ঢাকা ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানের প্রথম দিনেই চকের ইফতার বাজার সরগরম

জাতীয় ডেস্কঃ

এ যেন এক উত্সব। পুরান ঢাকার অধিবাসীরা দোকানের ইফতারিতেই অভ্যস্ত। অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও চকবাজারে আসেন ইফতারি কিনতে।

নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের মনকাড়া সুবাস চারদিকে। আর সেই সুবাসকে উসকে দিচ্ছে বিক্রেতার হাঁকডাক ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’। পুরান ঢাকার চকের ইফতার বাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য। এক অন্যরকম আমেজ। কালের বিবর্তনে ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার যেন এক উত্সবে পরিণত হয়েছে। গতকাল রবিবার এক বছর পর পহেলা রমজানে সেই উত্সবে মিলল রোজাদাররা।

বিক্রেতারা জানান, পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বাড়ির তৈরি ইফতারির চেয়ে দোকানে তৈরি ইফতারি দিয়েই ইফতার করতে অভ্যস্ত। যে কারণে পুরো রমজান জুড়েই চকের ইফতারির বাজার থাকে সরগরম। তবে শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দারাই নন, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও রমজানে চক বাজার থেকে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসেন। এবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।

এ দিকে গতকাল ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন চকের ইফতার বাজার পরিদর্শনে ইফতারির খাদ্যসামগ্রিতে ভেজাল না মেশানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ানো যাবে না।

ঐতিহাসিক মতে, মোগল আমলে পুরনো ঢাকার চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনে একটি কূপ ছিল। তার চারপাশে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করা হতো হরেক রকম নবাবী ইফতার সামগ্রী। এখন সেই কূপ নেই, আগের মতোই মসজিদের সামনে রাস্তার উপর চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করা হয় ইফতার সামগ্রী।

নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ বইয়ে উল্লেখ আছে, ‘১৮৫৭ সালের আগেই চকবাজারে গড়ে ওঠে নানা রকম মুখরোচক খাবারের দোকান। রমজানের সময় মোগলাই খাবার এবং রকমারি ইফতারি বিক্রি করা হতো এখানে। এ সব ইফতার সামগ্রী শুধু নামে নয় স্বাদেও অনন্য।

গতকাল পুরনো ঢাকার পাশাপাশি রাজধানীর অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও চকবাজারে ছুটে আসেন ইফতার সামগ্রী কিনতে। ধানমন্ডি থেকে চকবাজারে ইফতারি কিনতে আসা আজিম বলেন, এখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাহারি ইফতার বিক্রি হয়। তারপরও প্রথম রমজানে চকবাজারে আসি ইফতার কিনতে। এখানে আসলে আলাদা এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে, জানান তিনি। একইকথা বললেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আলতাফ। তিনি বলেন, এখানে ইফতার কিনতে না এলে মনে হয় রমজানই শুরু হয়নি। তবে প্রতিদিন তো আর সম্ভব হয় না। সবমিলিয়ে রমজানের ৪/৫ দিন এখান থেকে ইফতার কিনি।

এখানে ঐতিহ্যবাহী ইফতার পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খাবার হচ্ছে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’। পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। এ খাবারটি মোট ৩৬টি আইটেম ও ১৮টি মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। গরুর মগজ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডিম, আলু, ঘি, বুটের ডালসহ নানা পদের খাবার ও নানা ধরনের মসলার মিশ্রণে খাবারটি তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩’শ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাবারের মধ্যে খাসির কাবাব প্রতি কেজি ৮০০, গরুর কাবাবের কেজি ৬০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট প্রতি পিস ৪০০  থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি ছোট মুরগি রোস্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা,  কবুতরের রোস্ট ১৩০ টাকা। এ ছাড়া চিকন জিলাপি কেজি ১২০ টাকা, বড় শাহী জিলাপি ২০০ টাকা, দইবড়া কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চিকেন স্টিক পিস ৭০ থেকে ৯০ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ৪৫ টাকা, বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কিমা পরোটা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টানা পরোটা ২০ টাকা পিস, হালিম (বাটির আকারভেদে) ৬০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, সমুচা ৫ থেকে ১০ টাকা, পনির সমুচা ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, বেগুনি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।

ইফতার সামগ্রীর দাম বাড়তি প্রসঙ্গে বিক্রেতা হোসেন বললেন, এ বছর গরু ও খাসির মাংসের দাম অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি। এজন্যই ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসি’র মত বিনিময়

