মোঃ হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রোজ মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মুরাদনগর উপজেলা সদর থেকে কামাল্লা বাজার পর্যন্ত ১২ হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ১২টি ভূয়া বিল বই, ৩৭টি ২ ইঞ্চি পাইপ ও ৭টি ১ ইঞ্চি পাইপ জব্ধ করা হয়।
জব্ধকৃত পাইপগুলো সোমবার দুপুরে নিলামের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে। তবে রহস্যজনক কারনে অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মানের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অভিযান চলাকালে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর উপ-ব্যবস্থাপক বাপ্পি শাহরিয়ার, ব্যবস্থাপক (বিক্রয়-উপজেলা) জিয়াউল হক চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (আরসিসিডিআর) মোহাম্মদ আলী ভুইয়া, উপ- ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মোস্তফা মাহিন সোহাগ, উপ- ব্যবস্থাপক (প্রকৌশল-সেবা) মোবারক হোসেনসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় স্থানীয় জনগন কাঙ্খিত এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে মুরাদনগর উপজেলার সকল স্থানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের নিকট দাবি করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জানান, চিকন ১ ইঞ্চি পাইপ থেকে অবৈধ ভাবে দুই ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ঝুকিপূর্ণ পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের পেসার কমে যাবে। এর ফলে বৈধ-অবৈধ গ্রাহক সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়াও মাটি থেকে সাড়ে ৩ফুট গভীরে গ্যাস লাইন স্থাপনের নিয়ম থাকলেও অনেক স্থানে সরাসরি রাস্তার উপর এবং রাস্তার সর্বোচ্চ ৬ ইঞ্চির ভেতরে গ্যাস লাইনের পাইপ স্থাপন করায় যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরো জানান, বিচ্ছিন্ন করা গ্যাস লাইনের অবশিষ্ট পাইপগুলো অপসারণ, বিল বইয়ের স্বাক্ষর সঠিক কিনা যাচাই এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ব্যবস্থাপককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন দেবিদ্বার জোনাল অফিস, কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কতিপয় সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজসে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দেয়ার মাধ্যমে সাধারন নিরীহ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বাখরাবাদ গ্যাসের কুমিল্লা অফিস ও দেবিদ্বার জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সাথে এসব লাইনকে মুখে অবৈধ বললেও বিপুল অর্থের বিনিময়ে তারাই এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পাকা সড়ক কেটে সম্পূর্ন অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মান হলেও কর্মকর্তারা কোন প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর সড়কের প্রানিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে থেকে সড়ক কেটে চিকন ১ ইঞ্চি পাইপ থেকে দুই ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে কামাল্লা গ্রাম পর্যন্ত সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে টানা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার ফুট লম্বা পাইপ লাইন। যেখানে দুই ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের কোন প্রকার বৈধতা না থাকলেও বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশনের কুমিল্লা অফিস ও দেবিদ্বার জোনাল অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এসব লাইন নির্মানে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক কেটে অবৈধ ভাবে পাইপ লাইন নেয়া হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে এ বিষয়ে চুপ থাকায় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এক হলো ভাঙ্গা সড়ক, তার উপর আবার সড়ক কেটে পাইপ লাইন নেয়ায় জনজীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠেছে। উপজেলার আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স মালিক মজিবুর রহমান খোকন পূর্বে রাতের-অন্ধকারে কর্মকান্ড পরিচালনা করলেও কোন অলৈাকিক ক্ষমতা বলে এখন দিনের বেলায় চালাচ্ছে অবৈধ এ লাইন নির্মান ও সংযোগ কার্যক্রম।
এ অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহোৎসবের বিষয়ে ইতিপূর্বে বেশ কিছু পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে স্থানীয় সংবাদিকরা সোচ্চার হলে গত ১৫ আগস্ট অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী সিন্ডিকেটের সদস্য মজিবুর রহমান খোকন বাদি হয়ে বাংলাভিশন টিভির সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন মনিরের বিরুদ্ধে মুরাদনগর থানায় একটি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা চাদাঁবাজির মামলা করেন। এতে করে গ্যাস চোরাই সিন্ডিকেট গুলো আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ গ্যাস চোরাই সিন্ডিকেট গুলোর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করাতো দূরের কথা ভয়েও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। বাখরাবাদ কতৃপক্ষের অনুমোদনহীন পাইপলাইন স্থাপন করে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে ঠিকাদার ও দালাল চক্র।
এ বিষয়টি এলাকায় অনেকটা ওপেন সিক্রেট হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দৃশ্যমানতো নয়ই, বরং কোন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। গত ৮ সেপ্টেম্বর মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামে প্রায় ৩ হাজার গ্রাহক থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সিন্ডিকেটটি দিনের বেলায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ’র (বিজিডিসিএল) নিজস্ব পাইপলাইন থেকে অবৈধ প্রায় ২০ হাজার ফুট গ্যাস লাইন সংযোগের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় কতৃপক্ষের জানা থাকলে ও অদৃশ্য কারনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা।
নির্মানাধীন এ লাইন থেকে প্রায় ৩ হাজার গ্রাহককে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে ওই চক্রটি। এজন্য প্রতি গ্রাহক থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮০/৯০ হাজার টাকা। যা থেকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। আর মাঝ থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে সিন্ডিকেট ও দালাল চক্র গুলো।