ঢাকা ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি ভবানীপুর দাখিল মাদরাসা

শামীম আহাম্মদ, মুরাদনগর (কুমিল্লা):

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভবানীপুর দাখিল মাদরসাটি ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে মাদরাসাটি সফলতার সাক্ষর রাখলেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বেতন না পেয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের পরিবারগুলো।

বর্তমান সরকার স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর শিক্ষানীতি ঘোষণা করলেও তার সুফল পায়নি মাদরাসাটি। শত অভাব অনটনের মধ্যেও শিক্ষকরা বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তৈরি করছে আলোকিত মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এ অঞ্চলের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০০১ সালে এলাকাবাসী দেড় একর জমির উপর গড়ে তোলেন ভবানীপুর দাখিল মাদরসা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে চলছে মাদরাসাটির কার্যক্রম। দক্ষ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করায় ২০০৪ সাল থেকে টানা ১৩ বছর দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পাশসহ শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জিপিএ-৫ অর্জন করে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখে। জেডিসি ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায়ও শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে আসছে। ভবানীপুর দাখিল মাদরসার এ সাফল্যের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ভর্তি হয়েও ভালো ফল করছে। শিক্ষকরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছে।

শিক্ষা জীবন শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি ওই মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের। অবহেলিত এলাকার ছেলেমেয়েদের মাদরাসা শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। মাদরাসাটিতে বর্তমানে প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এখানে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দু’জন কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারের নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর, এবতেদায়ী সমাপনী, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ঘটলেও ঘটেনি শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো উন্নয়ন।

মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জনের শরণাপন্ন হলে তারা এমপিওভুক্তির ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়ে যান। কিন্তু ১৮ বছরেও কোন সরকার মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত করেনি। যে স্বপ্ন নিয়ে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও স্বপ্ন গড়া কারিগররা অভুক্ত অনাহারের মধ্যদিয়েও শিক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অবহেলিত এলাকার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

মাদরাসার সুপার মাওলানা আবু মুছা জানান, সরকার মাদরাসাটির স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনেক কষ্ট করে মাদরাসাটি চালিয়ে আসছি। শিক্ষক কর্মচারীরা যদি মাদরাসায় আসা বন্ধ করে দেয়, তাহলে শিক্ষক সংকটের কারণে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার প্রভাব পড়বে এ এলাকার শিক্ষার্থীদের উপর।

মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা শফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৮ বছর ধরে এ মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মসজিদে ইমামতি করে জীবনযাপন করছি।

অপর শিক্ষক মাওলানা আশিকে এলাহী জানান, আমি গত ১৫ বছর যাবত এই মাদরাসায় পাঠদান করে আসছি। কিন্তু কোন বেতন না পাওয়ায় অবসর সময়ে ঔষধ বিক্রি করে কোন রকমে দিনাতিপাত করছি।

মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হাজী নোয়াজ আলী জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি মাদরাসাটির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু শিক্ষকদের কোন টাকা পয়সা দিতে না পারায় তাদের সামনে যেতেও লজ্জা পাই। এমপি মহোদয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আসছি। আশা করি এ সরকারের আমলেই মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হবে। এমপিও চালু হলেই মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীর দু:খ দুর্দশা লাঘব হবে এবং মাদরাসাটি নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলার পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠিত

মুরাদনগরে ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি ভবানীপুর দাখিল মাদরাসা

আপডেট সময় ০২:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
শামীম আহাম্মদ, মুরাদনগর (কুমিল্লা):

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভবানীপুর দাখিল মাদরসাটি ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে মাদরাসাটি সফলতার সাক্ষর রাখলেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বেতন না পেয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের পরিবারগুলো।

বর্তমান সরকার স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর শিক্ষানীতি ঘোষণা করলেও তার সুফল পায়নি মাদরাসাটি। শত অভাব অনটনের মধ্যেও শিক্ষকরা বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তৈরি করছে আলোকিত মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এ অঞ্চলের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ২০০১ সালে এলাকাবাসী দেড় একর জমির উপর গড়ে তোলেন ভবানীপুর দাখিল মাদরসা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে চলছে মাদরাসাটির কার্যক্রম। দক্ষ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করায় ২০০৪ সাল থেকে টানা ১৩ বছর দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পাশসহ শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক জিপিএ-৫ অর্জন করে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখে। জেডিসি ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায়ও শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে আসছে। ভবানীপুর দাখিল মাদরসার এ সাফল্যের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ভর্তি হয়েও ভালো ফল করছে। শিক্ষকরা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছে।

শিক্ষা জীবন শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি ওই মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের। অবহেলিত এলাকার ছেলেমেয়েদের মাদরাসা শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। মাদরাসাটিতে বর্তমানে প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এখানে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও দু’জন কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর ১৮ বছরেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারের নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর, এবতেদায়ী সমাপনী, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ঘটলেও ঘটেনি শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো উন্নয়ন।

মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জনের শরণাপন্ন হলে তারা এমপিওভুক্তির ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়ে যান। কিন্তু ১৮ বছরেও কোন সরকার মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত করেনি। যে স্বপ্ন নিয়ে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও স্বপ্ন গড়া কারিগররা অভুক্ত অনাহারের মধ্যদিয়েও শিক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অবহেলিত এলাকার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

মাদরাসার সুপার মাওলানা আবু মুছা জানান, সরকার মাদরাসাটির স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনেক কষ্ট করে মাদরাসাটি চালিয়ে আসছি। শিক্ষক কর্মচারীরা যদি মাদরাসায় আসা বন্ধ করে দেয়, তাহলে শিক্ষক সংকটের কারণে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার প্রভাব পড়বে এ এলাকার শিক্ষার্থীদের উপর।

মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা শফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ১৮ বছর ধরে এ মাদরাসায় শিক্ষকতা করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মসজিদে ইমামতি করে জীবনযাপন করছি।

অপর শিক্ষক মাওলানা আশিকে এলাহী জানান, আমি গত ১৫ বছর যাবত এই মাদরাসায় পাঠদান করে আসছি। কিন্তু কোন বেতন না পাওয়ায় অবসর সময়ে ঔষধ বিক্রি করে কোন রকমে দিনাতিপাত করছি।

মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হাজী নোয়াজ আলী জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি মাদরাসাটির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু শিক্ষকদের কোন টাকা পয়সা দিতে না পারায় তাদের সামনে যেতেও লজ্জা পাই। এমপি মহোদয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আসছি। আশা করি এ সরকারের আমলেই মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হবে। এমপিও চালু হলেই মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীর দু:খ দুর্দশা লাঘব হবে এবং মাদরাসাটি নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।