ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে স্বামী হত্যার অভিযোগে আটক স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

রোজ বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০১৬ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর গ্রামে নোয়াহাটি এলাকার সৌদি প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর ভাড়াটে খুনিরা নির্মমভাবে খুন করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ৮ নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহদ বিন আমীন চৌধুরীর আদালতে হাজির করার পর প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা বেগম সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম।

নিহত ময়নল হোসেন উপজেলার আকুবপুর গ্রামের ফুল মিয়া হাজীর ছেলে।

Moynal Hossain

মামলার তদন্ত কর্র্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম  জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো স্বামীর অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে কেনা সম্পত্তি এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়ে সন্দেহ থেকেই দাম্পত্য কলহ দেখা দেয় এবং এর জের ধরে ওই প্রবাসীকে হত্যা করা হয়। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে তাসলিমা জানান, ‘১ নভেম্বর গভীর রাতে ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে ৬ জন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করা হয়, এর মধ্যে রাতেই ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর সন্ত্রাসীরা কৌশলে ওই প্রবাসীকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ির অদূরে খাল পাড়ে নিয়ে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে দেয়।

তিনি আরও জানান, আদালতে দেয়া তাসলিমার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত ঘাতকদের আটক এবং নিহতের লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত বছরের ১ নভেম্বর গভীর রাতে মুরাদনগর উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীর পরিকল্পনায় প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। গত ৮ মার্চ প্রবাসীর স্ত্রী এবং পর দিন তার প্রেমিক শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতারের পরই বেড়িয়ে আসে ওই হত্যাকান্ডের রহস্য। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্ত করছেন ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম।

ডিবি পুলিশ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দী সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার আকাবপুর নোহাটি গ্রামের মৃত: আব্দুল কাদিরের সৌদি প্রবাসী ছেলে ময়নাল হোসেনের সাথে প্রায় ১০ বছর আগে একই উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের মেয়ে তাছলিমা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের ২টি সন্তান রয়েছে। সৌদি যাওয়ার পর সকল অর্থ স্ত্রী তাছলিমার কাছে পাঠায় ময়নাল। এদিকে প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাছলিমা বেগম একই গ্রামের শরীফুল ইসলাম নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ময়নাল হোসেন দেশে আসার পর শ্বশুর বাড়ীতে গিয়ে অবস্থান করে বিদেশে থেকে পাঠানো অর্থের হিসাব এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এতে তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ৬ জন সন্ত্রাসীর সাথে চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত বছরের ১ নভেম্বর রাতে ঘাতকরা প্রবাসী ময়নালকে খুন করে লাশ একটি খালে গুম করে। এ বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী গত ৭ নভেম্বর মুরাদনগর থানায় স্বামী নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরী করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘তার স্বামী ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেননি।’ এতে মুরাদনগর থানা পুলিশ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলেও ঘটনার রহস্য বের করতে পারেনি।

পরে ওই প্রবাসী মা আমেনা খাতুন কর্তৃক কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন। অভিযোগের সূত্র ধরে ডিবি পুলিশ এরই মধ্যে প্রবাসী ময়নালের স্ত্রীর নিকটাত্বীয় জাকির ও জুয়েলকে গ্রেফতার করে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

১৩ বছর পর দেশে ফিরলেন বিএনপি নেতা কায়কোবাদ, বিমানবন্দরে লাখো মানুষের ঢল

মুরাদনগরে স্বামী হত্যার অভিযোগে আটক স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

আপডেট সময় ০৩:০১:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০১৬

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

রোজ বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০১৬ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর গ্রামে নোয়াহাটি এলাকার সৌদি প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে স্ত্রীর ভাড়াটে খুনিরা নির্মমভাবে খুন করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে ৮ নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহদ বিন আমীন চৌধুরীর আদালতে হাজির করার পর প্রবাসীর স্ত্রী তাছলিমা বেগম সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম।

নিহত ময়নল হোসেন উপজেলার আকুবপুর গ্রামের ফুল মিয়া হাজীর ছেলে।

Moynal Hossain

মামলার তদন্ত কর্র্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম  জানান, বিদেশ থেকে পাঠানো স্বামীর অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে কেনা সম্পত্তি এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়ে সন্দেহ থেকেই দাম্পত্য কলহ দেখা দেয় এবং এর জের ধরে ওই প্রবাসীকে হত্যা করা হয়। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে তাসলিমা জানান, ‘১ নভেম্বর গভীর রাতে ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে ৬ জন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করা হয়, এর মধ্যে রাতেই ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর সন্ত্রাসীরা কৌশলে ওই প্রবাসীকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ির অদূরে খাল পাড়ে নিয়ে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে দেয়।

তিনি আরও জানান, আদালতে দেয়া তাসলিমার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত ঘাতকদের আটক এবং নিহতের লাশ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত বছরের ১ নভেম্বর গভীর রাতে মুরাদনগর উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীর পরিকল্পনায় প্রবাসী ময়নাল হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। গত ৮ মার্চ প্রবাসীর স্ত্রী এবং পর দিন তার প্রেমিক শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতারের পরই বেড়িয়ে আসে ওই হত্যাকান্ডের রহস্য। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার তদন্ত করছেন ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম।

ডিবি পুলিশ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দী সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলার আকাবপুর নোহাটি গ্রামের মৃত: আব্দুল কাদিরের সৌদি প্রবাসী ছেলে ময়নাল হোসেনের সাথে প্রায় ১০ বছর আগে একই উপজেলার জাড্ডা হাহাতি গ্রামের মেয়ে তাছলিমা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের ২টি সন্তান রয়েছে। সৌদি যাওয়ার পর সকল অর্থ স্ত্রী তাছলিমার কাছে পাঠায় ময়নাল। এদিকে প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাছলিমা বেগম একই গ্রামের শরীফুল ইসলাম নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ময়নাল হোসেন দেশে আসার পর শ্বশুর বাড়ীতে গিয়ে অবস্থান করে বিদেশে থেকে পাঠানো অর্থের হিসাব এবং স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এতে তার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ৬ জন সন্ত্রাসীর সাথে চুক্তি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত বছরের ১ নভেম্বর রাতে ঘাতকরা প্রবাসী ময়নালকে খুন করে লাশ একটি খালে গুম করে। এ বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী গত ৭ নভেম্বর মুরাদনগর থানায় স্বামী নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরী করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘তার স্বামী ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেননি।’ এতে মুরাদনগর থানা পুলিশ জিডির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করলেও ঘটনার রহস্য বের করতে পারেনি।

পরে ওই প্রবাসী মা আমেনা খাতুন কর্তৃক কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন। অভিযোগের সূত্র ধরে ডিবি পুলিশ এরই মধ্যে প্রবাসী ময়নালের স্ত্রীর নিকটাত্বীয় জাকির ও জুয়েলকে গ্রেফতার করে।