জাতীয় ডেস্কঃ
রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ গ্রান্ডি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে অবস্থান করা আট লাখ রোহিঙ্গা বাড়ি ফিরতে পারবে কি না এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। গতকাল বুধবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার উদ্বেগের কথা জানান। এর আগে তিনি বাংলাদেশের উখিয়া ও টেকনাফ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।
আগামী সপ্তাহে জেনেভায় রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন অবস্থা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন গ্রান্ডি। তিনি একে ব্যাপক জটিল ইস্যু আখ্যা দিয়েছেন। বলেন, এটা স্পষ্ট যে, এই সংকটের উত্পত্তি মিয়ানমারে। এর সমাধানও সেখানে।
এদিকে, মিয়ানমার সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের যে বাড়িঘর ও ভিটা জ্বালিয়ে দিয়েছিল তা ‘বাজেয়াপ্ত করে’ দখলে নিচ্ছে সেদেশের সরকার। সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য এসব জমিজমা ও সম্পত্তি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী উইন মায়াত আয়্যা। গতকাল রাখাইনের রাজধানী সিট্যুতে এক সভায় ওই মন্ত্রী এ কথা বলেন। জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে উত্তর রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন গ্রান্ডি। যাতে পরিস্থিতির সমাধান নিয়ে আলোচনা চালানো যায়। তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টা এমন যে রোহিঙ্গাদের ফিরতে সময় লাগবে।
মিয়ানমারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন উল্লেখ করে মিয়ানমারের মন্ত্রী উইন মায়াত আয়্যা আরো বলেছেন, এই সংস্কার ও উন্নয়নকাজ খুবই কার্যকর হবে। ‘দুর্যোগে’ পুড়ে যাওয়া এলাকা পুনর্গঠন তদারকি করবে সরকারের ভূমি বিভাগ। ওই সভায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে একটি কমিটি করা হয়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হয়েছে।
মিয়ানমারের দৈনিক দি গ্লোবাল লাইট অফ মিয়ানমার এক প্রতিবেদনে বলেছে, মন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী পুড়ে যাওয়া গ্রামগুলোর মালিক সরকার, সরকারের সংস্থাগুলোই এগুলো দেখাশোনা করবে। মিয়ানমার সরকার দাবি করছে, যেসব ভূমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে সেগুলো রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই পুড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট ও নেতাদের পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, রাখাইনের মংডু জেলার সদর, বুথিডং ও রাথিডং থানায় অন্তত চারশ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের অর্ধেক বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু তারা বলছে- রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই এগুলো পুড়িয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও রোহিঙ্গা এক্টিভিস্টরা ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করা হলেও মিয়ানমার সরকার বলছে এই সংখ্যা মাত্র পাঁচশ। এরমধ্যে চারশত জনই আরসা ‘বিদ্রোহী’। একইসাথে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই সংকটকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয় এবং জাতিগত নির্মূল নয় বলেও দাবি করছে। সেদেশের সংখ্যাঘরিষ্ঠ বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের তাড়াতে সরকারের পাশে থেকে প্রচারণা চালাচ্ছে।
লন্ডনে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতা মং তুন খিন ইত্তেফাককে বলছিলেন, ‘সরকার যে এই ধরণের উদ্যোগ নিবে এটা আগে থেকেই অনুমান করা যায়। ১৯৯২ সাল থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের তাড়াতে এই ধরণের নৃশংসতা চালিয়ে আসছে। মিয়ানমার সৈন্যদের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে গেলে সরকার তাদের সম্পদগুলো দখলে নেয়। এভাবে লাখো রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। এবারো তাই হচ্ছে।’
সাত লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারবে জাতিসংঘ
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাত লাখ পর্যন্ত রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘ। এদের মধ্যে চার লাখ ৮০ হাজারই গত এক মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, আগামী সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশমুখী এই জনস্রোত অব্যাহত থাকলে ব্যাপক খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। আগে থেকে বাংলাদেশে বসবাসরত তিন লাখ রোহিঙ্গার জন্যও কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সেক্ষেত্রে ১০ লাখ মানুষ ডব্লিউএফপি’র সেবা পাবে। মানবিক সহায়তা থেকে কেউই বাদ যাবে না। তবে এজন্য আমাদের ৮ কোটি ডলারের তহবিল দরকার।
চীনের ত্রাণ চট্টগ্রামে
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চীন সরকার ৫৭ টন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে। গতকাল সকালে ত্রাণবাহী উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমানের হাতে এসব ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন বাংলাদেশে চীন দূতাবাসের কর্মকর্তা জং জিয়াজু।
রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নেবে তুরস্ক
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী নোমান কুত্তোলমাস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নেবে তুরস্ক। একই সাথে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে তুরস্ক সব সময় থাকবে। গতকাল দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
লক্ষাধিক মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করেছে ব্র্যাক
উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্র্যাক ৩৯২টি নলকূপ স্থাপন করেছে। এই সেবার আওতায় পড়বেন ১ লক্ষ ৩৫২ জন মানুষ। ৩০ হাজার ৬০০ মানুষের ব্যবহারের জন্য ৭৬৫টি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ১৫ হাজার ল্যাট্রিন ও এক হাজার একশ বিশটি টিউবওয়েল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে ব্র্যাকের।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আরো একজনের মৃত্যু
লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে নুরুল ইসলাম নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সীমান্তের ৪৩ নম্বর পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুল ইসলাম (২৫) বলিবাজারের পুরান মাইজ্যা এলাকার মোহাচ্ছের আলীর ছেলে।
টেকনাফ (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, গত দুইদিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২ দালাল ও ৮ মাদক সেবীকে সাজা দিয়েছে।