অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
কানাডার পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মাগদালেন দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। কুইবেকের নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপের মাঝামাঝি আধা কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে মাগদালানের বিস্তৃতি। অনেকে এটিকে লেস ইলেস-ডে-লা-মাডালেইন নামেও ডাকে। এই দ্বীপপুঞ্জে দিক হারিয়েছে হাজারো জাহাজ! সপ্তদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে এখানে অন্তত ৫০০ থেকে এক হাজার জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। মাত্র আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এত বেশি জাহাজ ডুবির ঘটনা তাই অনেকের কাছেই এক বিস্ময়কর রূপকথার মতো শোনাতে পারে। কি কারণে সেখানে এত বেশি জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তা নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কারো কারো মতে, অশুভ কোনো শক্তির প্রভাবেই ঘটে থাকতে পারে ঐ সব দুর্ঘটনা। সেখানে সাগরের তলদেশে চোরাবালি, গোপন চর, বালুর বাঁধ কিংবা পাথরের কারণেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। মূলত ঐ সময় পর্যন্ত লাইট হাউজ কিংবা নৌ-বিদ্যার মতো যুগান্তকারী কোনো জ্ঞান ছিল না জাহাজের নাবিকদের। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সাগর পথে নানা বিপদ-আপদ সংক্রান্ত কৌশলগুলো যুক্ত হয় নৌ চলাচল ব্যবস্থায়।
১৮২৭ সালে রয়েল নেভি সার্ভেতে অংশ নেওয়া ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড বক্সার ঐ অঞ্চল ঘুরে এক প্রতিবেদনে জানান, সেইন্ট লরেন্সের উপকূলে লাইট হাউজ স্থাপন করাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। অনিয়মিত এবং শক্তিশালী স্রোত এখানকার একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। এ কারণে এখানকার নৌ চলাচল খুবই বিপজ্জনক। পুরো এলাকায় একটিও লাইট হাউজ নেই। এই দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে এত বেশি সংখ্যক জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে যে সেগুলোকে খুঁজে বের করাটা শুধু কঠিনই নয় অসাধ্যও বটে। এখানে কি পরিমাণ মানুষের সলিল সমাধি হয়েছে সে হিসাবও অসম্ভব।
তীব্র স্রোতের পাশাপাশি বাতাসের তীব্র গতি, সমুদ্রের ভারী পানি, তীব্র শীত এবং বরফ নানা কারণে এই উপকূল নাবিকদের জন্য হয়ে উঠত মৃত্যু উপকূল। কুয়াশার কারণে গতিপথ ঠিক রাখাও নাবিকদের পক্ষে সম্ভব হতো না। মজার বিষয় হলো, ভয়াবহ এই উপকূল ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এক জনগোষ্ঠী। মূলত দুর্ঘটনার কারণে জাহাজ ডুবির পরে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষরা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষদের থেকে বর্তমানে সেখানকার জনসংখ্যা ১২ হাজার ৮০০ জন।-আউলকেশন ডট কম