মাহবুব আলম আরিফ, বিশেষ প্রতিনিধি:
সিনিয়ির উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সকাল ৯টায় ঢুকতেই চোখে পরলো একজন ভদ্রমহিলা অফিস ঝাড়– দিচ্ছেন। কিন্তু চোখে পরছেনা কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। অপরদিকে যিনি অফিস ঝাড়– দিচ্ছেন তাকে অফিস পিয়ন বা কোন কর্মচারীও মনে হচ্ছেনা। মূহুর্তের মধ্যে মনে অনেক প্রশ্নের তৈরী হলো। অফিস ঝাড়ু দিবে অফিস পিয়ন বা কোন কর্মচারী সেটাই স্বাভাবিক আর কোন কর্মকর্তা আছে হয়তো চোখে পরছে না! তাই মনে কোন প্রকার দ্বিধা না রেখে, ঝাড়– হাতে ব্যাক্তির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম আপনাদের অফিসার কোথায়। মহিলাটি বললেন আমার সাথে আসেন, তিনি অফিস রোমে গিয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার চেয়ারে বসে বললেন জি¦ বলেন আমিই মৎস্য অফিসার মোসাম্মৎ নাজমা আক্তার। এমনই ঘটনা ঘটছে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সিনিয়ির মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসাম্মৎ নাজমা আক্তার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, গত এক বছর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চলছে মুরাদনগর উপজেলা সিনিয়ির মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়টি। এছাড়া এই অফিসের সকল পদ শূর্ণ থাকায় আমি নিজেই কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিয়নের কাজসহ র্কাালয়টির সকল কাজ করতে হচ্ছে। অফিসে আমি মানুষ মাত্র একজন। তাই কষ্ট হলেও কোনো না কোনোভাবে কাজগুলো ম্যানেজ করে নিচ্ছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জনবল সংকটের বিষয়টি জানানো হয়েছে। শূন্য পদ গুলো পূরণ হলে কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।
জানা যায়, ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা, জেলার মধ্যে আয়তনে ও জনসংখ্যায় সর্ববৃহৎ হওয়ায় এখানে কাজও বেশি। তাই মাত্র একজন জনবল হওয়ায় দপ্তরটি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। বিভিন্ন কারণে সপ্তাহের অধিকাংশ সময় কার্যালয়টি থাকে তালাবদ্ধ। ফলে সাধারণ লোকজন এসে সেবা না নিয়েই ফেরত যেতে হয়। এ উপজেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্প, তেলাপিয়া, পাবদা, কৈ, শিং মাগুর, পাঙ্গাস অধিক মাত্রায় উৎপাদন হয়। এখানে সরকারি পুকুর রয়েছে ৭৮টি, ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ৯,০১৮টি, খাল ১৯টি, নদী ৩টি, মরা নদী ৭টি, ব্যক্তি মালিকানাধীন মৎস্য হ্যাচারী ৩টি, নার্সারী ২৫টি ও ৩৮টি মৎস্য খামারে প্রতি বছর ১১ হাজার ২৭৬ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়।
অফিস সূত্র জানা যায়, এ দপ্তরে অনুমোদিত পদ সংখ্যা হলো ৫টি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১ জন। অবশিষ্ট ৪ টি পদ শূন্য রয়েছে। শূণ্য পদগুলো হলো: উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা ০১, ক্ষেত্র সহকারি ০১, অফিস সহকারি ০১ ও অফিস সহায়ক ০১ জন। এক বছরের অধিক সময় ধরে এ পদগুলোতে লোকবল না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে অসুবিধা হচ্ছে। দপ্তরটি তালা খোলা থেকে শুরু করে সকল প্রকারের কাজ সামাল দিতে হয় একজনকে। ফলে সময় মতো দাপ্তরিক কাজগুলো করতে বেকায়দায় পড়তে হয়।
মৎস্য চাষি যোগেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, সপ্তাহে ৩দিন থাকে উপজেলা মৎস্য অফিস খোলা। এখান থেকে কোন ধরণের পরামর্শ নিতে হলে আগে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আসতে হয়। যারা যোগাযোগ করতে পারে না তারা উপজেলায় এসে ফিরে যেতে হয়।
কুমিল্লা উত্তর জেলা মৎস্যজীবী লীগের সদস্য সচিব রাজিব মুন্সি বলেন, বর্তমান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমার জানামতে সকল মৎস্য চাষীদের খোঁজ-খবর রাখেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। তবে এখানে জনবলের যে ঘাটতি আছে সেটি পূরণ করা হলে মৎস্য চাষীদের অনেক উপকার হবে। আমরা চাই দ্রæততম সময়ে যেন এ জনবল সংকট নিরসন করা হয়।
কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমাদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে এই সমস্যা শুধু মুরাদনগর উপজেলার না। সমগ্র বাংলাদেশের মৎস্য কার্যালয় গুলোর এখন একই চিত্র। আশা করছি এই সমস্যা বেশিদিন থাকবে না আগামী দুই মাসের মধ্যে মুরাদনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের শূন্য পদে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে ।