ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়লেন মাহাথির মোহাম্মদ

 অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

মালয়েশিয়ার নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয়লাভের পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পরে শপথ নিয়েছেন দেশটির ৯২ বছর বয়সী সাবেক নেতা মাহাথির মোহাম্মদ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে দেশটির রাজা সুলতান মুহাম্মদ তার প্রাসাদ ইসতানা নেগারাতে মাহাথির মোহাম্মদকে শপথ করান বলে দেশটির সংবাদ মাধ্যম স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শপথ অনুষ্ঠানে সদ্য বিজয়ী পাকাতান হারাপানের জোটভুক্ত অন্য তিন দলের প্রধানরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৬ দশক পর ক্ষমতাসীন বারিশান ন্যাশনালের (বিএন) একটানা শাসনের অবসান ঘটল। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মাহাথির মালয়েশিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি হবেন বিশ্বে ক্ষমতাসীন সবচেয়ে প্রবীণ নেতা।

ঘোষিত সরকারি ফলে দেখা গেছে, মাহাথিরের পাকাতান হারাপান জোট পার্লামেন্টের ২২২ আসনের মধ্যে ১১৩টিতে জয় পেয়ে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। আর নাজিবের বিএন জোট ৭৯টি আসন ধরে রাখতে পেরেছে।

এই শাসক জোটের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করলেও বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু ধারণা করেছিল প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আরেক মেয়াদের জন্য আবার জয়ী হবেন। কিন্তু সরকারি ফল পর্যবেক্ষকদের রীতিমতো বিস্মিত করেছে। নির্বাচনের ফল ঘোষিত হওয়ার পর জনসম্মুখে কোনো কথা বলেননি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব। তবে তার মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানিয়েছেন, তারা জনগণের ইচ্ছাকে মেনে নেবেন।

গত বুধবার ভোট গ্রহণের পর গভীর রাতে মাহাথিরের জোটকে জয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর পরপরই সরকার গঠনের জন্য মাহাথির মোহাম্মদকে আমন্ত্রণ জানান দেশটির রাজা। বৃহস্পতিবার দিনের পরবর্তী কোনো এক সময় মালয়েশিয়ার রাজার সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। রাজধানী কুয়ালালামপুরের রাজপ্রাসাদে এক অনুষ্ঠানে রাজা মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করবেন।

১৯৫৭ সালে ব্রিটিশের কাছ থেকে মালয়েশিয়া স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বিএন জোট অপ্রতিরোধ্যভাবে দেশ শাসন করে আসছিল। মাহাথির বারিসান ন্যাশনালের (বিএন) প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২২ বছর তিনি সুনামের সঙ্গে ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ২০০৩ সালে তিনি ক্ষমতা থেকে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ওপর আস্থা রেখে সরে দাঁড়ান। নাজিবের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি আবারো রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। মালয়েশিয়াকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়া মাহাথির এ নির্বাচনে নিজের সাবেক দলের বিরুদ্ধেই লড়েছেন। এবং জয় ছিনিয়ে এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নাজিবের বিরুদ্ধে মাহাথিরের এ অপ্রত্যাশিত জয়ে উৎসবে মেতেছে মালয়েশীয়বাসী। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও কয়েক বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির অভিযোগে নাজিবের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। পাকাতান হারাপান জোট শহুরে ভোট, সংখ্যালঘু চীনা ও ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভোটের সমর্থন নিয়ে এবং মাহাথিরের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে বিএন জোটকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের কৌশল সফল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, মাহাথিরকে এখন তার নতুন জোটের চার দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার জন্য কাজ করতে হবে এবং কারগারে থাকা বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে পথ বের করতে হবে। মাহাথির বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি দুইবছর ক্ষমতায় থাকতে চান। এরপর তিনি কারাবন্দী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। যিনি একসময় মাহাথিরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং যাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলেন মাহাথির। একজন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অভিযোগে আনোয়ার ইব্রাহিম বর্তমানে কারাবাস করছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়লেন মাহাথির মোহাম্মদ

