ঢাকা ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে হলুদে সেজেসে সরিষার মাঠ, আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সরিষার। স্বল্প সময়ে উৎপাদনশীল একটি লাভজনক রবিশষ্য হওয়ায় এ উপজেলায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। দিন দিন সরিষা চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মাঝে। বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকদের সংখ্যাও। আমন ফসল ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ে সরিষা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সারিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ রঙয়ে সমারোহ। চারিদিকে সরিষা ফুলে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র। ফুলের তেমন গন্ধ না ছড়ালেও এর দৃশ্য যেন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। হলুদ ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে যেমন মধু সংগ্রহের নেশায় ছুটে আসে সরিষা ক্ষেতে তেমনি সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষীরাও মনের আনন্দে ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ দ্বীগুণে আশায় কিষাণ-কিষাণীদের মূখে ফুঠেছে হাসির ঝিলিক। শেষ প্রর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশাও করছে চাষিরা।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর চাষাবাদী জমির মধ্যে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের ৪ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে চাষাবাধের টার্গেট থাকলেও চাষের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ১৮০ হেক্টরে দাড়িয়েছে। চলতি বছর কৃষকরা উপজেলা সদর, করিমপুর, ইউছুফনগর, দিলালপুর, নেয়ামুতপুর, নোয়াগাও, কামাল্লা, রামচন্দ্রপুর, শ্রীকাইল, রোয়াচালা, কুড়াখাল, কুড়–িন্ড, বড়িয়াচরা, মোহাম্মদপুর, দিঘিরপাড়, রগুরামপুর, পুষ্কনিরপাড়, চৈনপুর, মোচাগড়া, দেওরাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টরি ৭, বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭ ও বিনা ৪, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৭, জাতের সরিষা চাষ করেছে। হেক্টর প্রতি সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ৭/৮ টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

করিমপুর মাঠের কৃষক লতু মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তাদের জমি পরিত্যক্ত থকতো, কিন্তু বর্তমানে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এখন বোরো ধানের আগে জমিতে সরিষা চাষ করছেন। সরিষার ফুল মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তিনি আরো বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এত বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করি তা থেকে প্রায় বিঘা প্রতি ৮ মন সরিষা পাওয়া যাবে, যার বাজার মূল্য হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, কৃষকরা এবছর সরিষার বীজ বেশি চাষ করেছেন। এছাড়া তিনি উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে বক্ল বা ক্ষেত পরিদর্শনসহ ভালো ফলন পেতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, সরকারের তরফ থেকে উপজেলার সকল কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা যা দেয়ার প্রয়োজন ছিলো সব কিছু দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এ বছর ১ হাজার ৭’শ কৃষককে পনোদনা প্রধান ও ৪০টি প্রর্দশনি ছিল। অপর দিকে  কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযোক্তির পরামর্শ ও প্রশিক্ষন সেবা দিয়েছেন। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কৃষকদের পরিশ্রম আর সরকারি কৃষি অফিসের  সম্মনয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

মুরাদনগরে হলুদে সেজেসে সরিষার মাঠ, আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

আপডেট সময় ০২:২৯:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৯
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সরিষার। স্বল্প সময়ে উৎপাদনশীল একটি লাভজনক রবিশষ্য হওয়ায় এ উপজেলায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। দিন দিন সরিষা চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মাঝে। বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকদের সংখ্যাও। আমন ফসল ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ে সরিষা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সারিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ রঙয়ে সমারোহ। চারিদিকে সরিষা ফুলে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র। ফুলের তেমন গন্ধ না ছড়ালেও এর দৃশ্য যেন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। হলুদ ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে যেমন মধু সংগ্রহের নেশায় ছুটে আসে সরিষা ক্ষেতে তেমনি সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষীরাও মনের আনন্দে ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ দ্বীগুণে আশায় কিষাণ-কিষাণীদের মূখে ফুঠেছে হাসির ঝিলিক। শেষ প্রর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশাও করছে চাষিরা।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর চাষাবাদী জমির মধ্যে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের ৪ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে চাষাবাধের টার্গেট থাকলেও চাষের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ১৮০ হেক্টরে দাড়িয়েছে। চলতি বছর কৃষকরা উপজেলা সদর, করিমপুর, ইউছুফনগর, দিলালপুর, নেয়ামুতপুর, নোয়াগাও, কামাল্লা, রামচন্দ্রপুর, শ্রীকাইল, রোয়াচালা, কুড়াখাল, কুড়–িন্ড, বড়িয়াচরা, মোহাম্মদপুর, দিঘিরপাড়, রগুরামপুর, পুষ্কনিরপাড়, চৈনপুর, মোচাগড়া, দেওরাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টরি ৭, বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭ ও বিনা ৪, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৭, জাতের সরিষা চাষ করেছে। হেক্টর প্রতি সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ৭/৮ টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

করিমপুর মাঠের কৃষক লতু মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তাদের জমি পরিত্যক্ত থকতো, কিন্তু বর্তমানে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এখন বোরো ধানের আগে জমিতে সরিষা চাষ করছেন। সরিষার ফুল মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তিনি আরো বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এত বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করি তা থেকে প্রায় বিঘা প্রতি ৮ মন সরিষা পাওয়া যাবে, যার বাজার মূল্য হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, কৃষকরা এবছর সরিষার বীজ বেশি চাষ করেছেন। এছাড়া তিনি উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে বক্ল বা ক্ষেত পরিদর্শনসহ ভালো ফলন পেতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, সরকারের তরফ থেকে উপজেলার সকল কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা যা দেয়ার প্রয়োজন ছিলো সব কিছু দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এ বছর ১ হাজার ৭’শ কৃষককে পনোদনা প্রধান ও ৪০টি প্রর্দশনি ছিল। অপর দিকে  কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযোক্তির পরামর্শ ও প্রশিক্ষন সেবা দিয়েছেন। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কৃষকদের পরিশ্রম আর সরকারি কৃষি অফিসের  সম্মনয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।