রমজানের প্রথম দিনেই চকের ইফতার বাজার সরগরম

আপডেট সময় ০১:৩৮:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ

এ যেন এক উত্সব। পুরান ঢাকার অধিবাসীরা দোকানের ইফতারিতেই অভ্যস্ত। অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও চকবাজারে আসেন ইফতারি কিনতে।

নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের মনকাড়া সুবাস চারদিকে। আর সেই সুবাসকে উসকে দিচ্ছে বিক্রেতার হাঁকডাক ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’। পুরান ঢাকার চকের ইফতার বাজারের সেই পরিচিত দৃশ্য। এক অন্যরকম আমেজ। কালের বিবর্তনে ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার যেন এক উত্সবে পরিণত হয়েছে। গতকাল রবিবার এক বছর পর পহেলা রমজানে সেই উত্সবে মিলল রোজাদাররা।

বিক্রেতারা জানান, পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বাড়ির তৈরি ইফতারির চেয়ে দোকানে তৈরি ইফতারি দিয়েই ইফতার করতে অভ্যস্ত। যে কারণে পুরো রমজান জুড়েই চকের ইফতারির বাজার থাকে সরগরম। তবে শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দারাই নন, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও রমজানে চক বাজার থেকে ইফতার সামগ্রী কিনতে আসেন। এবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ইফতার সামগ্রীর দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।

এ দিকে গতকাল ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন চকের ইফতার বাজার পরিদর্শনে ইফতারির খাদ্যসামগ্রিতে ভেজাল না মেশানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ানো যাবে না।

ঐতিহাসিক মতে, মোগল আমলে পুরনো ঢাকার চকবাজারের শাহী মসজিদের সামনে একটি কূপ ছিল। তার চারপাশে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করা হতো হরেক রকম নবাবী ইফতার সামগ্রী। এখন সেই কূপ নেই, আগের মতোই মসজিদের সামনে রাস্তার উপর চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করা হয় ইফতার সামগ্রী।

নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ বইয়ে উল্লেখ আছে, ‘১৮৫৭ সালের আগেই চকবাজারে গড়ে ওঠে নানা রকম মুখরোচক খাবারের দোকান। রমজানের সময় মোগলাই খাবার এবং রকমারি ইফতারি বিক্রি করা হতো এখানে। এ সব ইফতার সামগ্রী শুধু নামে নয় স্বাদেও অনন্য।

গতকাল পুরনো ঢাকার পাশাপাশি রাজধানীর অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও চকবাজারে ছুটে আসেন ইফতার সামগ্রী কিনতে। ধানমন্ডি থেকে চকবাজারে ইফতারি কিনতে আসা আজিম বলেন, এখন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাহারি ইফতার বিক্রি হয়। তারপরও প্রথম রমজানে চকবাজারে আসি ইফতার কিনতে। এখানে আসলে আলাদা এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে, জানান তিনি। একইকথা বললেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আলতাফ। তিনি বলেন, এখানে ইফতার কিনতে না এলে মনে হয় রমজানই শুরু হয়নি। তবে প্রতিদিন তো আর সম্ভব হয় না। সবমিলিয়ে রমজানের ৪/৫ দিন এখান থেকে ইফতার কিনি।

এখানে ঐতিহ্যবাহী ইফতার পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত খাবার হচ্ছে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’। পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার এটি। এ খাবারটি মোট ৩৬টি আইটেম ও ১৮টি মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। গরুর মগজ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডিম, আলু, ঘি, বুটের ডালসহ নানা পদের খাবার ও নানা ধরনের মসলার মিশ্রণে খাবারটি তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩’শ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাবারের মধ্যে খাসির কাবাব প্রতি কেজি ৮০০, গরুর কাবাবের কেজি ৬০০ টাকা। খাসির রানের রোস্ট প্রতি পিস ৪০০  থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি ছোট মুরগি রোস্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা,  কবুতরের রোস্ট ১৩০ টাকা। এ ছাড়া চিকন জিলাপি কেজি ১২০ টাকা, বড় শাহী জিলাপি ২০০ টাকা, দইবড়া কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চিকেন স্টিক পিস ৭০ থেকে ৯০ টাকা, জালি কাবাব ২০ থেকে ৪৫ টাকা, বিফ স্টিক ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কিমা পরোটা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টানা পরোটা ২০ টাকা পিস, হালিম (বাটির আকারভেদে) ৬০ থেকে ৩০০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, সমুচা ৫ থেকে ১০ টাকা, পনির সমুচা ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, বেগুনি ৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।

ইফতার সামগ্রীর দাম বাড়তি প্রসঙ্গে বিক্রেতা হোসেন বললেন, এ বছর গরু ও খাসির মাংসের দাম অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি। এজন্যই ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে।