তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
বর্তমান প্রযুক্তি বাজারে কিভিন্ন দামের আর বিভিন্ন কনফিগারেশনের ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটা একেবারেই খরগোশ গতির আর সঙ্গে চিকন লুকস, আর কোনোটা চলার মতো আর মোটা ডিজাইন। কিন্তু কোনটা আপনার জন্য? সব সময় কি দামি ল্যাপটপ মানেই ভালো জিনিস? নাকি শুধু ঘরের খাইয়ে হাতি পোষা? আপনি ২ লাখ টাকারও ল্যাপটপ কিনুন আর বিছানায় ফেলে রাখুন, কোনোই সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যদি মধ্যবিত্ত ঘরের হয়ে থাকেন বা বেস্ট ভেল্যু ফর দ্য মানি ডিভাইস খুঁজে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রত্যেকটি টাকার সঠিক ব্যবহার হওয়া চাই। ল্যাপটপ কেনার আগে আপনার কোন বিষয়গুলো খেয়াল করা জরুরি বা জানা জরুরি তা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এ লেখায়—
লো বাজেট ল্যাপটপ
প্রথমেই লো বাজেট ল্যাপটপগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। এর প্রাইস রেঞ্জ শুরু হয় মোটামুটি ১৫-২০ হাজার টাকা থেকে। অনেকেই এই বাজেটের ল্যাপটপগুলোকে চোখেই দেখতে পারেন না, কোনো কথা ছাড়ায় গারবেজ বলে ঘোষণা করে দেন। হ্যাঁ, এই বাজেটের ল্যাপটপ থেকে খুব বেশি কিছু আউটপুট আশা করাও যায় না, যদি আপনার বাজেট সত্যিই অনেক টাইট হয় আবার আপনার ল্যাপটপই লাগবে সেক্ষেত্রে আমি রেকোমেন্ড করব সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিকন্ডিশন অপশনের দিকে এগোনর জন্য। কিন্তু তার আগে দেখে নেওয়া যাক, এই লো বাজেটে নতুন ল্যাপটপ কিনলে কি রকম স্পেস পাওয়া যেতে পারে আর সেটা দিয়ে আসলে হবেও বা কি?
প্রথমত, ১৫-২৫ হাজার টাকার মধ্যে ল্যাপটপ কিনতে গেলে খুবই বেসিক মডেলের প্রসেসর পাবেন। এই দামের মধ্যে এএমডির এন্ট্রি লেভেলের সিপিইউই দেখা যায়। তবে ইন্টেলের অ্যাটম সিপিইউ ও দেখতে পাওয়া দুর্লভ নয়। আমি এখানে প্রসেসর নিয়ে খুব টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো আলোচনায় টানব না, সবকিছুকে যতটা সম্ভব সাধারণ মানুষের বোধগম্য রাখারই চেষ্টা করব। আপনি এই বাজেটে ইন্টেল বা এএমডি যেকোনো একটা চয়েজ করলেই হলো, সিপিইউ যেহেতু খুবই বেসিক আর এই ল্যাপটপ দিয়ে যেহেতু হেভি টাস্ক পারফরমও করতে পারবেন না, তাই সিপিইউ কোনো মারাত্মক ইস্যু নয়। তবে হ্যাঁ, ইন্টেলে একটু বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে পারবেন, তবে এএমডি কিন্তু মোটেও আগের মতো আন-অপটিমাইজড নয়।
লো বাজেটের ল্যাপটপগুলো মূলত ওয়েব ব্রাউজ করার জন্য, ইবুক পড়ার জন্য, হালকা অফিস ওয়ার্ক করার জন্য, ইমেইল চেক, সোশ্যাল আকাউন্টগুলো ম্যানেজ করার জন্য, আর মিডিয়া কনজিউম করার জন্য। ওয়েব ব্রাউজের কথা এলেই বেশি র?্যাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৫ হাজার টাকার ল্যাপটপগুলোতে ২ জিবি র?্যাম দেখতে পাওয়া যায় সচরাচর, কিন্তু একটু দাম বাড়িয়ে ২০-২৫ হাজার টাকায় এলে ৪ জিবি র?্যাম দেখতে পাওয়া যায়। অনেক ল্যাপটপে আলাদা র?্যাম স্লট থাকে, ফলে প্রয়োজনে আরো বেশি র?্যাম লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আমি রেকোমেন্ড করব অ্যাটলিস্ট ৪ জিবি র?্যাম মডেল চয়েজ করা, এতে ওয়েব ব্রাউজ করে কমফোর্ট ফিল করতে পারবেন!
স্ক্রিন সাইজ এই দামের মধ্যে ১৪ ইঞ্চি ১৫ ইঞ্চি সবই পাবেন, ডিসপ্লে ফুল এইচডি পাবেন না কিন্তু অনায়াসে এইচডি ডিসপ্লে রেজুলেশন পেয়ে যাবেন। তো মিডিয়া কনজিউম করতে কোনোই সমস্যা থাকবে না। হার্ড ড্রাইভ এখন সবগুলোতেই প্রায় ১ টেরাবাইট থাকে, কয়েক বছর আগে ৫০ হাজারের ল্যাপটপ গুলোতেও ৫০০ জিবি ডিস্ক স্পেস থাকত কিন্তু এখন ১ টেরাবাইট একটা স্ট্যান্ডার্ডে দাঁড়িয়েছে। এখন এ বাজেটের ল্যাপটপ সাইজের দিক থেকে একটু বেশি মোটা হয়, আবার অনেক কোম্পানি বেশ স্লিম মডেলও অফার করে। ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালোই হয়, পাঁচ-ছয় ঘণ্টা অনাসায়েই চলে যায়।
মিড বাজেট ল্যাপটপ
মিডিয়াম বাজেট শুধু হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকার রেঞ্জ থেকে, এই দামের মধ্যের যতগুলো মডেল পাওয়া যায় প্রায় সবগুলোই সেইম স্পেক্স প্রদান করে। আপনি কোর আই৩ এর ৭ম/৮ম জেনারেশন সিপিইউ দেখতে পাবেন সচরাচর, ৪ জিবি র্যাম পাবেন, ১ টেরাবাইট হার্ড ডিস্ক পাবেন, ১৪/১৫ ইঞ্চি স্ক্রীন সঙ্গে এইচডি রেজুলেশন পাবেন তবে কিছু দাম বাড়ালে হয়তো ফুল এইচডি রেজুলেশনই পেয়ে যাবেন।
এই বাজেটের ল্যাপটপগুলো দাম অনুসারে তিন প্রকারের দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমত ৩০-৩৫ হাজারের মধ্যে এতে দুই এক জেনারেশন পেছনের সিপিইউ দেখতে পাওয়া যায়। ৪০-৪৫ হাজারের মধ্যে লেটেস্ট আই৩ প্রসেসর পেয়ে যাবেন, ৫০-৫৫ বা আরো বেশি বাজেট থাকলে আই৫ এ চলে যেতে পারবেন এবং বিল্ডইন ৮ জিবি ব্যাম দেখতে পাওয়া যায়।
মিড বাজেট পিসিগুলো থেকে প্রায় সবকিছুই করতে পারা যায়, হালকা ফটো এডিট, ভিডিও এডিট, হালকা মাল্টি টাস্কিং, সবকিছুই এক লিমিটের মধ্যে করতে পারবেন। আপনি যদি কম দামের মধ্যে একটু কম্প্রোমাইজ করে সবকিছুই করতে চান সেক্ষেত্রে এই মিড রেঞ্জ পিসিগুলো ভালো সলিউশন হতে পারে।
হাই অ্যান্ড ল্যাপটপ
হাই অ্যান্ড ল্যাপটপ কিনতে চাইলে অবশ্যই লেটেস্ট জেনারেশন সিপিইউ কেনা উচিত্, আপনি যদি ৬০-৭০ হাজার বা আরো বেশি খরচ করার ক্ষমতা রাখেন সেক্ষেত্রে লেটেস্ট কোর আই৭ পেয়ে যাবেন। আরো দামের ভিত্তিতে ডেডিকেটেড জিপিইউ থাকতে পারে। ফাস্ট ওএস ও সফটওয়্যার রান করার জন্য এসএসডি সাপোর্ট থাকে এবং বেশি ডাটা স্টোর করার জন্য ম্যাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ সাপোর্ট থাকে। অনেক মিড বাজেট ল্যাপটপগুলোতে এখন এসএসডি না থাকলেও স্লট দেওয়া থাকে, মানে আপনি সহজেই পরে লাগিয়ে নিতে পারবেন, আর এটা একটা ভালো জিনিস। এসএসডি পিসির পারফরমেনস অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়, আর আপনি সেটা ইনস্ট্যান্ট লক্ষ্য করতে পারবেন।
হাই অ্যান্ড ল্যাপটপগুলোতে ট্যাচ স্ক্রিন ফিচার ও থাকে, তবে ট্যাচ ফিচার চাইলে সার্ফেসবুক ব্যবহার করাই ভালো, এমনি ল্যাপটপে ট্যাচ খুব একটা কাজের জিনিস না। আপনি হাই বাজেট ল্যাপটপ কেনার কথা চিন্তা করলে তো কথায় নেই কিন্তু মিড বাজেটেও যদি ৫০-এর ওপরে চলে যান সেক্ষেত্রে অবশ্যই এসএসডি মডেল নির্বাচন করবেন।