আপডেট সময় ০৪:৫৬:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮
 অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

মালয়েশিয়ার নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয়লাভের পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পরে শপথ নিয়েছেন দেশটির ৯২ বছর বয়সী সাবেক নেতা মাহাথির মোহাম্মদ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে দেশটির রাজা সুলতান মুহাম্মদ তার প্রাসাদ ইসতানা নেগারাতে মাহাথির মোহাম্মদকে শপথ করান বলে দেশটির সংবাদ মাধ্যম স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শপথ অনুষ্ঠানে সদ্য বিজয়ী পাকাতান হারাপানের জোটভুক্ত অন্য তিন দলের প্রধানরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৬ দশক পর ক্ষমতাসীন বারিশান ন্যাশনালের (বিএন) একটানা শাসনের অবসান ঘটল। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মাহাথির মালয়েশিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি হবেন বিশ্বে ক্ষমতাসীন সবচেয়ে প্রবীণ নেতা।

ঘোষিত সরকারি ফলে দেখা গেছে, মাহাথিরের পাকাতান হারাপান জোট পার্লামেন্টের ২২২ আসনের মধ্যে ১১৩টিতে জয় পেয়ে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। আর নাজিবের বিএন জোট ৭৯টি আসন ধরে রাখতে পেরেছে।

এই শাসক জোটের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করলেও বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু ধারণা করেছিল প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আরেক মেয়াদের জন্য আবার জয়ী হবেন। কিন্তু সরকারি ফল পর্যবেক্ষকদের রীতিমতো বিস্মিত করেছে। নির্বাচনের ফল ঘোষিত হওয়ার পর জনসম্মুখে কোনো কথা বলেননি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব। তবে তার মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানিয়েছেন, তারা জনগণের ইচ্ছাকে মেনে নেবেন।

গত বুধবার ভোট গ্রহণের পর গভীর রাতে মাহাথিরের জোটকে জয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর পরপরই সরকার গঠনের জন্য মাহাথির মোহাম্মদকে আমন্ত্রণ জানান দেশটির রাজা। বৃহস্পতিবার দিনের পরবর্তী কোনো এক সময় মালয়েশিয়ার রাজার সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। রাজধানী কুয়ালালামপুরের রাজপ্রাসাদে এক অনুষ্ঠানে রাজা মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করবেন।

১৯৫৭ সালে ব্রিটিশের কাছ থেকে মালয়েশিয়া স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বিএন জোট অপ্রতিরোধ্যভাবে দেশ শাসন করে আসছিল। মাহাথির বারিসান ন্যাশনালের (বিএন) প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২২ বছর তিনি সুনামের সঙ্গে ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ২০০৩ সালে তিনি ক্ষমতা থেকে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ওপর আস্থা রেখে সরে দাঁড়ান। নাজিবের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি আবারো রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। মালয়েশিয়াকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়া মাহাথির এ নির্বাচনে নিজের সাবেক দলের বিরুদ্ধেই লড়েছেন। এবং জয় ছিনিয়ে এনেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নাজিবের বিরুদ্ধে মাহাথিরের এ অপ্রত্যাশিত জয়ে উৎসবে মেতেছে মালয়েশীয়বাসী। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও কয়েক বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির অভিযোগে নাজিবের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। পাকাতান হারাপান জোট শহুরে ভোট, সংখ্যালঘু চীনা ও ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভোটের সমর্থন নিয়ে এবং মাহাথিরের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে বিএন জোটকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের কৌশল সফল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, মাহাথিরকে এখন তার নতুন জোটের চার দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার জন্য কাজ করতে হবে এবং কারগারে থাকা বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে পথ বের করতে হবে। মাহাথির বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি দুইবছর ক্ষমতায় থাকতে চান। এরপর তিনি কারাবন্দী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। যিনি একসময় মাহাথিরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং যাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলেন মাহাথির। একজন পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অভিযোগে আনোয়ার ইব্রাহিম বর্তমানে কারাবাস করছেন।