মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতা :
কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলায় রামচন্দ্রপুর দক্ষিন ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের ও পাচঁকিত্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও ধারন করে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে যৌন হয়রানি করায় লজ্জায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নিহতের পরিবার। আসামীপক্ষরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে অবাদে চলাফেরা করতে পারছেননা তারা।
মামলার আসামী মির্জাপুর গ্রামের ইদন মিয়ার ছেলে মহসিন পলাতক থাকলেও তার চাচা স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপন মিয়া বাদীকে ডেকে নিয়ে মামলা তুলে নিয়ে আপোস মিমাংসার প্রস্তাব দেয় না হলে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রধান করছে বলে জানান মামলার বাদী সাইদুল ইসলাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল বেলা নিহত স্কুলছাত্রীর মা তার সকল সস্তানদের নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করছেন। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে প্রতিবেশী একটি মহিলার মাধ্যমে সাংবাদিক এসেছে আপনাদের সাথে কথা বলার জন্য একথা বলার পর দরজা খুলেন তিনি। আর তখনই বুঝা গেল কতটা আতংকে দিনাতিপাত করছেন তারা। পরিবারের সকল সকল সদস্যদের সকলের চোখে মুখে শোকের সাথে এক অজানা আংতকের ছাপ।
সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে নিহত স্কুলছাত্রী কাজলের মা রুশিয়া বেগম বলেন, বাবা আমার মেয়েটা কোচিং ও স্কুলে যাওয়া আসার পথে তাকে উত্যক্ত করত এই মহসিন। আমার আশেপাশের বিভিন্ন ঘরে বসেও সে আমার মেয়ের দিকে কু-নজর দিতো। আমরা গরীব মানুষ ট্যাকা পয়সা নাই, প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নাই তাই সব কিছু চোখ বুঝে সহ্য করতাম। কিন্তু গত দেড়মাস আগে এই মহসিন গোপনে আমার মেয়ে গোসল করার সময় তার মোবাইলে ভিডিও করে তাকে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে থাকে। তার সাথে সম্পর্ক না করলে এ ভিডিও ইন্টারনেটে সব জায়গায় ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। গত শুক্রবার আমি বাড়ীতে না থাকায় রাতের বেলা মহসিন আমাদের ঘরে ডুকে আমার মেয়েকে নষ্ট করার চেষ্টা করে। ঘরের আরেক রুমে থাকা আমার বোন শব্দ পেয়ে এসে মহসিনকে দেখে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরদিন ( সেপ্টেম্বর) দুপুরে আমার মেয়ের আত্মহত্যার খবর পাই। আমার মেয়ে মৃত্যুর আগে তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘মারলেও পাপ, মরলেও পাপ, আমি কাউকে মারতে পারবো না তাই নিজেই চলে গেলাম’। আমি আমার মেয়ে এই মৃত্যুর বিচার চাই, প্রশাসনের কাছে আমার পরিবারের সদস্যদেরও নিরাপত্তা চাই।
ইউপি সদস্য স্বাপন মিয়া হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাদী সাইদুল নিজে আমার বাড়ীতে এসে বিষয়টি আপোস মিমাংসার প্রস্তাব দেয়। পরে আমি বিষয়টি মিমাংসা করার ব্যাবস্থা গ্রহন করেছিলাম।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মন্জুর আলম বলেন, হুমকির বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য গত ৬ই সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে পাঁচকিত্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠশ্রেণির শিক্ষার্থী ও মির্জাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে কাজল আক্তার রিয়া(১৩) তাহার নিজ বাড়ীতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর নিহতের ভাই সাইদুল ইসলাম ধর্ষন ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বখাটে মহসিন মিয়াকে আসামী মুরাদনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।