ঢাকা ০৩:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুদ্ধজাহাজ রফতানি করবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্কঃ

বাংলাদেশের নৌবাহিনী ধীরে ধীরে বায়ার বাহিনী থেকে বিল্ডার বাহিনীতে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে অচিরেই তা রফতানির কথাও জানিয়েছেন তিনি। রোববার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিকে নবীন ক্যাডেটদের কমিশন উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে ভাষণ দিতে গিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ২৯২ জন মেইকশিফট ম্যান ও ১২ জন ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার কমিশন পান। তারা প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান।

কমিশন প্রাপ্তদের মধ্যে ২১ জন নারী কর্মকর্তা। একে খুশি হওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নে একটা বিরাট দৃষ্টান্ত। বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী নেভাল একাডেমিতে পৌঁছেন। এরপর তিনি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে রাখা বক্তব্যে তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করতে এবং বাহিনীর শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ দেন। সরকার নৌবাহিনীর উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তারও বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন নিয়েও কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৌবাহিনীকে আরও আধুনিকায়ন করা ও যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। এই বাহিনীর কাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে এভিয়েশন সুবিধাসম্বলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি এবং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে। সাবমেরিনের সুষ্ঠু পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং জেটি সুবিধা প্রদানের জন্য কুতুবদিয়ায় আমরা একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজও এগিয়ে নিয়ে যা্চ্ছি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সন্দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজের সুবিধাসম্বলিত ফ্লিপ সদরদপ্তরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে সমুদ্র এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জের ডক ইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ দুর্গম নিশান’র নৌবহরে কমিশন পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এছাড়া চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির কাজ এগিয়ে চলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বায়ার নৌবাহিনী থেকে বিল্ডার নৌবাহিনীতে পরিণত করতে সক্ষম হবো। আমরা নিজেরাই পারব যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে, আমরা নিজেরা এটা রফতানিও করতে পারব।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা প্রস্তাবে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদরদপ্তর চট্টগ্রামে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তা করেনি। এখন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, আর আমাদের নৌবাহিনীকে ধীরে ধীরে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই কমপ্লেক্স চালু হলে এখানে আরও বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থীকে আরও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।

ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এই ধরনের আয়োজনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য পথিকৃত হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে সমুদ্রসীমা অর্জনের কথা তুলে ধরে তা রক্ষণাবেক্ষণে নৌবাহিনীর গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সমুদ্রসীমা অর্জনের পর বিরাট দায়িত্ব বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্পদ আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজে যাতে আমরা ব্যবহার করতে পারি সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আমরা গড়ে তুলেছি। আর এই বিশালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নৌবাহিনীর ওপর।

রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তিনি আশা করছেন দ্রুত তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হবে। এরআগে নবীন ক্যাডেটদের মধ্যে প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য পুরস্কৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অর্জনকারী নাসিমুল আলমকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ব্যাচ দেয়া হয়। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে নৌপ্রধান স্বর্ণপদক পান সীমান্ত নদী আকাশ। আর তৃতীয় স্থান অর্জন করে সোর্ড অব অনার পান সোহানুর রহমান।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে শিক্ষকদের জাতীয়করণ ও শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবিতে মানববন্ধন

যুদ্ধজাহাজ রফতানি করবে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় ১২:৩২:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ

বাংলাদেশের নৌবাহিনী ধীরে ধীরে বায়ার বাহিনী থেকে বিল্ডার বাহিনীতে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে অচিরেই তা রফতানির কথাও জানিয়েছেন তিনি। রোববার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিকে নবীন ক্যাডেটদের কমিশন উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে ভাষণ দিতে গিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ২৯২ জন মেইকশিফট ম্যান ও ১২ জন ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার কমিশন পান। তারা প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান।

কমিশন প্রাপ্তদের মধ্যে ২১ জন নারী কর্মকর্তা। একে খুশি হওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়নে একটা বিরাট দৃষ্টান্ত। বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী নেভাল একাডেমিতে পৌঁছেন। এরপর তিনি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। এরপর নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে রাখা বক্তব্যে তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করতে এবং বাহিনীর শৃঙ্খলা মেনে চলার নির্দেশ দেন। সরকার নৌবাহিনীর উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তারও বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন নিয়েও কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৌবাহিনীকে আরও আধুনিকায়ন করা ও যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। এই বাহিনীর কাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে এভিয়েশন সুবিধাসম্বলিত নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটি এবং ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে। সাবমেরিনের সুষ্ঠু পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং জেটি সুবিধা প্রদানের জন্য কুতুবদিয়ায় আমরা একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের কাজও এগিয়ে নিয়ে যা্চ্ছি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সন্দ্বীপ চ্যানেলে জাহাজের সুবিধাসম্বলিত ফ্লিপ সদরদপ্তরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে সমুদ্র এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জের ডক ইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত যুদ্ধজাহাজ দুর্গম নিশান’র নৌবহরে কমিশন পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এছাড়া চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক ফ্রিগেট তৈরির কাজ এগিয়ে চলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বায়ার নৌবাহিনী থেকে বিল্ডার নৌবাহিনীতে পরিণত করতে সক্ষম হবো। আমরা নিজেরাই পারব যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে, আমরা নিজেরা এটা রফতানিও করতে পারব।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা প্রস্তাবে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদরদপ্তর চট্টগ্রামে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তা করেনি। এখন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ, আর আমাদের নৌবাহিনীকে ধীরে ধীরে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক একাডেমি কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই কমপ্লেক্স চালু হলে এখানে আরও বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষণার্থীকে আরও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে।

ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এই ধরনের আয়োজনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, বাংলাদেশকে এই অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য পথিকৃত হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে সমুদ্রসীমা অর্জনের কথা তুলে ধরে তা রক্ষণাবেক্ষণে নৌবাহিনীর গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সমুদ্রসীমা অর্জনের পর বিরাট দায়িত্ব বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্পদ আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজে যাতে আমরা ব্যবহার করতে পারি সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আমরা গড়ে তুলেছি। আর এই বিশালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নৌবাহিনীর ওপর।

রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তিনি আশা করছেন দ্রুত তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হবে। এরআগে নবীন ক্যাডেটদের মধ্যে প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য পুরস্কৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অর্জনকারী নাসিমুল আলমকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ব্যাচ দেয়া হয়। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে নৌপ্রধান স্বর্ণপদক পান সীমান্ত নদী আকাশ। আর তৃতীয় স্থান অর্জন করে সোর্ড অব অনার পান সোহানুর রহমান।