জাতীয় ডেস্কঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর প্রচারণার নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। সারাদেশে সভা-সেমিনার, পথনাটক, গান, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে সরকারের সফলতাসহ বিএনপির অতীত অপকর্ম তুলে ধরবে দলটি। সরকারের সাড়ে ৮ বছরের সাফল্য তুলে ধরতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। বিএনপির অতীত অপকর্মও প্রচারণার উপযোগী করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিলবোর্ড প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। জানা গেছে, ঈদের পর জেলায় জেলায় দলীয় সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠকের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আলোচনা, গান ও পথনাটকের মাধ্যমে প্রচার করবে দলের সাফল্য গাথা। বিভিন্ন এলাকায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে চলবে প্রদর্শনী।
সূত্র জানায়, সরকারের যেসব সফলতার কথা প্রচার করা হবে তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুত্ উত্পাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য। দেশে ৩৩০০ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ৮ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদিত হচ্ছে। এখন আর লোডশেডিং নেই বললেই চলে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার চিত্রও তুলে ধরা হবে। এছাড়া রাজধানীর যানজট কমাতে চারটি ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস চালু করা, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন দৃশ্যমান করা, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের কাজ শুরু হওয়া, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলের পরিকল্পনায় অনেকাংশে অগ্রসর হওয়া, বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যবই নিশ্চিত করা, শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও এক হাজারের বেশি বেসরকারি বিদ্যালয় সরকারিকরণ, কৃষি খাতে তেল ও সারের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনে পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপনে সামগ্রিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি মোকাবিলার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা বিজয়সহ বিভিন্ন সফলতা প্রচারণায় থাকবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, বিএনপির অতীত কার্যক্রম এবং আওয়ামী লীগের সাফল্য তুলে ধরতে ঈদুল ফিতরের পরই মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশে কী অরাজক পরিস্থিতি ছিল, মানুষ কীভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে, দুর্নীতি-দুঃশাসন চলেছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের উত্থান হয়েছে- সেই কথাগুলো সাধারণ মানুষকে আবারও মনে করিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে একাদশ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধের আগেই দুই দলের নেতাদের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ঈদের পর এটা আরো জোড়ালোভাবে চলবে। সম্প্রতি এক ইফতার পার্টিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর। ওই সময় দেশ থেকে সব অন্যায়-অত্যাচার বিদায় নেবে।’ এ বক্তব্যের পরদিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরবর্তী একাদশ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। সেটা হবে আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক বিজয়, আর বিএনপির হ্যাটট্রিক পরাজয়।’ এরপর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পায়ের তলায় মাটি নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ৩০টির বেশি আসন পাবে না।’ পরে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশের মানুষ এক কাপড়ে বিদায় করে দেবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে দেশ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করবেন খালেদা জিয়া। প্রচারণায় এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।’
সহায়ক সরকার নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি
আনোয়ার আলদীন
পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে অবস্থান নিবে। জানা গেছে, সহায়ক সরকারের রূপরেখায় নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা না রেখে কিভাবে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব সেই বিষয়টিই গুরুত্ব পাচ্ছে। এই রূপরেখার একাধিক খসড়া এখন খালেদা জিয়ার হাতে। খসড়া নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছেন দলের সিনিয়র নেতা ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে।
দলের একজন সিনিয়র আইনজীবী নেতা জানান, বর্তমান সংবিধানের কোথাও নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু নেই। এজন্য সরকারের আন্তরিকতা ও সমঝোতা ছাড়া কিছু হবে না। ফলে রূপরেখায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সমঝোতাকে। তাই একাধিক বিকল্প রাখা হয়েছে। বিএনপি আশা করে সরকার সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও দেশের স্বার্থে ছাড় দিবে। ঈদের পরে রূপরেখা চূড়ান্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞদের ডেকে পরামর্শ নিবেন বেগম জিয়া।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের দুই জন থিঙ্কট্যাংককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহের জন্য। যে সব দেশে পক্ষপাতহীন বা কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে, সে সব দেশে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো কেমন-তা জানাতে বলা হয়েছে বেগম জিয়াকে। এই রূপরেখায় তা উদহারণ হিসাবে পেশ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, প্রস্তাবিত সহায়ক সরকারের মূল ভিত্তি হচ্ছে দল নিরপেক্ষতা। নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নিরপেক্ষ। তা না হলে পরে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। রাষ্ট্রপতি বা প্রধান বিচারপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব থাকতে পারে। একাধিক বিকল্প প্রস্তাবও থাকতে পারে। যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া অবলম্বনের প্রস্তাবও থাকতে পারে।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন নেতা জানান, ১৯৯০ সালের মতো সব দলের সম্মতির ভিত্তিতে কিভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব সেটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই রূপরেখায়। কারণ সব দলের সম্মতি থাকলে যে কোন রূপরেখায় নির্বাচন করা সম্ভব।
এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েকটি ইফতার মাহফিলে বলেছেন, এ দেশে নির্বাচন হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নয়, তাদের ক্ষমতার বাইরে রেখে। ঈদের পরে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। প্রয়োজনে জনগণ রাজপথে নামবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ঈদের পরে বেগম খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। সেই রূপরেখা সরকার মানলে ভালো। না হলে রাজপথে নেমেই দাবি আদায় করা হবে।
প্রসঙ্গত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দু’দফা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এবার নির্বাচনকালীন নতুন এক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ১৯৯৬ সালে তত্কালীন বিএনপি সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়।