ছেলে এবং আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেয়। মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়।
এ বিষয়ে অভিযোক্ত সিরাজুল ইসলাম শেখ সাহেব পূর্বে থেকে চলা বিরোধ ও ঘটনার স্থলে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় আমি মানুষের মুখে ডাকাত আটক করা হয়েছে শোনে ঘটনার স্থলে যাই কিন্তু তাদেরকে হত্যার সাথে আমি ও আমার ছেলে জড়িত থাকার বিষয়টি মিথ্যা। তিনি আরো বলেন, আলাউদ্দিন একজন মাদক ব্যবসায়ী। আমার ভাই (ইসমাইলের বাবা) যখন আলাউদ্দিনের বাড়ির পাশে জমি কিনে বাড়ি করে তখনই বাড়ি না করতে আলাউদ্দিনর হুমকি দিচ্ছিলো। আলাউদ্দিনের সাথে আমার ভাইয়ের পরিবারদের তখন থেকেই বিরোধ চলছে।
অপর অভিযোক্ত আলাউদ্দিন বলেন আমার স্ত্রী তার মেয়ের সাথে বলছে এসব রেখে লাভ নাই মাইরা ফেলাক বলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মারধরের ঘটনার সময় ঘটনারস্থলে আমি ছিলাম না। পুলিশ আসার পর ঘটনারস্থলে আমি ও আমার স্ত্রী যাই। এখন র্পর্ব শত্রতার জের ধরে ও এলাবাসির ইন্দনে এখানে আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমিও চাই এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত সবার শাস্তি হোক।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নাই। আজ কালকের মধ্যে ভিকটিমের পরিবার থানায় এসে মামলা করবে। পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ পুলিশের সকল টিম কাজ করছে। তদন্ত করে অভিযোক্ত কাওকে ছাড় দেওয়া হবে না।