ঢাকা ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া শুরু

জাতীয় ডেস্কঃ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ২৯ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা দলকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যম্পগুলোকে করোনামুক্ত আর সেখানে জায়গা না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হলো।

দালালচক্রের সহায়তায় শনিবার রাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় রোহিঙ্গাদের এই দলটিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করে কোস্টগার্ড। মিয়ানমার থেকে ন করোনা ছড়াতে পারে সন্দেহে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। তবে কতজন রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানাননি তিনি।

মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ছোট একটি রোহিঙ্গা দলকে স্থানীয়দের সহায়তায় কোস্টাল গার্ড আটক করে। এদের ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। সঠিক কতজন আছে আমি জানি না। আমাদের ভয় আমাদের ক্যাম্পগুলো এখনও করোনামুক্ত। আমাদের ভয় এদের মধ্যে কারও যদি করোনা থেকে থাকে বাকি সবগুলো নষ্ট করে দিবে।‘

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এজন্য এদের দূরে, একেবারে ভাসানচরে নিয়ে রেখছি। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে তাদের রাখার মত জায়গাও নেই। তাই ওখানে পাঠানো হয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলছেন, ভাসানচরে প্রত্যাবর্তন করা রোহিঙ্গাদের দেখভাল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ওপর ন্যস্ত থাকছে। তাদের থাকা-খাওয়ার সব ধরণের ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুবুল আলম তালুকদার মুঠোফোনে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি। তবে অফিসিয়ালি চিঠি পাইনি। আটক করা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়ে গেছে। সেখানে আপাতত ২৯ জন রয়েছে। ভাসানচরে পাঠানো রোহিঙ্গারা নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছে।’

দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরে চেষ্টা চালাচ্ছিল সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা ও বৈষম্য বন্ধে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়ের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে সরকার সমালোচনার মুখে পড়তে চায় না বলে সরকার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সরে আসার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ পরিস্থিতি দেখতে ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর থেকে সরকার আপাতত সরে আসছে বলে আলোচনার শুরু হয়।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকেও এটা নিয়ে কথা বলেন। এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, রোহিঙ্গা সেখানে না যেতে চাইলে আমাদের দেশের অসহায় মানুষকে সেখানে রাখা হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ পুরো কক্সবাজার লকডাউন করা হয়েছে। তবে ক্যাম্পগুলোর সব জরুরি কার্যক্রম চালু রয়েছে। আর সারাদেশে করোনা শনাক্তের সংবাদ আসলেও এখনও কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানবপাচারকারীরা পাঁচশ রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টায় সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা সাগরে ভাসতে থাকে। পরে অবশ্য তাদের আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে তীরগুলো থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে নানান স্তরে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দেয়, ঢাকার পক্ষে আর একজন রোহিঙ্গাকেও জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ বিষয়ে ঢাকা তাদের ভাষ্য নিশ্চিত করলেও এখনো বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ভেড়াতে অনুরোধ করে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকা তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জলসীমায় নেই। কাজেই তাদের গ্রহণের বাধ্যবাধকতা নেই বাংলাদেশের।

গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে সাগরে ভাসা শ’পাঁচেক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য আন্দামান ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ‘মানবিক’ও ‘উদার’ বাংলাদেশকে অনুকরণ করার পরামর্শ দিয়েছে ইইউ।

এ প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইইউ থেকে ইতিবাচক বার্তা এসেছে। অনেকদিন তো ওনারা এসব নিয়ে কথা বলেননি। তারা শুধু আমাদের উপদেশ দেয়। তারা আমাদের পেয়ে গেছে। আমাদের অবস্থান এখন শক্ত। আমরা চাই না কোনো লোক সাগরে মরুক। কিন্তু আমরা আর রোহিঙ্গা নিতে চাই না। এ সময় ইইউ কথা বলেছে।’

নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার–জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছ গ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ আছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করেও নানা টালবাহানা করছে মিয়ানমার। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে নতুন করে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের দমন-পীড়ন শুরুর পর। এর আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয় প্রক্রিয়া।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলেও বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা নিচ্ছে। ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের দেওয়া ৫০ হাজার রোহিঙ্গার সবশেষ তালিকাটিও মিয়ানমার নিয়েছে। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ১ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েছে মিয়ানমার। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনের অধিবাসী বলে স্বীকার করেছে তারা। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাকেও এখন পর্যন্ত নেয়নি দেশটি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া শুরু

আপডেট সময় ১১:২৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ মে ২০২০

জাতীয় ডেস্কঃ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ২৯ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা দলকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যম্পগুলোকে করোনামুক্ত আর সেখানে জায়গা না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হলো।

দালালচক্রের সহায়তায় শনিবার রাতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় রোহিঙ্গাদের এই দলটিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করে কোস্টগার্ড। মিয়ানমার থেকে ন করোনা ছড়াতে পারে সন্দেহে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। তবে কতজন রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানাননি তিনি।

মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ছোট একটি রোহিঙ্গা দলকে স্থানীয়দের সহায়তায় কোস্টাল গার্ড আটক করে। এদের ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। সঠিক কতজন আছে আমি জানি না। আমাদের ভয় আমাদের ক্যাম্পগুলো এখনও করোনামুক্ত। আমাদের ভয় এদের মধ্যে কারও যদি করোনা থেকে থাকে বাকি সবগুলো নষ্ট করে দিবে।‘

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এজন্য এদের দূরে, একেবারে ভাসানচরে নিয়ে রেখছি। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে তাদের রাখার মত জায়গাও নেই। তাই ওখানে পাঠানো হয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলছেন, ভাসানচরে প্রত্যাবর্তন করা রোহিঙ্গাদের দেখভাল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ওপর ন্যস্ত থাকছে। তাদের থাকা-খাওয়ার সব ধরণের ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুবুল আলম তালুকদার মুঠোফোনে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি। তবে অফিসিয়ালি চিঠি পাইনি। আটক করা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়ে গেছে। সেখানে আপাতত ২৯ জন রয়েছে। ভাসানচরে পাঠানো রোহিঙ্গারা নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছে।’

দীর্ঘদিন থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরে চেষ্টা চালাচ্ছিল সরকার। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংসতা ও বৈষম্য বন্ধে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়ের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে সরকার সমালোচনার মুখে পড়তে চায় না বলে সরকার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সরে আসার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ পরিস্থিতি দেখতে ১৩ ফেব্রুয়ারি সেখানে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর থেকে সরকার আপাতত সরে আসছে বলে আলোচনার শুরু হয়।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকেও এটা নিয়ে কথা বলেন। এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, রোহিঙ্গা সেখানে না যেতে চাইলে আমাদের দেশের অসহায় মানুষকে সেখানে রাখা হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ পুরো কক্সবাজার লকডাউন করা হয়েছে। তবে ক্যাম্পগুলোর সব জরুরি কার্যক্রম চালু রয়েছে। আর সারাদেশে করোনা শনাক্তের সংবাদ আসলেও এখনও কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানবপাচারকারীরা পাঁচশ রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টায় সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা সাগরে ভাসতে থাকে। পরে অবশ্য তাদের আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে তীরগুলো থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে বিভিন্ন জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে নানান স্তরে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দেয়, ঢাকার পক্ষে আর একজন রোহিঙ্গাকেও জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ বিষয়ে ঢাকা তাদের ভাষ্য নিশ্চিত করলেও এখনো বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ভেড়াতে অনুরোধ করে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকা তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জলসীমায় নেই। কাজেই তাদের গ্রহণের বাধ্যবাধকতা নেই বাংলাদেশের।

গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে সাগরে ভাসা শ’পাঁচেক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য আন্দামান ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ‘মানবিক’ও ‘উদার’ বাংলাদেশকে অনুকরণ করার পরামর্শ দিয়েছে ইইউ।

এ প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে ইইউ থেকে ইতিবাচক বার্তা এসেছে। অনেকদিন তো ওনারা এসব নিয়ে কথা বলেননি। তারা শুধু আমাদের উপদেশ দেয়। তারা আমাদের পেয়ে গেছে। আমাদের অবস্থান এখন শক্ত। আমরা চাই না কোনো লোক সাগরে মরুক। কিন্তু আমরা আর রোহিঙ্গা নিতে চাই না। এ সময় ইইউ কথা বলেছে।’

নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার–জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছ গ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ আছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করেও নানা টালবাহানা করছে মিয়ানমার। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে নতুন করে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের দমন-পীড়ন শুরুর পর। এর আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয় প্রক্রিয়া।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলেও বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা নিচ্ছে। ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের দেওয়া ৫০ হাজার রোহিঙ্গার সবশেষ তালিকাটিও মিয়ানমার নিয়েছে। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ১ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েছে মিয়ানমার। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনের অধিবাসী বলে স্বীকার করেছে তারা। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাকেও এখন পর্যন্ত নেয়নি দেশটি।