হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে কোন প্রকার কাজ কর্ম না জানা সত্বেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জোসনা বেগম। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ ওঠেছে। ফলে ওই ইউনিয়নে সকল কাজকর্ম স্থবির হয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ল্যাবটব, প্রিন্টার, স্ক্যানার ও কম্পিউটার পর্যাপ্ত পরিমান থাকা সত্বেও অনলাইনে কাজ না জানায় ইউপি সচিব জোসনা বেগম বিভিন্ন দোকান থেকে অফিসিয়াল কাজগুলো করে থাকে। যার ফলে জন্ম নিবন্ধনসহ অনলাইনের সকল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। অফিস চলাকালে অনলাইনের কোন কাগজপত্র নিতে আসলে তিনি সার্ভার ডাইরিতে লিখে রাখে। সার্ভার ও নেট সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন গ্রহকদের হয়রানি করছে। যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা পান তাদেরকে ৭দিন পর যোগাযোগ করতে বলেন। এ সুযোগে তিনি পরিষদের বিভিন্ন কাগজপত্র তার বাড়িতে এবং বিভিন্ন দোকান থেকে প্রিন্ট করে থাকেন বলে জানা গেছে। সময় সুযোগ মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পেয়ে প্রতিদিন শত শত লোকজন ফেরত যাচ্ছে। এতে পরিষদের বিভিন্ন কাজের যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি ভোগান্তিতে পড়ছে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সাধারণ জনগণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন জন্ম নিবন্ধন ও জন্ম নিবন্ধন সংশোধনসহ বিভিন্ন সনদ প্রদানে তিনি ৫শ’ টাকা করে ফি আদায় করেন। এ ছাড়া তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কম বয়সী নাবালিকা মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ দেওয়ার মাধ্যমে বাল্য বিবাহকে সহযোগিতা করছেন। ফলে তিনি প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর এর প্রতিবাদ করলে ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও সাধারণ লোকজনের সাথে সচিব জোসনা বেগম অশোভন আচরণ করে থাকেন। ইতিমধ্যে তিনি দারোরা ইউনিয়নে থাকাবস্থায়ও এ ভাবে মানুষকে হয়রানি করে আসছিলেন বলে জানা গেছে।
ইউপি সচিব জোসনা বেগম ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত যাত্রাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে ছিলেন। তখনও তার বিরুদ্ধে অসাধু কর্মকান্ডের ব্যাপারে বিস্তর অভিযোগ ওঠেছিল। যার কারণে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
যাত্রাপুর গ্রামের পাপিয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামীর জন্ম সনদে ভূল থাকায় সংশোধনের জন্য যথা নিয়মে আবেদন করি। জন্ম সনদ সংশোধনের কপি চাইলে ইউপি সচিব জোসনা বেগম আমার কাছ থেকে ৫শ’ টাকা দাবি করে। ৫শ’ টাকা কেন জানতে চাইলে তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন। জরুরী প্রয়োজন বিধায় বাধ্য হয়ে সচিব জোসনা বেগমকে ৫শ’ টাকা দিয়েই জন্ম নিবন্ধনের কপি সংগ্রহ করি।
মোচাগড়া গ্রামের জুলেখা বেগম নামের এক অসহায় নারী বলেন, সন্তানের জন্ম নিবন্ধন নিতে সচিব জোসনা বেগমকে ৪শ’ ৬০ টাকা দিয়েছি। ৪০ টাকা না দেওয়ায় তিনি আমাকে ১৫ দিন ধরে ঘুরাচ্ছে।
ভূক্তভোগিদের দাবি, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সরলতার সুযোগে অভিযুক্ত ইউপি সচিব জোসনা বেগম বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ওই সচিবকে যাত্রাপুর ইউনিয়ন থেকে জরুরী ভিত্তিতে প্রত্যাহারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন তারা।
কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, কম্পিউটার না জানা সচিবের কারণে ওয়ার্ডে আমাদেরও সাধারণ মানুষের কাছে হেনস্থা হতে হচ্ছে। অতিসত্বর তাকে সরিয়ে না নিলে আমাদেরও সদস্য পদ চালিয়ে যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সচিব জোসনা বেগম তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সার্ভার ও নেট সমস্যার কারণে আমি অফিসে কাজ করতে পারি না। অফিসের কাজগুলো আমি বাসায় গিয়ে প্রিন্ট বের করে পরের দিন গ্রাহকদের কাছে পৌঁেছ দেই।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।