ঢাকা ০৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ৯০ বছর বয়সী রাজ্জাক মিয়ার জীবিকা সংগ্রামের গল্প…..

এনএ মুরাদঃ

মাথায় বোঝা হাতে ব্যাগ নিয়ে হেটে এসে সবজি বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন ৯০ বছর বয়সি বৃদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিদিন এক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ পল্লী বিদুৎ জোনাল অফিসের সামনে সবজি নিয়ে বসেন। ৮ বছর বয়স থেকে শুরু হওয়া আব্দুর রাজ্জাকের জীবন সংগ্রম এখনও চলচ্ছে। আজ বয়সের ভারে কুজো হয়ে গেছেন, চামড়ার ভাঁজ পড়েছে।

অথচ ৯০ বছর বয়স হলেও বয়স্ক বাতার কার্ড জোটেনি তার ভাগ্যে। আজ কাজ করার শক্তি সামর্থ নেই তারপর ও কারো কাছে হাত পাতেন না। তাই জীবিকা নির্বাহের তাগিতে জীবনের অন্তীম মূহর্তে এসে ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেছে। অথচ দেশ নিম্ম-আয়ের দেশ থেকে নিম্ম-মধ্য আয়ের উত্তলন, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হলেও আব্দুর রাজ্জাকের মতো এমন অনেক বৃদ্ধার ভাগ্য আজও পরিবর্তন হয়নি।

আব্দুর রাজ্জাক উপজেলার গুনজর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মৃত্যু কফিল উদ্দিনের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাকের বয়স যখন ৮ বছর তখনই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মা-বাবর এক সাথে মৃত্যু হয়। এর পর থেকে শুরু হয় কষ্টের অমানিশা জীবন সংগ্রাম। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছেন। লেখা-পড়া করার সুযোগ হয়নি বলে কোন চাকুরী পায়নি। যখন যেখানে যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছে। সংসার জীবনে পাঁচ সন্তানের জনক, কিন্তু অভাবের সাথে লড়াই করা এখনো শেষ হয়নি। বয়স্ক ভাতা কথা তিনি শুনলেও কিন্তু তাও জুটেনি তার ভাগ্যে। আর কত বছর হলে বয়স্ক ভাতা পাবে তাও জানা নেই তার। ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে কাঁচা মালের ব্যাবসা করে। ছেলেরা বিয়ে করে অনেক আগেই পৃথক সংসার করছেন। বড় মেয়ের বয়স ৪৫ হলেও  বুদ্ধি প্রতিবদ্ধী হওয়ায় তার বিয়ে হয়নি। ছেলে মেয়েরা আজ তারা কেহই বাবা রাজ্জাক মিয়ার কোন খোজ-খবর না রাখায় প্রতিবন্ধী মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে একসাথে থাকছেন।

আব্দুর রাজ্জাক আক্ষেপ করে আরো বলেন, এক সময় তিনি অনেক কাজ করতেন। কিন্তু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারনে আজ কাজ করতে পারিনা। সে কারনে কোন বেলায় আহার জোটে আবার কোন বেলায় কাটে অনাহারে। শুনেছি সরকার বয়স্কক ভাতার কার্ড দিচ্ছে সেটাও আমার ভাগ্যে জোটেনি।

এ বিষয়ে নবীপুর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। সে কখনও আমার কাছে আসেনি। তবে আগামীতে তার জন্য একটি কার্ড ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম জানান, কার্ড প্রাপ্তির বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

মুরাদনগরে ৯০ বছর বয়সী রাজ্জাক মিয়ার জীবিকা সংগ্রামের গল্প…..

আপডেট সময় ০৩:২২:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ জুন ২০১৮
এনএ মুরাদঃ

মাথায় বোঝা হাতে ব্যাগ নিয়ে হেটে এসে সবজি বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন ৯০ বছর বয়সি বৃদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিদিন এক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ পল্লী বিদুৎ জোনাল অফিসের সামনে সবজি নিয়ে বসেন। ৮ বছর বয়স থেকে শুরু হওয়া আব্দুর রাজ্জাকের জীবন সংগ্রম এখনও চলচ্ছে। আজ বয়সের ভারে কুজো হয়ে গেছেন, চামড়ার ভাঁজ পড়েছে।

অথচ ৯০ বছর বয়স হলেও বয়স্ক বাতার কার্ড জোটেনি তার ভাগ্যে। আজ কাজ করার শক্তি সামর্থ নেই তারপর ও কারো কাছে হাত পাতেন না। তাই জীবিকা নির্বাহের তাগিতে জীবনের অন্তীম মূহর্তে এসে ফুটপাতে সবজি বিক্রি করেছে। অথচ দেশ নিম্ম-আয়ের দেশ থেকে নিম্ম-মধ্য আয়ের উত্তলন, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির ব্যাপক পরিবর্তন হলেও আব্দুর রাজ্জাকের মতো এমন অনেক বৃদ্ধার ভাগ্য আজও পরিবর্তন হয়নি।

আব্দুর রাজ্জাক উপজেলার গুনজর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মৃত্যু কফিল উদ্দিনের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাকের বয়স যখন ৮ বছর তখনই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মা-বাবর এক সাথে মৃত্যু হয়। এর পর থেকে শুরু হয় কষ্টের অমানিশা জীবন সংগ্রাম। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছেন। লেখা-পড়া করার সুযোগ হয়নি বলে কোন চাকুরী পায়নি। যখন যেখানে যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছে। সংসার জীবনে পাঁচ সন্তানের জনক, কিন্তু অভাবের সাথে লড়াই করা এখনো শেষ হয়নি। বয়স্ক ভাতা কথা তিনি শুনলেও কিন্তু তাও জুটেনি তার ভাগ্যে। আর কত বছর হলে বয়স্ক ভাতা পাবে তাও জানা নেই তার। ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে কাঁচা মালের ব্যাবসা করে। ছেলেরা বিয়ে করে অনেক আগেই পৃথক সংসার করছেন। বড় মেয়ের বয়স ৪৫ হলেও  বুদ্ধি প্রতিবদ্ধী হওয়ায় তার বিয়ে হয়নি। ছেলে মেয়েরা আজ তারা কেহই বাবা রাজ্জাক মিয়ার কোন খোজ-খবর না রাখায় প্রতিবন্ধী মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে একসাথে থাকছেন।

আব্দুর রাজ্জাক আক্ষেপ করে আরো বলেন, এক সময় তিনি অনেক কাজ করতেন। কিন্তু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারনে আজ কাজ করতে পারিনা। সে কারনে কোন বেলায় আহার জোটে আবার কোন বেলায় কাটে অনাহারে। শুনেছি সরকার বয়স্কক ভাতার কার্ড দিচ্ছে সেটাও আমার ভাগ্যে জোটেনি।

এ বিষয়ে নবীপুর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। সে কখনও আমার কাছে আসেনি। তবে আগামীতে তার জন্য একটি কার্ড ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম জানান, কার্ড প্রাপ্তির বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।