ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস যেন রমরমা ঘুষের হাট

আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস যেন রমরমা ঘুষের হাটে পরিণত হয়েছে। ওই অফিসের বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে  অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন। দলিল-দাখিলাসহ সঠিক কাগজপত্র নিয়ে এ কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা লোকজন প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে ভুয়া কাগজপত্রসহ নায়েব সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের মাধ্যমে আসা লোকজনের কাজ সম্পাদন হচ্ছে দ্রুতগতিতে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাল, নালা ও জায়গা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও দালালচক্রের যোগসাজশে দেদারসে বেদখল হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে উপজেলার ভূমি অফিসকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ ও সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারের কবলে চলে যাওয়ার বিষয়ে সহসা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাঠে নামবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা কুমিল্লার মুরাদনগর। ২২টি ইউনিয়ন ও ৩১৭টি গ্রাম নিয়ে এ এ উপজেলায় দুটি থানা ও একাধিক পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একটি করে ভূমি অফিস। এসব ভূমি অফিস ঘিরে গড়ে ওঠেছে দালালচক্র। এলাকা ঘুরে জানা যায়, এ উপজেলার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তেমন একটা তদারকী কিংবা নজরদারী নেই প্রশাসনিক উর্ধ্বতন মহলের। এ সুযোগে নিজেদের মতো সিন্ডিকেট গঠন করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণীর সরকারি-কর্মকর্তা কর্মচারী। ভূক্তভোগীরা জানায়, বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) যোগদানের পর থেকেই উপজেলা ভূমি অফিস ঘিরে দালালচক্র বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। ক্রমে এ কার্যালয়টি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভূক্তভোগীরা এ কার্যালয়কে এখন ঘুষের হাট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং জানিয়েছেন তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানীর কথা।

ভূক্তভোগীরা জানায়, উপজেলার ২২ ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও দালাল সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ অফিসে এসি-ল্যান্ড আসে, এসি-ল্যান্ড যায় কিন্তু বন্ধ হয় না ঘুষের হাট, অনিয়ম ও দুর্নীতি। সূত্র জানায়, এসি-ল্যান্ড পদে রাশেদা আক্তার যোগদানের পর এলাকাবাসীর প্রত্যাশা ছিল দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু দিনে দিনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে দালাল সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এতে সেবা প্রত্যাশী সাধারণ লোকজন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসী জানায়, এসিল্যান্ড রাশেদা আক্তারের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে কয়েক কোটি টাকার সরকারি জায়গা ও খাল প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। একইভাবে উপজেলার খাপুরা বাস স্ট্যান্ডের পাশে সরকারি খাল ও সওজের জায়গা বেদখল হয়েছে। উপজেলা নগরপাড় এলাকায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রায় দীঘির পূর্বাংশে প্রতিদিনই ভরাট কাজ অব্যাহত আছে। মেটংঘর এলাকায় সরকারি খাল বেদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার পীর কাশিমপুর টনকি বাজারে সরকারি জায়গা দখল করা হয়েছে। বলা যায়, গোটা উপজেলা জুড়ে এখন চলছে সরকারি জায়গা দখলের হিড়িক।

সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন জানান, এসব সরকারি জায়গা একের পর এক অবৈধ দখল চলাকালে এসি-ল্যান্ডকে অবহিত করলেও রহস্যজনক কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দখলযজ্ঞ চললেও এখন আর কেউ অভিযোগ করতে ভূমি অফিসে আসেন না। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নবায়নসহ নানা কাজে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জমা-খারিজের নামে এ অফিসে যেন প্রতিদিনই বসে ঘুষের হাট। এসব বিষয় নিয়ে কোন গণমাধ্যম কর্মী এসি-ল্যান্ড কিংবা তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কাছে কোন প্রকার তথ্য চাইলে তা দেয়া হয় না, অনেক সময় দালালচক্রের লোকদের মাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদর্শন করা হয়। এসব বিষয়ে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী ও সচেতন মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুরাদনগরের সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এসি-ল্যান্ড ম্যাডাম তো কিছুদিন পরে চলে যাবেন, কিন্তু মুরাদনগরে যেভাবে সরকারি জায়গাগুলো অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে এতে ভবিষ্যতে এসব জায়গা উদ্ধারে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হবে। এছাড়া সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার পাশাপাশি দিনের পর দিন সরকার বিপুল টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদা আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না। সরকারি সকল জায়গা দখলের হিড়িক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা চলছে।

এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, মুরাদনগর উপজেলা এসি-ল্যান্ড অফিসসহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোকে কেন্দ্র করে দালালচক্রের হাতে সেবা প্রত্যাশীরা হয়রানীর শিকার এবং সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারের কবলে চলে যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্তসহ সহসা অভিযান পরিচালনা কর

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস যেন রমরমা ঘুষের হাট

আপডেট সময় ০২:৪১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস যেন রমরমা ঘুষের হাটে পরিণত হয়েছে। ওই অফিসের বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে  অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন। দলিল-দাখিলাসহ সঠিক কাগজপত্র নিয়ে এ কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা লোকজন প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে ভুয়া কাগজপত্রসহ নায়েব সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের মাধ্যমে আসা লোকজনের কাজ সম্পাদন হচ্ছে দ্রুতগতিতে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাল, নালা ও জায়গা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও দালালচক্রের যোগসাজশে দেদারসে বেদখল হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে উপজেলার ভূমি অফিসকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগ ও সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারের কবলে চলে যাওয়ার বিষয়ে সহসা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাঠে নামবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা কুমিল্লার মুরাদনগর। ২২টি ইউনিয়ন ও ৩১৭টি গ্রাম নিয়ে এ এ উপজেলায় দুটি থানা ও একাধিক পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে একটি করে ভূমি অফিস। এসব ভূমি অফিস ঘিরে গড়ে ওঠেছে দালালচক্র। এলাকা ঘুরে জানা যায়, এ উপজেলার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তেমন একটা তদারকী কিংবা নজরদারী নেই প্রশাসনিক উর্ধ্বতন মহলের। এ সুযোগে নিজেদের মতো সিন্ডিকেট গঠন করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণীর সরকারি-কর্মকর্তা কর্মচারী। ভূক্তভোগীরা জানায়, বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) যোগদানের পর থেকেই উপজেলা ভূমি অফিস ঘিরে দালালচক্র বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। ক্রমে এ কার্যালয়টি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভূক্তভোগীরা এ কার্যালয়কে এখন ঘুষের হাট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং জানিয়েছেন তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানীর কথা।

ভূক্তভোগীরা জানায়, উপজেলার ২২ ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও দালাল সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ অফিসে এসি-ল্যান্ড আসে, এসি-ল্যান্ড যায় কিন্তু বন্ধ হয় না ঘুষের হাট, অনিয়ম ও দুর্নীতি। সূত্র জানায়, এসি-ল্যান্ড পদে রাশেদা আক্তার যোগদানের পর এলাকাবাসীর প্রত্যাশা ছিল দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম অনেকাংশে কমে আসবে। কিন্তু দিনে দিনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে দালাল সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এতে সেবা প্রত্যাশী সাধারণ লোকজন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসী জানায়, এসিল্যান্ড রাশেদা আক্তারের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে কয়েক কোটি টাকার সরকারি জায়গা ও খাল প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। একইভাবে উপজেলার খাপুরা বাস স্ট্যান্ডের পাশে সরকারি খাল ও সওজের জায়গা বেদখল হয়েছে। উপজেলা নগরপাড় এলাকায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রায় দীঘির পূর্বাংশে প্রতিদিনই ভরাট কাজ অব্যাহত আছে। মেটংঘর এলাকায় সরকারি খাল বেদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার পীর কাশিমপুর টনকি বাজারে সরকারি জায়গা দখল করা হয়েছে। বলা যায়, গোটা উপজেলা জুড়ে এখন চলছে সরকারি জায়গা দখলের হিড়িক।

সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন জানান, এসব সরকারি জায়গা একের পর এক অবৈধ দখল চলাকালে এসি-ল্যান্ডকে অবহিত করলেও রহস্যজনক কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দখলযজ্ঞ চললেও এখন আর কেউ অভিযোগ করতে ভূমি অফিসে আসেন না। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নবায়নসহ নানা কাজে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জমা-খারিজের নামে এ অফিসে যেন প্রতিদিনই বসে ঘুষের হাট। এসব বিষয় নিয়ে কোন গণমাধ্যম কর্মী এসি-ল্যান্ড কিংবা তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কাছে কোন প্রকার তথ্য চাইলে তা দেয়া হয় না, অনেক সময় দালালচক্রের লোকদের মাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদর্শন করা হয়। এসব বিষয়ে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী ও সচেতন মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুরাদনগরের সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এসি-ল্যান্ড ম্যাডাম তো কিছুদিন পরে চলে যাবেন, কিন্তু মুরাদনগরে যেভাবে সরকারি জায়গাগুলো অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে এতে ভবিষ্যতে এসব জায়গা উদ্ধারে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হবে। এছাড়া সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার পাশাপাশি দিনের পর দিন সরকার বিপুল টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদা আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয় না। সরকারি সকল জায়গা দখলের হিড়িক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা চলছে।

এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুমিল্লা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, মুরাদনগর উপজেলা এসি-ল্যান্ড অফিসসহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোকে কেন্দ্র করে দালালচক্রের হাতে সেবা প্রত্যাশীরা হয়রানীর শিকার এবং সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারের কবলে চলে যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে তদন্তসহ সহসা অভিযান পরিচালনা কর